অসম্ভবকে সম্ভবঃ ভারতের হিমালয় পর্বতাঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন ও জমি রাজনীতি সহন করা

28/03/2022
IiT English Page

উত্তরাখণ্ডের জমি সেখানকার রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। ২০১৮ সালে রাজ্য সরকারের জারি করা বিতর্কিত আইনটি অনুযায়ী এখন বহিরাগতরাও হিমালায় পর্বতাঞ্চলের এই রাজ্যে জমি কিনতে পারবেন। ২০১৮ সালে, এই আইনটির প্রচলনের সময় আমি এ বিষয়ে ভীম নামের একজন বয়স্ক নিম্নবর্ণের ব্যক্তিকে তাঁর মতামত জিজ্ঞাসা করি। আমরা তখন সবেমাত্র চাষের কাজে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের জন্য রাজ্যের ভর্তুকিতে পিভি প্যানেল স্থাপন করতে অনুরোধের উদ্দেশ্যে পরিচালিত অক্ষয় সুর্য (সৌর শক্তি)-এর উপর একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছি।    

ধাপ চাষের জন্য তৈরি করা মাঠের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভীম বলেছিলেন, “আমার কাছে কেন ওরা জমি চাইছে? জল-জঙ্গল-জমি সবই ঠাকুরদের (উচ্চবর্ণ) সম্পত্তি। উনি (এডিও) বলেন যে জলবায়ুর অবস্থা বদলে যাচ্ছে আর এই পদক্ষেপগুলো সেই ব্যাপারে সাহায্য করবে। কিন্তু প্রকৃতির আসল জল আর বায়ুতে কি বদল হচ্ছে? আমরা এখনও জীবনধারণের জন্য ঠাকুরদের খামখেয়ালীপনার উপর নির্ভর করে আছি। যাই বদলে যাক না কেন, আমার জীবনকে তো তা কোনভাবেই প্রভাবিত করছে না। আর এখন ওরা আমাকে খাবারের বদলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে বলছে? না, ধন্যবাদ”। 

ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর যে বিবৃতি অনুযায়ী হিমালয় পর্বতাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, ভীমের উদ্বেগ সেই অবধি পৌঁছয় না। এবং সরকারী, বেসরকারী ও অলাভজনক সংস্থাগুলির দ্বারা পরিচালিত দুর্বলতার মূল্যায়নেও এই উদ্বেগকে যথেষ্ট জায়গা দেওয়া হয় না। দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামাঞ্চলের পরিবারগুলি অসংখ্য ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার (বর্ণ, লিঙ্গ, শ্রেণী ও ধর্ম) সঙ্গমে বাস করেন। এই পরিবারগুলি প্রতিনিয়ত যে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে তা সম্পর্কের যে জটিল জাল ক্ষমতাবিন্যাসের দীর্ঘস্থায়ী অসাম্যকে বহন করে চলে তার ভিতর থেকেই উঠে আসে। গ্রামীণ উত্তরাখণ্ডে যে সামাজিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকে সমানভাবে নিপীড়িত করছে, জলবায়ু ও সমাজের পরিবর্তনশীল পারস্পরিক সম্পর্কের টেকনো-ম্যানেজারিয়াল সমাধান প্রতিনিয়ত সেই ঐতিহাসিক আঘাতের সাক্ষী হচ্ছে। ভীমের পরিবার আসলে সেই অগ্নিপরীক্ষার আধার যার অভ্যন্তরে এগুলি ঘটে চলেছে।     

২০০০ সালে উত্তরাখণ্ড আলাদা রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সমতলের বাসিন্দাদের হাতে শোষিত হওয়া নিয়ে দীর্ঘকালীন আঞ্চলিক উদ্বেগ থেকেই আলাদা রাজ্যের দাবীতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৯০-এর দশকে যে হিংসাত্মক প্রতিবাদের ঘটনাগুলি ঘটেছিল তার ফলে এই আন্দোলন আরো জোরদার হয় ও বর্ণভিত্তিক সংরক্ষণ আইন নিয়ে উচ্চবর্ণের দুশ্চিন্তা তাকে আরও তীব্র করে তোলে। তবে, জীবিকা, জমি ও উন্নয়ন – আন্দোলনের এই তিনটি বিষয় – এখনও অধিকাংশ পরিবারের কাছে গুরুতর চিন্তার বিষয়। হিমালয় অঞ্চলের উত্তরাখণ্ডে জমি বহু কল্পনার যোগফল।  

অভাবনীয় “ভঙ্গুরতা” ও “বিপজ্জনকতার” আখ্যান নির্মাণ করতে এই “সম্ভাব্য বিপদের দেশ” বহিরাগতকে অভ্যর্থনা না করার ঔপনিবেশিক কৌশলের সঙ্গে থিয়োরি অফ হিমালয়ান ডিগ্রেডেশান (টিএইচইডি)-এর পরিবেশ নিয়ে পরিমাণবাদী উদ্বেগকে মিলিয়ে দেয়। চরম বিপর্যয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করতে এই রকম স্থানিক ব্যতিক্রমকে কেন্দ্র করে হিমালয়ের পরিবেশগত পরিবর্তনের সমসাময়িক বর্ণনাগুলি নির্মিত হয়।

