ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিংসাঃ তৃণমূল স্তরে একটি অন্বেষণ

05/12/2022
IiT English Page

এই মুহূর্তে, ভারতের মুসলিম গোষ্ঠী ঘৃণা, হিংসা, নিগ্রহ এবং অবমানবে পরিণত করার প্রক্রিয়ার একটি আপাতদৃষ্টিতে অন্তহীন স্রোতকে সহ্য করে চলেছেন। ভারতীয় মুসলিমদের এই অবিরাম লড়াই নিয়ে গবেষণার সময় দেখা গেছে যে, এ ক্ষেত্রে দুই রকমের বিপদের সম্ভাবনা দেখা যায় – হয় অবস্থার শিকার হিসেবে মুসলিমদের তুলে ধরার, অথবা মহিমান্বিত করার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। প্রথম ক্ষেত্রে মুসলিমদের হাত থেকে নিজেদের জীবন নিজে পরিচালনার ক্ষমতা চলে যায়, এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে যে লড়াইতে জয়লাভের প্রায় কোনও সম্ভাবনাই নেই, সেই লড়াইয়ের উপর গৌরবের একটি তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, বাস্তবে যা হচ্ছে আদতে তার অবস্থান এই দুইয়ের মাঝামাঝি কোন একটি বিন্দুতে। নতুন দিল্লি ও কর্ণাটকের মত দুটি আলাদা জায়গায়, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে ঘটা দুটি নির্দিষ্ট মুসলিমবিরোধী ঘটনা থেকে ভারতে প্রণালীবদ্ধভাবে চলতে থাকা মুসলিম গোষ্ঠীর উপর ঘটা নিপীড়নের প্রকৃতিকে বোঝা যায়।    

দিল্লিঃ হিংসাই যখন রীতি
ভারতের মুসলিমরা এত বছর ধরে যত রমজান পালন করেছেন, তার মধ্যে ২০২২ সালের রমজান সম্ভবত সব চেয়ে বেশি অত্যাচারপূর্ণ ও নিষ্ঠুর ছিল। পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, কর্ণাটকের আদালতগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে হিজাবের উপর নিষেদ্ধাজ্ঞা জারী করে ও অনুমোদন করে এবং এই মাসের প্রথম দিনই দেশের রাজধানীতে একটি ঘৃণাপূর্ণ হিন্দু মহাপঞ্চায়েত আয়োজিত হয়। এর পরবর্তী দিনগুলিতে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড এবং নতুন দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। এই সংঘর্ষগুলির ধরণ একই ছিলঃ প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাম নবমী বা হনুমান জয়ন্তীর ধর্মীয় মিছিল হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। হাতে তলোয়ার আর মুখে উত্তেজক স্লোগানের চিৎকার নিয়ে চলা এই মিছিল ধীরে ধীরে সাধারণ বিবাদ থেকে সম্পূর্ণ হিংস্রতাপূর্ণ ঘটনায় পর্যবসিত হয়। এই স্লোগান ও তলোয়ার নিয়ে আস্ফালনের উত্তরে মুসলিমরা মিছিল লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। খুব শীঘ্রই রাষ্ট্র, বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশের এই হিংসা-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির মুসলিম বাড়িগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়ার অনুমতি দেয়। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান বলেছেন, “যে বাড়িগুলি থেকে পাথর ছোঁড়া হয়েছে, খুব দ্রুত আমরা সেগুলিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করব।”

তবে দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীর ব্যাপারটি একটু অন্যভাবে ঘটেছিল। সেখানে ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছিল দোকান ও বাড়িগুলি “বেআইনিভাবে জায়গা দখল করে আছে” – এই অজুহাতে। এই দখলদারী-বিরোধী উদ্যম যে একটি ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার ঠিক পর পরই শুরু হয়েছিল, তা কারও চোখ এড়িয়ে যায় নি।  

যেদিন এই হিংসার ঘটনা ঘটে তার পরের দিন সকালেই আমি এই ধর্মীয় শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলি। তলোয়ার সঙ্গে নেওয়ার কথা তাঁরা কেউই অস্বীকার করেন নি। “হ্যাঁ, আমাদের কাছে তলোয়ার ছিল…কিন্তু সে শুধু প্রদর্শনীর জন্যই। শুধু মজা করার জন্য। কারও কোনও ক্ষতি করার উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। আমরা ডিজের গান বাজাচ্ছিলাম আর আনন্দ করছিলাম,” শোভাযাত্রার একজন সদস্য রাকেশ সাহু বলেন। 

