গত তিন দশক ধরে ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্রুত বিকাশ, ক্রমহ্রাসমান উর্বরতা এবং নারীশিক্ষার প্রসার সত্ত্বেও দেশের ফিমেল ওয়ার্কফোর্স পার্টিসিপেশন (এফডব্লিউএফপি) বা কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার (যত সংখ্যক মহিলা কাজে নিযুক্ত আছেন তার আনুপাতিক হার) নিচের দিকেই রয়ে গেছে। কার্যত, ১৯৮৭ সাল থেকেই কার্যক্ষেত্রে নিযুক্ত মহিলাদের সংখ্যার দ্রুত ও অবিচলিতভাবে পতন হতে দেখা যাচ্ছে। ১৯৮৭-২০০৭ সালের মধ্যে ভারতের গ্রাম (প্যানেল এ) ও শহরাঞ্চলের (প্যানেল বি) পঁচিশ থেকে ষাট বছর বয়সী নারী ও পুরুষদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের হার চিত্র ১-এ দেখান হয়েছে। এই রকম বয়ঃসীমা ধার্য করার কারণ, পঁচিশ বছর বয়সের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই শিক্ষায়তনের শেষ ধাপ পেরিয়ে যান এবং তার ফলে, কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের (ডব্লিউএফপি) হারের উপর উচ্চশিক্ষায় যোগদানের কোন সরাসরি প্রভাব পড়ে না লক্ষণীয়ভাবে, দুটি চিত্রের স্তরবিন্যাস ও নকশার মধ্যে অনেকটাই পার্থক্য দেখা যায়। গ্রামীণ ও নাগরিক, ভারতের দুই অংশেই পুরুষদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের হার মহিলাদের থেকে অনেকটাই বেশি। নির্ধারিত বয়ঃসীমার অন্তর্গত পুরুষকর্মীদের হার সামান্য কমেছে। গ্রামাঞ্চলে এই হার ছিয়ানব্বই শতাংশ থেকে চুরানব্বই শতাংশে এবং শহরাঞ্চলে চুরানব্বই শতাংশ থেকে একানব্বই শতাংশে নেমে গেছে। মহিলাদের ক্ষেত্রেও এই হার খানিকটা কমেছে, অর্থাৎ ছাব্বিশ শতাংশ থেকে চব্বিশ শতাংশে পড়ে গেছে। তবে, মহিলাকর্মীদের সংখ্যার সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য পতন হয়েছে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার ১৯৮৭ সালে ছিল চুয়ান্ন শতাংশ, যা ২০১৭ সালে কমে হয়েছে একত্রিশ শতাংশ।
সাপ্লাই-সাইড ফ্যাক্টরের সাহায্যে এই পতনের ব্যাখ্যা
বিভিন্ন গবেষণাতে দেখা যায় যে, পঁচিশ থেকে ষাট বছর বয়সী গ্রামবাসী মহিলা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণে হ্রাস ঘটেছে প্রধানত যাঁরা বর্তমানে বিবাহিত (সমস্ত মহিলার প্রায় নব্বই শতাংশ) তাঁদের মধ্যে। পরিবর্তনশীল জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট (পরিবারের বিবাহিত নারী ও পুরুষদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বৃদ্ধি) এবং পারিবারিক আয়ের বৃদ্ধির মত সাপ্লাই-সাইড ফ্যাক্টরগুলিই ১৯৮৭-৯৯ সালের মধ্যে মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ হ্রাসের জন্য দায়ী। তবে, এ থেকে কেবলমাত্র ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে যে হ্রাস ঘটেছিল তার ১৪ শতাংশ থেকে খুব জোর অর্ধেক অংশের হিসেব পাওয়া যায়। মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের হারে এই পতনের পিছনে আছে নারীশিক্ষা এবং মহিলাদের কর্মসংস্থানের মধ্যে একটি ইউ আকৃতির সম্পর্ক এবং পরিবারের পুরুষ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আয় এবং মহিলাদের কর্মসংস্থানের মধ্যে অবস্থিত নেতিবাচক সম্পর্ক।
