অতিমারীর সময়ে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ভারত-আফ্রিকার অংশীদারী যৌথতা

18/01/2021
IiT English Page

কোভিড-19 অতিমারীর ফলে যে অনিশ্চয়তা জন্মেছে এবং বিশ্ব জুড়ে নানা গোষ্ঠী, অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রার প্রণালী যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে, ভারতের উপর। সারা বিশ্বে চর্চিত নিয়ম, নীতি ও পরিচালন পদ্ধতিগুলি যেহেতু একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত তাই অতিমারী যখন এক মহাসর্বনাশের রাশ খুলে পৃথিবীতে ছেড়ে দিয়েছে তখন সমস্ত রাষ্ট্রই এক ধরনের সংকীর্ণ ও অন্তর্মুখী রীতি গ্রহণ করেছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে, আরোগ্যের প্রক্রিয়ার কথা মাথায় রেখে, বিশেষত আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে, ভারতের যৌথভাবে কাজ করার সম্ভাবনাকে খুঁটিয়ে দেখা অত্যন্ত প্রয়োজন। 

যে জায়গাগুলি সব চেয়ে শেষে কোভিড-19 ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে আফ্রিকা তাদের মধ্যে একটি এবং এই মহাদেশে মৃতের সংখ্যা ৩৫,০০০ হাজারের বেশি। তবে অনেক কম সংখ্যায় সংক্রমণ ঘটার ফলে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার ক্ষেত্রে এশিয়া বা, এমনকি, ইউরোপের চেয়েও বেশি এগিয়ে আছে আফ্রিকা। এর কারণ সম্ভবত এই মহাদেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বয়সে তরুণ। তবে, অর্থনৈতিকদিক থেকে দেখলে, ইইউ, ইউএস, চীন এবং অন্যান্য দেশের বাজারে আফ্রিকাতে তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে যাওয়ায় আফ্রিকার আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ অনেক নিচে নেমে গেছে, যার ফলে চাহিদা ও যোগানের শৃঙ্খলে ধাক্কা লেগেছে। যা এই ঘটনাকে আরো ভীতিপ্রদ করে তোলে তা হল যে, এই বছর সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা বা সাব সাহারান আফ্রিকার আদত মাথাপিছু স্থূল জাতীয আয় বা জিডিপি -৫.৪ শতাংশ হারে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তার উপরে, ৩০ মিলিয়ন চাকরি উধাও হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা আর অ্যাঙ্গোলার মত বৃহত্তর অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলিতে, যথাক্রমে, ২০২৩ আর ২০২৪ পর্যন্ত, জিডিপির এমন উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে না যা তাকে কোভিড-19 অতিমারীর আগের অবস্থায় নিয়ে যাবে। এছাড়াও, কোভিড-19 এই সমস্ত অঞ্চলের সমাজকল্যাণ পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দুর্বলতাগুলিকে সামনে এনে দিয়েছে। আফ্রিকার অনেক দেশেই প্রতি মিলিয়ন মানুষের জন্য একটি হাসপাতাল এবং প্রতি দশ হাজার মানুষের জন্য একজন ডাক্তার ও একটি বিছানা বরাদ্দ। 

এই কথা বলার পর যা বলা প্রয়োজন তা হল, আফ্রিকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশানের মধ্যে তুমুল পারস্পরিক সহযোগিতার কারণে অনেক সংখ্যক মানুষের পরীক্ষার ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তাকে সহজলভ্য করা সম্ভব হয়েছে এবং আরো ব্যাপকভাবে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়াকে প্রতিরোধ করা গেছে। রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার পাশাপাশি আফ্রিকার প্রতিটি দেশের সাধারণ নাগরিকদের নানা সংস্থা এবং তরুণ কর্মীদলের সক্রিয় সহযোগিতার কারণে সাহায্যের জোগাড় ও সেগুলি বিতরণ করা, কোভিড-19 সম্পর্কে সচেতনতা ছড়ান, এবং এই অতিমারীর হাত এড়ানোর নানা উপায় বের করা ইত্যাদি কাজ অনেক সহজে করা গেছে। আফ্রিকার নিজস্ব সংস্থাগুলির হাতে একযোগে এই সংকটের মোকাবিলা করার উপায় থাকলেও, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, বিভিন্ন বৈদেশিক বহুপক্ষীয় সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির সহায়তা আফ্রিকার প্রচেষ্টাকে আরো সুদৃঢ় করবে। উচ্চস্তরের নেতাদের মধ্যে নিয়মিত সাক্ষাৎ, কূটনৈতিক পদক্ষেপের বৃদ্ধি, বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বৈচিত্রপূর্ণ অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা, এবং আফ্রিকা থেকে এসে ভারতে বসবাস করছেন এমন মানুষজনের গোষ্ঠী বা ভারতের প্রাণবন্ত আফ্রিকান ডায়াস্পোরার মধ্যে দিয়ে  ভারত-আফ্রিকা সম্পর্ক সাম্প্রতিক অতীত থেকেই গতি পেয়েছে। বর্তমানের এই অভূতপূর্ব সংকটের সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে এবং এই পারস্পরিক আকর্ষণের উপর ভিত্তি করেই আফ্রিকা ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় হতে পারে।

