কোভিড-19 অতিমারীর সময়ে মানবাধিকার ও রাষ্ট্রনীতি ঃ জবাবদিহির মধ্যেই ন্যায়ের সন্ধান

07/06/2021
IiT English Page

ভারতে কোভিড-19 অতিমারীর দ্বিতিয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশ জুড়ে হাসপাতালে বেডের জন্য মানুষের হাহাকার একলপ্তে কয়েকগুন বেড়ে গেছে, অক্সিজেনের আকাল দেখা দিয়েছে, এমনকি অত্যাবশ্যক ওষুধ নিয়ে ব্যাপকভাবে কালোবাজারিও শুরু হয়েছে। সংবাদ ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শ্মশান গুলোতে  মৃতদেহের ভিড়, গঙ্গায় মৃতদেহের ভেসে যাওয়ার মত খবর বার বার সামনে চলে আসছে।  এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তথ্য বিকৃত করে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার মত ঘটনাও যা সারা দেশের মানুষের মধ্যে এক গভির চাঞ্চল্যর সৃষ্টি করেছে।   প্রতিক্রিয়া-স্বরূপ , দেশের বিভিন্ন   হাই কোর্টে অনেকগুলি পিটিশন জমা পড়েছে এবং তাতে  রাজ্য ও কেন্দ্রিয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যে অতিমারীর অবস্থা আঁচ করে  উপযুক্ত প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে পারে নি তা তুলে ধরা হয়েছে। 

অতিমারীর এই চূড়ান্ত সংকটে চিফ জাস্টিস বোবদের নেতৃত্বে সুপ্রীম কোর্টের একটি বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নেয় ইউনিফর্ম  অর্ডার” বা অভিন্ন আদেশ” জারি করার যাতে বিভিন্ন হাই কোর্টে অক্সিজেনঅত্যাবশ্যক ওষুধ এবং টিকা সরবরাহসংক্রান্ত মামলাগুলিকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে এসে একত্রে বিচার করতে পারে। বলাবাহুল্য, আইন ও বিচারব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবং সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ দুষ্যন্ত দাভে সরাসরি  অভিযোগ করেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের অক্ষমতা ঢাকা দেওয়ার জন্যই সুপ্রীম কোর্ট  গঠিত বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে , তদপরিনাগরিকদের নিয়ে যদি সত্যিই সুপ্রীম কোর্ট  এত চিন্তিত তাহলে অনেক আগেই কেন স্বতোঃপ্রণোদিতভাবে কোভিড আক্রান্তদের জন্য যাতে যথেষ্ট পরিমাণে হাসপাতালে বেড/শয্যাটিকা, ওষুধ আর অক্সিজেনের ব্যাবস্থা থাকে  তার সালিসি করল না দুর্ভাগ্যবশত, সরকারের মতোই, সুপ্রীম কোর্টও এই পুরো সময়টাই ঘুমিয়েই কাটালো”।

এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখ জাস্টিস বোবদে অবসর নেন। আগের দুই জন বিচারকএল. নাগেশ্বর রাও এবং এস. রবীন্দ্র ভাট সহ নতুন বেঞ্চের নেতৃত্বে আছেন জাস্টিস ডি. ওয়াই. চন্দ্রচূড়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই বেঞ্চ পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে, সুপ্রীম কোর্ট কোনভাবেই হাই কোর্টের পিটিশনগুলি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবে না। তবে, যেহেতু তার দায়িত্ব মধ্যস্থতা করা, তাই এই বেঞ্চ জানিয়েছেন যে,অতিমারীর কারণে দেশ যখন এক ‘জাতীয় সংকটের’ মুখোমুখি হয়েছে সেসময়ে সুপ্রীম কোর্ট একজন নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বিবৃত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষাই কোর্টের সাংবিধানিক কর্তব্য”।

সুপ্রীম কোর্টের তিন বিচারপতি দ্বারা গঠিত বেঞ্চ অক্সিজেনের সরবরাহঅত্যাবশ্যক ওষুধচিকিৎসার পরিকাঠামোমানব সম্পদ এবং টিকা সংক্রান্ত নানা বিষয়কে পরীক্ষা করে দেখার জন্য সনাক্ত করে, এবং ২৯ এপ্রিলেরর মধ্যে  কেন্দ্র এবং রাজ্য-সরকারগুলোকে এই বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখতে বলা হয়।  এছাড়াও, বিশেষত টিকাদানের নীতিতে যে বদল আনা হয়েছে যা পরের দিন (অর্থাৎ ৩০ শে এপ্রিল) থেকেই জারি হতে চলেছে, সেই বিষয়েও বেঞ্চ কিছু প্রশ্ন তোলে। এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখে আদালত আবার সমবেত হলে কেন্দ্র সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যসরকার হলফনামা বা এফিডেভিট দাখিল করে এবং তাঁর সঙ্গে কুড়িটিরও বেশি নাগরিক সমাজ সংগঠন ও বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিরা সামগ্রিক ভাবে বেঞ্চকে শুনানিতে সাহায্য করার জন্য ইন্টারলোকিউটারি অ্যাপ্লিকেশান জমা দেয়। 