স্থানীয় মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মিছিল থেকে নাকি উস্কানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয়। সূর্যাস্তের পর, উপবাস ভাঙার সময়ের ঠিক আগেই এই ঘটনা ঘটায় মসজিদ তখন ভিড়ে ঠাসা ছিল। বলা হয় যে, স্লোগানের উত্তরে মসজিদের ভিতর থেকে মিছিল লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়।  

মুসলিম গোষ্ঠীর সদস্যরা অভিযোগ করেন যে, মিছিল থেকে মসজিদের ভিতর “জয় শ্রী রাম” লেখা গেরুয়া পতাকা টাঙানোর চেষ্টা করা হয় – হিন্দুরা যা অস্বীকার করেন। পরের দিন সকালে মসজিদের ভিতর, ঢোকার দরজার কাছে পতাকাগুলিকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।  আমি নিজেই বিজেপির দিল্লির মন্দির শাখা বা দিল্লি’জ টেম্পল ইউনিটের প্রধানদের চিৎকার করে যে স্লোগান দিতে শুনেছি, ইংরাজীতে তার মোটামুটি অনুবাদ হল, “এ দেশে থাকতে হলে, তোমাকে জয় শ্রী রাম বলতেই হবে” – পুলিশবাহিনীর প্রকট উপস্থিতিতেই খোলাখুলি এই হুমকি দেওয়া হয় ও হিংসায় অংশ নেওয়ার ডাক দেওয়া হয়। 

রাষ্ট্রের অনুমোদনে এর পর যে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয় তা অসংখ্য দোকান (সম্পূর্ণ), বেশ কয়েকটি বাড়ি (অংশত) এবং তাছাড়াও যে দরজায় গেরুয়া পতাকা টাঙানোর চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়, সেটি সহ মসজিদের সামনের অংশকে নিশানা করে।

দোকান আর গুমটি ভাঙার ফলে বাসিন্দাদের রুজিরোজগারের উপায় আক্রান্ত হলেও, মসজিদের উপর আক্রমণটি তার থেকেও অনেক বেশি প্রতীকী ছিল। জাহাঙ্গীরপুরীর অনেক অল্পবয়সী ছেলেই বড় হয়েছে এই মসজিদে গিয়ে, যা এই অঞ্চলের একমাত্র পূর্ণবর্ধিত এবং সঠিকভাবে কার্যক্ষম মসজিদ। এমনকি, অংশত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরেও, অনেকেই পিছনের দরজা দিয়ে মসজিদে আসছেন। “আমার অধিকাংশ নামাজের জন্যই আমি এই মসজিদে আসতাম,” ষোল বছরের সাজিদ বলে, “লোকে বোঝে না যে, একটি মসজিদ শুধুমাত্র একটা কাঠামো নয়। আমাদের সঙ্গে এর একটা আবেগ ভরা সম্পর্ক আছে। আমরা এখানেই বড় হয়েছি এবং কত কি শিখেছি।” 

দুপুরের নামাজের পর একটা বড় দল যখন মসজিদ থেকে বেরচ্ছিল, তখন যা ঘটেছে তা নিয়ে তাঁদের মুখে হতাশা ও দুঃখের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। তাঁরা কেবলমাত্র তাঁদের মসজিদের উপর আক্রমণের ঘটনা সহ্য করেন নি, রাষ্ট্র এমন একটি স্থানকে নিশানা করেছে, যেখানে তাঁদের মধ্যে অনেকেরই জীবনের প্রথম বন্ধুত্ব, প্রথম উপবাসের অভিজ্ঞতা হয়েছে, যেখানে তাঁরা প্রথম কোরান পড়তে শিখেছেন।   

স্বাধীন ভারতে অনেক মসজিদই ধূলিসাৎ হয়েছে। ১৯৯২ সালে বিজেপির মদতে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটি ভারতের সাম্প্রদায়িক মুহূর্তের চরমতম সন্ধিক্ষণগুলির একটি। যদিও জাহাঙ্গীরপুরী মসজিদের উপর আক্রমণ মাত্রা, বিশালত্ব বা তীব্রতার দিক থেকে বাবরি মসজিদের মত অতটাও প্রবল নয়, কিন্তু যা এই ঘটনাকে মেনে নেওয়া আরও কঠিন করে তুলেছে তা হল, দখলদারী-বিরোধী উদ্যমের ছদ্মবেশে এই আক্রমণের অর্থ আদতে রাষ্ট্র জাহাঙ্গীরপুরীর বাসিন্দাদের খোলাখুলি শাস্তি দিচ্ছে।   