কোভিড-19 অতিমারীর জন্য সহায়তা এবং এর প্রতিষেধকের উপর সকলের ন্যয়সঙ্গত অধিকার স্থাপনের প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে আফ্রিকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার সর্বাঙ্গীণ উন্নতির মত বিষয়কে এই সহযোগিতার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ইতিমধ্যেই, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভারত-আফ্রিকার মধ্যে যে সহযোগিতা তা বহুমাত্রিক ও সর্বাঙ্গীণ। এছাড়াও রাষ্ট্রীয়, রাজ্যকেন্দ্রীক এবং আঞ্চলিক উদ্যোগগুলি একত্রে আফ্রিকার প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত সামর্থ্যকে বাড়িয়ে তোলার উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছে। কম মূল্যের পণ্যনামহীন ওষুধের রপ্তানী, স্বাস্থ্যপরিকাঠামোকে শক্তিশালী করা, বিভিন্ন সাহায্য প্রদান, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসকদের আমন্ত্রণ জানান ইত্যাদি কাজগুলি এই উদ্যোগের মধ্যে পড়ে। 

“বিশ্বের ঔষধালয়” হিসাবে পরিচিত ভারত ইতিমধ্যেই যে আফ্রিকার পঁচিশটি দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনসহ অন্যান্য ওষুধ পাঠিয়েছে সে কথা মাথায় রেখে বলা যেতে পারে যে আফ্রিকার কোভিড-19 আক্রান্ত অঞ্চলগুলিতে কম মুল্যে কোভিড-19 রোগের প্রতিষেধক সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারত একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীও হয়ে উঠতে পারে।  সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (এসআইআই) পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক প্রতিষেধক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে এবং তার পাশাপাশি ভারত বায়োটেক এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ একত্রে কোভ্যাক্সিনসহ অন্যান্য প্রতিষেধক তৈরি করার কাজও করছে। এদের মধ্যে জাইডাস ক্যাডিলার তৈরি জাইকোভ-ডি প্রতিষেধকটির দামই সম্ভবত সব চেয়ে কম হবে এবং মধ্য ও নিম্নআয়ের দেশগুলিতে এটিকে সরবরাহ করা হবে। এসআইআই বিবৃতি দিয়েছে যে, এই সংস্থা হু-এর সাহায্যপ্রাপ্ত কোভ্যাক্স উদ্যোগে প্রতিষেধক সরবরাহ করতে শুরু করবে। এর সঙ্গে সঙ্গেই দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রক নিশ্চিতভাবে জানিয়েছে যে, তারা এসআইআই-এর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে এবং এই চুক্তি অনুযায়ী আগামী দুই মাসের মধ্যে এই দেশ ১.৫ মিলিয়ন ভ্যাক্সিন পাবে।   