কাজের ধরণ অনুযায়ী কর্মসংস্থানের এই পরিবর্তনকে আরও বিশদে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এই পতন কেবলমাত্র কৃষিশিল্পের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। চিত্র ২-এর প্যানেল এ এবং বি-তে যথাক্রমে মহিলা ও পুরুষদের বিভিন্ন সেক্টরে ও বিভিন্ন সময়ে কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের বিষয়টি দেখান হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ ১৯৮৭ সালে ছিল ছেচল্লিশ শতাংশ, যা ২০১১ সালে তেত্রিশ শতাংশে এবং ২০১৭ সালে আরও নেমে তেইশ শতাংশে চলে যায়। কারখানাকেন্দ্রিক উৎপাদনের ক্ষেত্রেও মহিলাদের অংশগ্রহণ ৩.৫ শতাংশ থেকে সামান্য কমে ২.৫ শতাংশে চলে গেছে। ব্যতিক্রম ঘটেছে নির্মাণ ও পরিষেবা শিল্পে, যেখানে এই হার প্রায় ১ থেকে ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কৃষিক্ষেত্রে পুরুষদের অংশগ্রহণও কমেছে। ১৯৮৭ সালে যা ছিল সাতাত্তর শতাংশ, ২০১১ সালে তা কমে চৌষট্টি শতাংশ হয়ে গেছে। এর থেকে বোঝা যায় যে, মহিলাদের ক্ষেত্রে এই পতনের হার পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি।
ডিম্যান্ড-সাইড ফ্যাক্টরের সাহায্যে এই পতনের ব্যাখ্যা
১৯৯৯ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণে যে পতন ঘটেছিল তা সাপ্লাই-সাইড ফ্যাক্টরের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায় নি, এবং এই পতন ঘটেছিল কৃষিশিল্পের ক্ষেত্রে, এই তথ্যদুটি থেকে মনে হয় যে, এক্ষেত্রে কৃষিশিল্পের ডিম্যান্ড-সাইড ফ্যাক্টরের হয়ত কিছু অবদান আছে। ভারতের কৃষিকাজের ক্ষেত্রে একটি লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনের ধারণা কাজ করে। যে সমস্ত কাজে (ভূমি কর্ষণ) শারীরিক বলের প্রয়োজন সেগুলিতে মহিলা শ্রমিকদের নিযুক্ত করার সম্ভাবনা কম এবং যে সব কাজ নির্ভুলভাবে হওয়া দরকার (বীজবপন, শস্যের চারা তুলে নতুন জায়গায় রোপন, আগাছা তোলা) সেগুলির দায়িত্ব মহিলাদের হাতে থাকার সম্ভাবনা বেশি। এর ফলে, কৃষিক্ষেত্রে নারী ও পুরুষদের পরস্পরের বিকল্প হয়ে ওঠার সম্ভাবনায় সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। যখন পুরুষ শ্রমিক ও নারী শ্রমিকরা পরস্পরের বিকল্প হিসেবে অসম্পূর্ণ থেকে যান, তখন প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের লিঙ্গভিত্তিক প্রভাব অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, ১৯৯৯-২০১১ সালের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ তিন গুণ বেড়ে গেছে (প্রাথমিকভাবে ভূমি কর্ষণের কাজের জন্য)। যেমন, কর্ষণের কাজের ক্ষেত্রে পুরুষদের শ্রমের সরাসরি বিকল্প তৈরি হয়, ভূমি কর্ষণের যান্ত্রিকীকরণের ফলে আগাছা তোলার কাজে মহিলাদের শ্রমের বিকল্প তৈরি হয় পরোক্ষভাবে। যন্ত্রের সাহায্যে ভূমি কর্ষণের কারণে আগাছা কম জন্মায় ও ফলত, আগাছা তোলার কাজে কম সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। একটি সাম্প্রতিক প্রবন্ধে আমার সহলেখক এবং আমি দেখিয়েছি যে, ১৯৯৯-২০১১ সালের মধ্যে যান্ত্রিকীকরণের কারণে ভারতের কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের শ্রম হ্রাসের পরিমাণ পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি। যান্ত্রিকীকরণের উপযুক্ত অঞ্চলের শ্রমক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী নারী ও পুরুষদের সঙ্গে যান্ত্রিকীকরণের অনুপযুক্ত অঞ্চলের পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের মধ্যে তুলনা টেনে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছি। যান্ত্রিকীকরণ ঘটার আর কোন লুকনো কারণ আছে কিনা, তা না জেনেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলে তা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়তে পারে বলে, আমরা বিভিন্ন বাহ্যিক উপাদানের কথাও মাথায় রেখেছি। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, দোআঁশলা মাটির নমনীয়তা এঁটেল মাটির চেয়ে বেশি এবং তা গভীর কর্ষণের অনেক বেশি উপযুক্ত। তার ফলে দোঁআশলা মাটি অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রাথমিক কর্ষণের জন্য ট্র্যাক্টর-চালিত যন্ত্রপাতির ব্যবহারের সম্ভাবনা অনেক বেশি। তুলনা করলে দেখা যাবে, যান্ত্রিক উপায়ে কর্ষণের দশ শতাংশ বৃদ্ধি হওয়ার ফলে কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের শ্রমের পাঁচ শতাংশ হ্রাস ঘটেছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে অকৃষিক্ষেত্রে তাঁরা বেশি শ্রমদান করছেন। ১৯৯৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার বত্রিশ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায়, অন্যান্য সূচকগুলি একই থাকলেও, যন্ত্রের ব্যবহারে স্ফীতি কৃষিশিল্পে মহিলাদের শ্রমের হার সামগ্রিকভাবে কমে যাওয়ার জন্য দায়ী। আমরা দেখি যে, এই হ্রাসের পিছনে কারণ হিসেবে আছে আগাছা তোলার মত যে কাজটি অধিকাংশ সময় মহিলা শ্রমিকরাই করে থাকেন, সেগুলির জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমের চাহিদা কমে যাওয়া।
পরিকাঠামোগত পরিবর্তনে মহিলাদের অনুপস্থিতি
কৃষিকাজের ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ অত্যাধিক কমে যাওয়ার পাশাপাশি, কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সমষ্টিগত এবং আঞ্চলিক প্রবণতা ভারতের পক্ষে এক উদ্বেগজনক ভবিষ্যতের দিকে ইঙ্গিত করে এবং তা হল পরিকাঠামোগত পরিবর্তনে মহিলাদের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি। যে পুরুষ শ্রমিকরা কৃষিশিল্প পরিত্যাগ করেছেন, তাঁরা অন্য শিল্পে (বিশেষ করে নির্মাণ ও পরিষেবায়) কাজ পেয়েছেন, কিন্তু মহিলারা সেই সুযোগ পান নি। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা বা ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে থেকে পাওয়া নজিরগুলি থেকে দেখা যায় যে, কৃষিশিল্পের বাইরে অন্যান্য অর্থকরী কর্মসংস্থানের পথে মহিলারা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাধাগুলির মুখোমুখি হন। সেগুলির মধ্যে একটি হল বাড়ির কাছাকাছি মোটামুটি ভাল বেতনসহ কাজের সুযোগের অভাব। মহিলাদের গতিবিধি অনেকটাই সীমাবদ্ধ বলে, নির্মাণ ও কম দক্ষতা লাগে এমন পরিষেবামূলক কৃষিশিল্প-বহির্ভূত কাজের সুযোগ মহিলাদের কাছে সীমিত, কারণ এই ধরনের কাজের কেন্দ্র সাধারণত গ্রাম থেকে অনেকটাই দূরে হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর দ্য সেমি-এ্যারিড ট্রপিকস (আইসিআরআইএসএটি)-এর কর্মসংস্থান সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, পুরুষ গ্রামবাসীদের মধ্যে বত্রিশ শতাংশ গ্রামের বাইরে কাজ করেন, কিন্তু মহিলা শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশ এই সুযোগ পান। এর পাশাপাশি, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক স্তরের থেকে কম হওয়ার কারণে, উচ্চ দক্ষতা প্রয়োজন এমন পরিষেবাকেন্দ্রিক কাজের সুযোগও মহিলাদের কাছে সীমাবদ্ধ। মহিলাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ফলে কৃষির বাইরে আর কোন কাজের সুযোগ তাঁদের কাছে সীমিত। এই কারণে, খরার মত যে সমস্ত ঘটনা উপার্জনের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে মহিলা শ্রমিকদের পক্ষে সেই ধাক্কা সামলানর ক্ষমতাও সীমিত হয়ে পড়ে। আমাদের গবেষণা দেখায় যে, খরার সময় মহিলা শ্রমিকদের কাজের দিনের সংখ্যা পুরুষদের থেকে উনিশ শতাংশ কম। এর কারণ, অকৃষিশিল্পকে কেন্দ্র করে যত বিচিত্র কাজের সুযোগ আছে, মহিলা শ্রমিকরা সেগুলির সুবিধা নিতে পারেন না।