শেষমেশ গত ৩০  এপ্রিল   সুপ্রীম কোর্ট ঘোষণা করে কোভিড-19 সংক্রান্ত সমস্ত মামলাকে রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করে নিজের এক্তিয়ারে  নিয়ে আসার, এবং অতিমারীর সময়ে রাজ্যসরকার যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে তাঁর সহায়ক হয়ে উঠতে।  নিজেদের ভূমিকাকে নিয়ন্ত্রিত – পরিকল্পিত পদক্ষেপ” বলে ব্যাখ্যা করে, সুপ্রীম কোর্টেস্বীকার করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইনসভার  কাজে জোর করে হস্তক্ষেপ না করাই উচিত। করে তারা কেবল সরকারের কর্মপন্থার যুক্তিগুলোকে মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন করার পক্ষে যা সংবিধানের ধারা ২১ অনুযায়ী জীবনের অধিকার এবং ধারা ১৪ অনুযায়ী সমানাধিকারের অধিকারকে সুনিশ্চিত করে। এই নির্দেশের ফলে, বিপর্যয় মোকাবিলায় ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী কেন্দ্র ও রাজ্যসরকার দুইজনের উপরই সমান দায় বর্তায়। উপযুক্ত চিকিৎসার সুবিধা পেতে অধিকাংশ নাগরিক যে কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন তার সমাধানের দায়িত্ব নিতে এবং নীতি প্রয়োগের সময় কেন রাজ্য ও পৌরসভা-পঞ্ছায়েত গুলোকে প্রতিবন্ধকতার  সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা কেন্দ্রীয় সরকারকে খতিয়ে দেখার  নির্দেশ দেয়। কেন্দ্র-সরকার যদিয়  অক্সিজেন সরবরাহর অপর্যাপ্ততা এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করতে না পারার ব্যারথতার  সমস্ত দায় রাজ্যসরকারের উপর চাপিয়ে দিয়েছে তবে অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়ে নানা রাজ্যের আশু প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে করতেই সুপ্রীম কোর্ট রাজ্যগুলির অবস্থান সমর্থন করেছে এবং প্রতিটি রাজ্যের নির্দিষ্ট দাবি অনুযায়ী সেই রাজ্যে অক্সিজেনের যোগান বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছে

তবে টিকাদানের প্রক্রিয়া নিয়েই সুপ্রীম কোর্ট সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপটি নিয়েছে। কোর্টের বক্তব্যকেন্দ্রসরকারের উচিত প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যের অধিকার ও পরিচয় নির্বিশেষে সমানাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই টিকাদানের প্রক্রিয়ার পরিমার্জনা করা। এর আগে, ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হওয়া টিকাদানের প্রক্রিয়াটি ছিল একটি কেন্দ্রীভূত পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ কেন্দ্র টিকা সংগ্রহ করে প্রতিটি রাজ্যের জন্য তা বরাদ্দ করবে এবং রাজ্যের দায়িত্ব সর্বসাধারণের জন্য পরিচালিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সেগুলিকে বন্টন করা। এই কার্যক্রমে সরকারী ও বেসরকারী দুই ধরনের সংগঠনই অংশ নেবে। সরকারী সংস্থায় বিনামূল্যে টিকা পাওয়া যাবে আর বেসরকারীতে প্রতি ডোজের জন্য ২৫০ টাকা (প্রায় তিন ডলার) দাম দিতে হবে। প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসা-পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীদের আরো কয়েকটি বিভাগকে এই টিকার জন্য নির্বাচন করা হয়। তারপর পয়লা এপ্রিলের থেকে ৪৫ বা তার বেশি বয়স যাঁদের তাঁদের সবাইকে টিকার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছিল। সবশেষে ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের জন্য টিকাদানের ব্যবস্থা করা হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল।