ওষুধপত্র সরবরাহ ছাড়াও, আফ্রিকার ওষুধ তৈরি সামর্থ্যের উন্নতিসাধনের ক্ষেত্রে ভারতের ওষুধ কোম্পানিগুলি বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে। আফ্রিকার অনেক দেশই ভারত থেকে আমদানী করা ওষুধপত্রের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এছাড়াও বহু ভারতীয় কোম্পানি কেনিয়া এবং ইথিওপিয়ার মত দেশে লগ্নীর উপযুক্ত পরিবেশের আকর্ষণে সেখানকার স্থানীয় ওষুধের কারবারীদের সঙ্গে যুগ্মভাবে ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতীয় কোম্পানিগুলি আফ্রিকার নানা দেশের আভ্যন্তরীণ পরিসরে ব্যবসায়ে যে সাফল্য লাভ করেছে সে কথা চিন্তা করলে বোঝা যাবে যে, এর পাশাপাশি, ঔষধ শিল্পের নানা কৌশল ও জ্ঞান রপ্তানী করার সুযোগও ভারতীয় কোম্পানিগুলির হাতে আছে। পেটেন্ট নেওয়ার জটিল অলিগলিতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে এবং নির্দিষ্ট অঞ্চলে যে সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই সক্রিয় তাদের সঙ্গে কি ভাবে অংশীদারিত্বে আসা যায় সে সম্বন্ধে পরামর্শ দেওয়া ইত্যাদি এই জাতীয় কৌশল ও জ্ঞানের মধ্যে পড়ে।  ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানিউফ্যাকচারিং প্ল্যান ফর আফ্রিকা, ২০০৭ সালের একটি ব্যবসা পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঔষধ প্রস্তুতের একটি বনিয়াদ তৈরি হলে আমদানী করা ওষুধের উপর আফ্রিকার নির্ভরশীলতা কমবে এবং ওষুধ পাওয়ার অধিকারের পাশাপাশি ওষুধের গুণমান, লভ্যতা ও অর্থের সাশ্রয়ও বাড়বে। 

একই রকমভাবে, ২০২১ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া আফ্রিকান কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়া (এএফসিটিএ)-ও মূলত এই শিল্পের খন্ডিত বাজারব্যবস্থাকে সুবিন্যস্ত করে আফ্রিকার ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রটিকে আরো উন্নত করবে। বর্তমানে, এই খন্ডিত বাজারের কারণেই এই শিল্পের লগ্নীকারীরা আফ্রিকায় কোন রকম বিনিয়োগে উৎসাহী নন। এই মুহুর্তে ১.৩ বিলিয়ন এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ২.২ বিলিয়ন ক্রেতাসহ এই বাজার কেবলমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে বিশ্বের বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা ও সুযোগ দেবে না, তার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী বহু প্রজন্মের মানুষের চাকরীর বন্দোবস্ত করবে, দক্ষতা ও কারিগরিবিদ্যার কলাকৌশলের হস্তান্তর সহজতর হবে এবং বর্তমানে এই শিল্প সংক্রান্ত জ্ঞানের মধ্যে যে শূণ্যস্থান আছে সেগুলির পূরণ হবে। অন্য দিকে, বিদেশী লগ্নিকারীদের যে সুবিধা দেওয়া হয় সেগুলি এবং স্থানীয় ব্যবসাগুলির অংশীদার হলে অন্যান্য যে অতিরিক্ত সুবিধাগুলি পাওয়া যায় সেগুলির পেলে “ইন্ডিয়া আইএনসি.-ও উপকৃত হবে। ওষুধ তৈরি ছাড়াও, এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য শিল্প, যেমন কাঁচামালের প্রসেসিং, প্যাকেজিং এবং পণ্যের পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলিও ভারতের উদ্যোগপতি ব্যবসায়ীদের আয়ত্তে আসবে।  এ ছাড়াও, ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইতিমধ্যেই ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটা তাৎপর্যপূর্ণ উপস্থিতি আছে আফ্রিকাতে এবং সম্প্রতি হেলথ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ন্যাটহেলথ) এবং আফ্রিকা হেলথ ফেডারেশন (এএইচএফ)-এর মধ্যে সম্প্রতি সাক্ষরিত মউ চুক্তির লক্ষ্যই হল স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি করা, বিনিয়োগ বাড়ান এবং দেশ জুড়ে যৌথ উদ্যোগের সুযোগ তৈরি করা। স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে, এই বলিষ্ঠ অংশীদারিত্বের যে একটি খাঁটি ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আছে তাকে এই চুক্তি স্বীকৃতি দেয়।