জাহাঙ্গীরপুরীর অধিকাংশ মুসলিম বাসিন্দাই অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রের অংশ এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে নিগ্রহ ও ঘৃণার যে প্রবল আক্রমণ শুরু হয়েছে তার সামনে এঁরাই সব চেয়ে বেশি অসুরক্ষিত। ইতিমধ্যেই গ্রেফতারের সংখ্যা যেরকম দ্রুত বাড়ছে, তখন এই নারী ও পুরুষরা খুব ভাল করেই জানেন যে, মুখ খুলতে চাইলে তাঁরা অনেক কিছুই হারাবেন। 

কর্ণাটকঃ হিংসাই যখন আইন 
ভারতের দক্ষিণদিকের রাজ্য কর্ণাটকে আবার জাহাঙ্গীরপুরীর হতদরিদ্র শ্রমজীবী মুসলিম থেকে একেবারেই ভিন্ন যে শ্রেণীর বিরুদ্ধে জুলুম হচ্ছে, তা হল মুসলিম ধর্মাবলম্বী মেয়েরা, যাঁরা জীবনের কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ছয়জন হিজাবী কিশোরীকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন যে হিজাব না খুললে এই মেয়েরা শ্রেণীকক্ষে ঢুকতে পারবে না। হতাশ হয়ে, মেয়েরা এই নির্দেশের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করার জন্য অনেক দিন ধরে শ্রেণীকক্ষের বাইরে সিঁড়িতে বসে থাকে। এই অবস্থা আরও তীব্র হয়, যখন দক্ষিণপন্থী ছাত্র সংগঠনের ছেলেরা গেরুয়া চাদর পরে, এই মেয়েদের শ্রেণীকক্ষে ঢোকার অনুমতি না দেওয়ার দাবিতে, পাল্টা প্রতিবাদ শুরু করে। অচিরাৎ, কর্ণাটকের অন্যান্য কলেজেও হিজাব না পরার এই নিয়ম চালু করা শুরু হয়। অবশেষে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে মেয়েদের এই প্রতিবাদ কর্ণাটক হাই কোর্টে পৌঁছয়। কিন্তু, হাই কোর্ট জানায় যে, হিজাব ইসলামের “অপরিহার্য অঙ্গ নয়” এবং তাদের কলেজের নিয়ম মেনে চলতে হবে।  

এই মাসের শেষের দিকে আমি কর্ণাটকের নানা জেলায় ঘুরি এবং অসংখ্য হিজাবী মেয়ে, যাঁরা এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলি। এই মামলার দুইজন প্রধান আবেদনকারীদের মধ্যে একজন আলিয়া, ক্যারাটেতে রাজ্যস্তরে বিজয়ী আর ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার এবং অন্যজন আলমাস, যার ইচ্ছা বিমানচালক হওয়ার এবং ওড়ার স্বপ্নকে সফল করতে সে “মাটির উপর যা চলে” – মোটরবাইক থেকে গাড়ি – সমস্ত কিছু চালান শিখে নিয়েছে। 

সংস্কৃতি হুকুমজারি করতে পারে যে, হিজাব, বা বোরখা পরা মহিলাদের কেমন দেখতে হওয়ার কথা এই মেয়েরা তার বাঁধাধরা ছককে অস্বীকার করছে, কিন্তু তারা তাদের সেই প্রকট “হিজাবত্ব”-এর থেকে আরও বেশি কিছু। সমাজের যে পরিবেশ নিয়ে কথা হচ্ছে, তার ভিতরে তারা নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। উনিশ বছরের হীবা শেখ, কলেজের বাইরে যে দক্ষিণপন্থী পুরুষদের হাতে নিগৃহীত হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে ফার্স্ট ইনফর্মেশান রিপোর্ট দায়ের করার পরে সেই ঘটনার কথা তার বাবা-মাকে জানিয়েছে। হীবার কথায়, “আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা মনে হয় নি। আমি জানতাম তাঁরা আমাকে সমর্থন করবেন।” হীবা গত কয়েক বছর ধরে ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং তার ইচ্ছা পুলিশ অফিসার হওয়ার। সে বলে, “আমাদের দেশে এত ধর্ষণ হয়, তারা যাতে ন্যায় বিচার পায়, আমি তা নিশ্চিত করতে চাই।”  