পয়লা মে থেকে জারি হওয়া পরিবর্তিত নীতি অনুযায়ী, দেশে যে পরিমাণে টিকা তৈরি হবে কেন্দ্র তার থেকে পঞ্চাশ শতাংশর কেবল কিনে বণ্টন করবেবাকি পঞ্চাশ শতাংশের জন্য রাজ্যসরকার আর বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করবে এবং টিকানির্মাতাদের সঙ্গে নিজেরাই টিকার দাম আর যোগানের সময়সূচি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা ও দরাদরি করে নেবে। পঁয়তাল্লিশ বছরের নিচে যাঁদের বয়সবেসরকারী সংস্থার থেকে তাঁদের টিকা নিতে হবে এবং টিকানির্মাতা ও বেসরকারী হাসপাতাল যে দাম ঠিক করবে সেই দামই দিতে হবে। এই শর্ত মানলে পঁয়তাল্লিশ বছরের বেশি বয়সীরাও বেসরকারী হাসপাতালে টিকা নিতে পারবেন। এই নীতির ব্যাখ্যা হিসাবে কেন্দ্রের যুক্তি হল, এইভাবে টিকানির্মাতারা তাঁদের বিনিয়োগের উপর অনেক বেশি লাভ করবেন যার ফলে অনেক বেশি টিকা তৈরি হবে। এছাড়াও রাজ্যসরকার ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে বাজারনির্ভর প্রতিযোগিতা শুরু হলে টিকার বিতরণ অনেক বেশি দক্ষতার সাথে ও সাশ্রয়ীভাবে হবে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, দেশের বৃহত্তম টিকানির্মাতা সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সিইও জনসমক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন যে টিকাদানের প্রথম নীতিটি যখন চালু ছিল তখনই তাঁরা যথেষ্ট লাভ করেছিলেন -  কিন্তু তাঁদের লক্ষ্য ছিল আরো অনেক বেশি মুনাফা। 

কিন্তু সুপ্রীম কোর্ট টিকাদানের এই পরিবর্তিত নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যা ঠিক সময়ের মধ্যে সর্বজনীন টিকাদানের সামর্থ্য এবং সকলের টিকা পাওয়ার ন্যায্য অধিকারের ভিত্তিকেই অস্বীকার করে। । তাছাড়াসরকার যেহেতু টিকা তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন তাহলে কেন বর্তমান টিকানির্মাতার সামনে এর থেকে ভালো শর্ত রাখা হল না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্যসাধনের জন্য এখন যাঁরা টিকা বানাচ্ছে সেই দুই সংস্থার পাশাপাশি আরো প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনের জন্য বাধ্যতামূলক অনুমতিপত্র বা কম্পালসারি লাইসেন্স দেওয়ার মত উপায় কেন অবলম্বন করা হল না কোর্ট সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে। এছাড়াও অত্যাবশ্যক জিনিস নিয়ে কালোবাজারি হওয়া আটকানোস্বাস্থ্যকর্মীদের অধিকার ও নিরাপত্তা এবং অতিমারী নিয়ে খবর ও বিবৃতি দেওয়ার জন্য সংবাদ মাধ্যমের (মিডিয়ার) উপর খবরদারি নিয়েও কোর্ট আলোচনা করেছে। 

কোর্ট এও লক্ষ্য করেছে যে কেন্দ্রসরকারের জবাবের অনেকটা অংশই পরিষেবার ঘাটতি মেটাতে তাঁরা কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তারই ব্যাখ্যা। টিকাদান নীতির প্রসঙ্গেই যেমন হঠাৎ করে কেন একটি বাজারভিত্তিক পন্থা অবলম্বন করা হল তার কোন কারণ দেখান হয় নি। তার বদলে কেন্দ্র সুপ্রীম কোর্টকে আশ্বাস দিয়েছে যে রাজ্যসরকার যেহেতু রাজ্যের সমস্ত নাগরিককেই বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাই টিকার যোগান, বন্টন আর মূল্যনির্ধারণের নীতিতে কোন পরিবর্তন সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করবে না। একই ভাবে, টিকার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার বিষয়টির উপরও মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে কোর্টকে নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্র নজির হিসাবে বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছে। সেগুলির মধ্যে একটি হল, টিকানির্মাতারা কেন্দ্রসরকার সহ সমস্ত রাজ্যসরকারের জন্য একই দাম ধার্য করেছে। কিন্তু এর মধ্যে কোনটাই কেন্দ্রসরকারের প্রতিশ্রুতি নয়। এগুলি নিছকই অন্য অংশীদাররা আগে কি করেছেন তার থেকে তৈরি হওয়া প্রত্যাশা বা ভবিষ্যতে কি করা হবে বা হতে পারে তার পুনরাবৃত্তি।  এর প্রেক্ষিতে, কেন্দ্র সরকার ঘোষণা করেছেন যে নীতি প্রণয়ন করা শাসনকাজ পরিচালকদের বিশেষ অধিকার এবং উপযুক্ত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষেই এই নীতিগুলি তৈরি হয়েছে। তাঁরা এও জানিয়েছেন যে অতিউৎসাহীর মত এখানে হস্তক্ষেপ করা বা এই বিষয়ে প্রশ্ন করা বিচারবিভাগের কাজ নয়।   