স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিক থেকে ভারত-আফ্রিকা সহযোগিতাকে প্রসারিত করতে ভারত সরকার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে পারে। এই ভূমিকায় সরকার চিকিৎসার সঙ্গে সংযুক্ত পেশার মানুষদের নিয়ে সক্রিয় দল গঠন করতে পারে। ওই দল ও আফ্রিকার দেশগুলির অনুরূপ কর্মীদের মধ্যে ভিডিও বা টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে এই অতিমারীকে দমন করার অভিজ্ঞতা ও তা থেকে তাঁরা যে শিক্ষা পেয়েছেন, প্রতিষেধক সরবরাহ এবং আরো অনেক বিষয় নিয়ে মতামত আদানপ্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ই-ভিবিএবি-র অংশ হিসাবে, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে চালু হওয়া ই-আরোগ্যভারতী প্রকল্পটি (টেলি-মেডিসিন) হয়ত সেদিকে এগোনরই একটি পদক্ষেপ। ই-বিদ্যাভারতী (টেলি-এডুকেশন) যার একটি অংশ সেই ই-ভিবিএবি প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবেই সরকারী অর্থে পরিচালিত। প্যান-আফ্রিকা ই-নেটওয়ার্ক প্রোজেক্টের দেওয়া সুবিধাগুলির উপর সংযোজন করে এই প্রকল্পটি ভারতের প্রধান প্রধান শিক্ষাকেন্দ্রে পড়াশুনো এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসার সুযোগের প্রতিশ্রুতি দেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অফ অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং ও অন্যান্য অংশীদাররা মিলিতভাবে এই পরিষেবা দিয়ে থাকে। তবে, যদি এই পারস্পরিক যোগাযোগ ও কথোপকথন আরো স্বচ্ছ ও জনগণের কাছে সহজলভ্য হয় এবং আলোচনাগুলিকে অনলাইনে তুলে দেওয়া হয় যাতে সেগুলি বৃহত্তর জনসমাজের কাছে পৌঁছয় তাহলে আরো উপকার হবে। 

অতিমারী পরবর্তী সময়ে যখন ভারত ও আফ্রিকা দুই অঞ্চলই তার প্রভাব থেকে মুক্তি পাবে সেই সময়টিতে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ভারত-আফ্রিকার এই পারস্পরিক সহযোগিতা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ - সমস্ত ধরনের মেয়াদকালের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।  আফ্রিকার স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে তার ফলাফল যেমন আগামী দশকগুলি জুড়ে সুদূরপ্রসারী হবে, তেমনই ভারতের অসংখ্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহায়ক কর্মী, শিক্ষানবিশ ধাত্রী, গবেষণাগারের কর্মী এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ বিষয়ভিত্তিক স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর ব্যবস্থা করাও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে কিছু অসাধারণ ও উদ্ভাবনী ভাবনা কাজে লাগানো যায় যেগুলির জন্য প্রচুর পরিমানে আর্থিক মূলধনও প্রয়োজন হয় না। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, ভারত ও আফ্রিকার ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ এবং ভারতের তরুণ ডাক্তারদের জন্য গ্রাম্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যাতে আফ্রিকার নানা দেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে সেই প্রশিক্ষণ তাঁরা কাজে লাগাতে পারেন। ভারতে যাঁরা এই সব ক্ষেত্রের কর্মকর্তা তাঁরা, হু এবং ইউএনের মত বহুপক্ষীয় প্রয়াসের অংশীদাররা যাতে আফ্রিকার রোগ মুক্তির জন্য আরো পদক্ষেপ নেয়, সেই প্রচেষ্টার সূচনা করে, তার পুরোভাগে থাকতে পারেন। বলা যেতেই পারে যে, ভারতের উপর কোভিড-19 অতিমারীর এই সংকটের প্রভাব অত্যন্ত গভীরভাবে পড়েছে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলির সমাধান করার সুবিশাল দায়িত্ব তারই মাথার উপর।  কিন্তু যে বাস্তবতার উপর আমদের সকলের সমান অধিকার তার এই কঠিন সঙ্কটকালে আফ্রিকার সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করলে তা ভারত-আফ্রিকার যে সংহতি ঐতিহাসিকভাবে সত্য সেই সংহতির মূল্য ও মান আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে। 

ভেদা বৈদ্যনাথন

Author

ভেদা বৈদ্যনাথন নয়া দিল্লির ইনস্টিট্যুট অফ চাইনিজ স্টাডিজের একজন গবেষক। তাঁর স্পেশালাইজেশনের বিষয় এশিয়া-আফ্রিকার পারস্পরিক সম্পর্ক। এছাড়াও, তিনি পরমার্শদাতা হিসাবে হারারের জিম্বাবুয়ে এনভায়রোমেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত।

(Bangla Translation by Sritama Halder)
অনুবাদঃ শ্রীতমা হালদার