যখন এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা মেয়েগুলির হাত থেকে শিক্ষার সুযোগ কেড়ে নেওয়া হয়, তখন শুধুমাত্র তাদের বর্তমান অবস্থানের ক্রমোন্নতির প্রক্রিয়াটিই আক্রান্ত হয় না, তাদের আত্মের ধারণা ও নিজের হাতে নিজের জীবন পরিচালনার ক্ষমতাকেও আক্রমণ করা হয়। এই কারণে, অনেক অল্পবয়সী মেয়েই শেষ পর্যন্ত কয়েক মাসের জন্য হিজাব ত্যাগ করে পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়। “আমি হতাশ হয়ে পড়েছি, কিন্তু আমি এটা করছি শুধুমাত্র যাতে পড়াশুনা চালিয়ে যাতে পারি,” একটা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সাফ্রীনা আমাকে বলে। সে আরও বলে যে, তার সহপাঠীরা জীবনে প্রথমবার তাকে হিজাব ছাড়া দেখছে, আর তারা তাকে প্রথমে চিনতেও পারে নি। “আমার খুবই অস্বস্তি হচ্ছিল,” সাফ্রীনা জানায়। রাষ্ট্রের হাতে বিবস্ত্র হওয়ার প্রায় সমতুল্য এই ঘটনা।      

যে মেয়েরা নিজেদের শিক্ষার সুযোগের মূল্যে হিজাব পরা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের কাছে আপোষ করা কোনও বিকল্প নয়। “আমার একটি ছোট বোন আছে, যে মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে,” আফসীন, একজন হিজাবী ছাত্রী আমাকে বলে। “আমার আর মাত্র এক বছর বাকি আছে কলেজে, আমি সেই সময়টুকু খাপ খাইয়ে চলতে পারি, কিন্তু বোনের সামনে সমস্ত পড়াশুনোর সময়টাই বাকি আছে। আমরা যদি এখন আপোষ করি, তাহলে আমাদের পরের প্রজন্মকে আরও অনেক বেশি নির্মমতার মুখোমুখি হতে হবে।” যদিও আফসীন খুবই স্বাভাবিকভাবে তার এই দায়িত্বের কথা বলছিল, কিন্তু একজন সতের বছরের মেয়ের পক্ষে পরের প্রজন্মকে সুরক্ষিত করার কথা ভাবা খুব একটা সহজ কাজ নয়। কিন্তু আফসীন, আলমাস, হীবা এবং তাদের মত কর্নাটকের আরও অনেকে নিজেরাই নিজেদের তরুণ কাঁধে এই বোঝা তুলে নিয়েছে।

টিঁকে থাকার কৌশল হিসেবে মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া
দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীর বাসিন্দাদের লড়াই কর্নাটকের মুসলিম মেয়েদের থেকে একেবারেই আলাদা। কিন্তু তা সত্ত্বেও, যে চিন্তাটি দুই ক্ষেত্রেই উপস্তিত তা হল, নাগরিক হিসেবে একজনের অধিকারে উপর সমস্ত দিক থেকে আক্রান্ত হওয়ার যন্ত্রণা – অপরাধ কি তা না জানিয়ে বা কোনও রকম আভাস মাত্র না দিয়ে বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে কোন মতবাদ বা ধর্মীয় নীতিতে বিশ্বাস করছি বা কি পোষাক পরছি তার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার প্রাথমিক অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ও কেড়ে নেওয়া পর্যন্ত।    

জাহাঙ্গীরপুরীর বাসিন্দারা খুব ভাল করেই জানেন যে, মিছিলে যাঁরা ছিলেন তাঁদের সঙ্গে একই জায়গায় তাঁদের থেকে যেতে হবে। এর অর্থ, তাঁরা যেমন তাঁদের ক্রমশ অবমানবে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করে যাবেন, তেমনই তাঁরা জোর করে নিজেদের মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন। কর্নাটকের মেয়েদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম। ওই গেরুয়া পরা প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অনেকেই তাদের সহপাঠী বা (ভূতপূর্ব) বন্ধু। এই মেয়েদের অনেকেই কলেজ ছেড়ে ব্যক্তিগতভাবে পড়াশুনো চালিয়ে যেতে পারবে, কিন্তু এমন অনেক মেয়ে আছে যাদের পক্ষে তা সম্ভব নয় এবং তারা এই লড়াই চালিয়ে যাবে আদালতে আর পথেঘাটে। হিংসাকে স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছে বলেই তার অর্থ এই নয় যে, মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পক্ষে টিঁকে থাকা লড়াইটা স্বাভাবিক আর সহজ হয়ে গেছে। বর্তমানের এই সংকটের সঙ্গে তাঁদেরও যতটা সম্ভব আপোষ করে, সুসময়ের অপেক্ষায় অনেক কিছু বাদ দিয়ে চলতে হচ্ছে।    

ফতিমা খান

Author

ফতিমা খান নতুন দিল্লির দ্য কুইন্টের একজন সিনিয়র করেসপন্ডেন্স

(Bangla Translation by Sritama Halder)
অনুবাদঃ শ্রীতমা হালদার