দুর্ভাগ্যক্রমে, পরবর্তী শুনানীর ঠিক আগের দিনই বেঞ্চের প্রধান পরিচালক কোভিড-19 রোগে আক্রান্ত হন এবং মামলার দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে, ১ জুন আবার কোর্ট শুরু হয় এবং বেঞ্চ স্বীকার করে নেয় যে, নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাঁরা শাসনকার্য পরিচালকদের জ্ঞানকে প্রশ্ন করতে পারেন না। কিন্তু তারপরেও কোর্ট তার নিজস্ব দায়িত্বের উপর জোর দেয়, “নির্বাচিত কর্মপন্থা যাতে যুক্তিযুক্ততার মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারে, সুস্পষ্ট স্বেচ্ছাচারিতার বিরোধিতা করতে সক্ষম হয় এবং সকলের জীবনের অধিকার রক্ষা করতে পারে তার জন্য কোর্ট তার আইনগত অধিকার প্রয়োগ করবে”।

এর আগেও ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট স্বাস্থ্য  পরিষেবাক নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসাবে দেখেছে। তবে এখন আইনী পথে হেঁটে সরকারকে তার কর্তব্যপালনের বিষয়ে জবাবদিহি করতে আহ্বান করে এই মামলাটি একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সরকারের কর্মপন্থা নির্ভর করে আছে এমন একটা আদর্শের উপরে যেখানে টিকা ও টিকাদান, বা সে ভাবে বলতে গেলে, কোভিড-19 অতিমারী সংক্রান্ত সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবাকই আসলে বিক্রয়যোগ্য পণ্য, এবং সেখানে বাজারনির্ভর প্রতিযোগিতা ও ব্যক্তিগত মুনাফাই তার মূল চালিকাশক্তি। কোর্টের চাপে কেন্দ্রীয় সরকারের হলফনামায় কিছু নিরাপত্তার কথা ঘোষণা করা হয়েছে এবং জানান হয়েছে যে, তাঁরাও নাগরিকদের জীবন ও সাম্যের অধিকারে বিশ্বাস রাখেন। কিন্তু টিকাদানের নীতির ক্ষেত্রে কেন্দ্র তার বাজারমুখী ঝোঁকই বজায় রেখেছে। বর্তমান নীতি এবং তার ফলাফল পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোর্ট যত গভীরে যাচ্ছে ততই এই ধরনের বাজারমুখী পন্থা যে আসলে সংবিধানের স্বাস্থ্য ও মানবাধিকারকে লঙ্ঘনই করছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সম্ভবত, টিকা এবং টিকাদান পদ্ধতিকে জনসাধারণের সম্পত্তি হিসাবে মেনে নিয়ে সেই হিসাবে নীতি প্রণয়ন করলে তবেই কোর্টের এই পুঙ্খানুপুঙ্খ আইনী নিরীক্ষাকে সন্তুষ্ট করা যাবে। কেন্দ্রসরকার কি পারবে তার এখনকার বাজারমুখী পন্থাকে নিয়ে এগিয়ে চলতে না মৌলিক অধিকারের ধারণা যে স্বাস্থ্যপরিষেবার জন্য অপরিহার্য সেই দৃষ্টিভঙ্গীটি জারি করতে সুপ্রীম কোর্ট সক্ষম হবে? অদূর ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য পরিষেবায় অধিকারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের উত্তরের যথেষ্ট তাৎপর্য আছে।

টি. সুন্দররামন

Author

টি. সুন্দররামন ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেমস রিসোর্স সেন্টারের প্রাক্তন এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর (অধিকর্তা) এবং বর্তমানে তিনি পিপলস হেলথ মুভমেন্টের গ্লোবাল কোঅর্ডিনেটর। এই বিষয়ে যাঁরা সুপ্রীম কোর্টের হস্তক্ষেপের জন্য আবেদন করেছেন তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। 

(Bangla Translation by Sritama Halder)
অনুবাদঃ শ্রীতমা হালদার