নাগরিক পরিপ্রেক্ষিত
নাগরিক ভারতে কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের হার সামান্য কমলেও, শ্রমক্ষেত্রে শহরের মহিলা বাসিন্দাদের সামগ্রিক অংশগ্রহণের হার স্পষ্টতই কম এবং তা চব্বিশ শতাংশেই রয়ে গেছে। এর উল্টোদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই অংশগ্রহণের হার নব্বই শতাংশ। গবেষণা থেকে জানা যায়, সরবরাহ ও চাহিদা – এই শর্তদুটি যুগ্মভাবে এই নিম্নহারের কারণকে ব্যাখ্যা করে। শ্রমের বাজারে মহিলাদের অংশগ্রহণের নিম্নহারের কারণকে প্রতিষ্ঠা করে যে উপাদানগুলি তার মধ্যে কয়েকটি হল, গৃহকর্মের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনের সামাজিক প্রথা, বাড়ির মহিলারা বাইরে কাজ করলে তাকে কেন্দ্র করে পরিবারের মর্যাদা নিয়ে উদ্বেগ, গৃহের পরিসরে মহিলাদের উৎপাদনশীলতায় বৃদ্ধির বিপরীতে শিক্ষাগত যোগ্যতার বাড়লে তাঁদের কাজের বাজারে তাঁদের উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধি এবং বাড়ির কাছাকাছি কাজের সুযোগের অভাব। এছাড়াও, বিয়ের বাজারে কর্মরত মহিলাদের এক ধরনের জরিমানা দিতে হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, ভারতে সম্ভাব্য বিবাহযোগ্য পুরুষদের থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাওয়ার সম্ভাবনা কর্মরত মহিলাদের ক্ষেত্রে চৌদ্দ থেকে কুড়ি শতাংশ কম। এই ধরনের জরিমানার সম্ভাবনা উত্তর ভারতের উচ্চ বর্ণের মধ্যেই বেশি যেখানে লিঙ্গভিত্তিক আচরণের আদর্শ অনেক বেশি পিতৃতান্ত্রিক।
একশ পঞ্চাশ কোটি মানুষের বাস যে দেশে, সে দেশ কিভাবে তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে পারে, যদি তার কর্মক্ষম জনসংখ্যার চল্লিশ শতাংশ উৎপাদনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগই না পায়? যদিও এই নিম্নহারের কারণ হিসেবে অনেক সময়ই গৃহকর্মের লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন ও পরিবারের মর্যাদা কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগের দিকে আঙুল তোলা হয়, চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষতার অভাবও কৃষিকাজের বাইরে অন্যান্য শিল্পে কাজ না নিতে পারার কারণ। মহিলাদের চলাফেরা আরও সীমিত হয়ে পড়ে সংসারের কাজের দায়িত্ব যেভাবে ভাগ করা হয় তার জন্য (যার ফলে মহিলারা গৃহস্থালীর কাজে প্রতিদিন অন্তত সাত ঘন্টা ব্যয় করেন, যেখানে পুরুষরা এই জাতীয় কাজের জন্য মাত্র ত্রিশ মিনিট দেন)। সামাজিক প্রথা বদল একটি ধীর গতির প্রক্রিয়া, কিন্তু নিরাপদ ও সহজলভ্য পরিবহনের সুবিধা পেলে হয়ত কিছু মহিলা শ্রমের বাজারে যোগ দিতে উৎসাহিত হবেন। ভারতে মহিলাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টির উন্নতি করার আরেকটি উপায় হল, তাঁদের এমন কাজে দক্ষ করে তোলা যার চাহিদা শ্রমের বাজারে আছে। যা দেখা যাচ্ছে, ভারতে মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের নিম্নহার এবং ক্রমশ তা যে আরও কমছে, তা কেবল মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ও শর্ত আরোপের ক্ষমতাকেই সঙ্কুচিত করে না, রাষ্ট্রের আয় ও সামাজিক বিকাশের জন্যও তা ক্ষতিকর।