দেশের ভৌগোলিক পরিসরের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য রক্ষাপ্রাচীর হিসেবে হিমালয়ের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও আধুনিক রাষ্ট্রের সাম্প্রতিকতম ভূ-রাজনৈতিক আশঙ্কা – এই দুই দিকই “অশান্ত সীমানা প্রদেশ” – এই বর্ণনাতে প্রতিধ্বনিত করে।   

পর্বতাঞ্চল ও সমতলের মধ্যে শোষণমূলক সম্পর্ক প্রতিফলিত হয় “নিষ্কাশনক্ষম সীমান্ত অঞ্চল” বিবরণে। ঔপনিবেশিক কালে এর অর্থ ছিল কাঠ ও মানবশ্রম আহরণ, কিন্তু উপনিবেশ-পরিবর্তী ভারতে খনি, বাঁধ ও বাণিজ্যিক উদ্যানপালনের মত বিষয়ও উঠে এসেছে। এর ফলে, সমতলের শিল্পের লোলুপ যন্ত্রের ক্ষুধা মেটাতে সুবিশাল পরিমাণের জমির “বলিদান” করা হচ্ছে।   

এবং সব শেষে, “হিন্দুদের পবিত্র ভূমি” হিসেবে এই অঞ্চল অসংখ্য তীর্থস্থানের পৌরাণিক ও জাগতিক প্রভাব ছড়িয়ে একটি আঞ্চলিক হিন্দু স্বদেশের ধারণাকে আহ্বান করা হয়। এই ধারণাতে জাতীয় সার্বভৌমত্বকে বিপদে ফেলতে সীমান্তের ওপার থেকে আসা হুমকির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠকেন্দ্রিক রাজনীতি যা প্রধানত রাষ্ট্রের উচ্চবর্ণের হিন্দুদের উদ্বেগে সাড়া দেয়।

তাহলে কি ভাবে জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনশীল বাস্তবতার সঙ্গে জমি সম্পর্কে এই ভিন্ন ভিন্ন ধারণা জড়িয়ে পড়ে? এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয় অতিরিক্ত শিলাবৃষ্টি, তুষার বা বৃষ্টিপাতের ক্রমবর্ধমান  ঘটনা, জমিতে সার দেওয়ার সময়ে বদল, প্রতি দশকে শীতকালে তুষারপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া, অস্থির বর্ষাকাল। উপরন্তু, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অন্তর্নিহিত ঐতিহাসিক অসাম্যকে এই যোগাযোগগুলি কি ভাবে প্রশ্ন করে বা পুনর্গঠন করে

প্রথমত, ট্রান্সহিউম্যান্স থেকে ট্রান্সলোকালিটিতে (অর্থাৎ, একটি জায়গার উপর তার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য একটি জায়গার কোন অবস্থা বা ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রভাব) পরিবর্তন। পালিত গবাদি পশু সহ একটি চারণভূমি থেকে আরেকটি চারণভূমিতে, যা অনেক সময়ই যৌথসম্পত্তি, মরসুমি পরিযাণ বা ট্রান্সহিউম্যান্স বহুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। স্থানীয় উদ্ভিদদের উপর শীতকালের তুষারপাতে হ্রাস ও তাপমাত্রার বৃদ্ধির নানা প্রভাবের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী বুগিয়ালের (শিকার বা চারণের জন্য ব্যবহৃত উন্মুক্ত তৃণভূমি) সামরিকীকরণ, জীবনযাত্রার ক্রমপরিবর্তনশীল আকাঙ্ক্ষা, উচ্চতম স্তর থেকে সংরক্ষণ নীতি/প্রকল্পের নির্ধারণ ও পরিচালনা, পর্যটনশিল্পের প্রসার ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এখানকার পরিবারগুলির মনোযোগ পার্বত্য অঞ্চল থেকে সমতলের দিকে সরে যাচ্ছে। তরুণবয়স্ক অভিবাসীরা তাঁদের শিক্ষা, টেলিযোগাযোগ ও অবকাঠামো বিষয়ক সক্রিয়তা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে হরিদ্বার আর হলদোয়ানির মত ব্যস্ত শহরগুলির কাছাকাছি শিল্পকেন্দ্রগুলির মূলধন ও শ্রমজালের অংশ হয়ে উঠেছেন। গ্রামের পরিবারগুলি অনেক সময়ই এই যোগাযোগের সূত্রগুলির সুবিধা নিয়ে তাঁদের পৈতৃক জমি বিক্রি করে বিদ্যালয় ও কলকারখানার কাছাকাছি বসতি স্থাপন করেন ও ভারতের অন্যান্য অংশ আর অন্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সঙ্গে জায়গার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন। আসন্ন জলবায়ুর মতই, এই সাময়িক গৃহস্থালীগুলিও এখন অনেকটাই অনিশ্চিত এবং অনিয়মিত কাজের কমাবাড়া, এনআরজিএ-র পারিশ্রমিক এবং শিল্পের দালালদের খামখেয়ালের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। পার্বত্য গ্রামগুলিতে হাজার হাজার একর কৃষিযোগ্য জমি “পরিত্যক্ত” অবস্থায় পড়ে আছে যাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে এই নতুন গৃহস্থালীর আকাঙ্ক্ষার দ্বারা।  

দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির হাত ধরে একটি আঞ্চলিক হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদেরও উত্থান হচ্ছে। এই রাজ্যের স্বাতন্ত্রসূচক উচ্চবর্ণের জনগোষ্ঠী, বিভিন্ন তীর্থস্থানের পবিত্র ভৌগোলিক অবস্থান ও উত্তর প্রদেশ থেকে বয়ে আসা “প্রেম ও জমি জিহাদের” রূপ নিয়ে একটি উৎকট ইসলামবিদ্বেষের উপর নির্ভর করেই এই উত্থান ঘটছে। এই স্থানীয় হিন্দুত্বের কারণে বর্ণ ও ধর্মের ভেদাভেদ গভীরতর হয় উঠছে। এর অবসরে একটি ব্যস্ত জমির বাজারও তৈরি হয়েছে। এই রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় উচ্চবর্ণের যুবকরা জমির দালালের কাজ করছেন এবং সমতলের ধনী উচ্চবর্ণের পরিবারগুলিকে প্রচুর জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। আপাতদৃষ্টিতে এই প্রক্রিয়াগুলির উদ্দেশ্য হল, অর্থনৈতিক ও আদর্শগত দুইয়ের সংমিশ্রণে এই অঞ্চলের বাতাবরণের উন্নতিসাধন। আধ্যাত্মিকতা, জাতীয়তাবাদ ও পুঁজীবাদের রোমাঞ্চকর মিশ্রণের প্রতিনিধি বাবা রামদেবের মত ব্যক্তিত্বের প্রতিও এঁদের গভীর ভক্তি। নব্য উদারনৈতিক হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণে রত পতঞ্জলীর মত “স্বদেশী” সংস্থাগুলিকে এঁরা চুনাপাথর, ওষধি গাছগাছড়া এবং বালি ইত্যাদি কাঁচামাল সরবরাহ করেন। এবং সেই রাষ্ট্রেই বন গুজ্জরের মত মুসলিম ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়দের হাত থেকে তাঁদের পরম্পরাগত চারণভূমি কেড়ে নেওয়া হয়।     একই সময়ে, নমঃশুদ্র (এসসি) পরিবারগুলিকে জমির ব্যবহার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে দেওয়া হচ্ছে এবং তাঁদের যে সামান্য জমি আছে বাজার মূল্যের থেকে অনেক কম দামে তা বিক্রি করতে বা ইজারা দিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ভূমিক্ষয়, প্লাবনভূমিতে জনবসতির প্রসার, এগ্রোইকোলজির পরম্পরাগত চর্চাকারীদের হাত থেকে দায়িত্ব কেড়ে নেওয়ার মত কাজে সাহায্য করে জমির মালিকানা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই জাতীয় পরিবর্তন পরিবার ও সম্প্রদায়কে জলবায়ুর বিকারের সামনে অসুরক্ষিত করে তুলছে। এর সঙ্গে সঙ্গে, এই জাতীয় পরিবর্তনের ফলে আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলির হাত থেকে তাঁদের মৌলিকতম সম্পদটি চলে যাচ্ছে ও তার ফলে এই পরিবারগুলি দেবভূমির উপর তাঁদের বৈধ জাগতিক দাবীর অধিকার হারাচ্ছেন।       

তৃতীয়ত, “পরিবেশগতভাবে ভঙ্গুর” হিমালয় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি বিপজ্জনক স্থল হিসেবে মনোযোগের কেন্দ্রে আসায় অভিযোজন সংক্রান্ত বিতর্ক, নীতি ও তার প্রয়োগের মধ্যে থেকে সংযোজন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত পরষ্পরবিরোধী বিষয় উঠে আসছে। জলবায়ু ও সমাজের পরিবর্তনশীল সম্পর্কের জবাবে এখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা ও অভ্যাসে অনেকগুলি বদল আনান হয়েছেঃ শীতকালীন গমের মত তুষারকেন্দ্রিক শস্যের চাষ কমান, সবজি ফলানর জন্য পলি হাউসের ব্যবহার, বেশ কিছু শস্য নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে রোপণ, ক্রমবর্ধমান ঝড়ের আঘাত সহ্য করার জন্য ছাদ তৈরির কৌশলে বদল এবং স্থানীয় খাদ্যাভ্যাসে নতুন প্রজাতির ফল ও ফুল যোগ করা ইত্যাদি। তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে সরাসরি সম্বোধনে অগ্রাধিকার দিতে ব্যর্থ হওয়ায় “বিশেষজ্ঞরা” অনেক সময়ই এই প্রতিক্রিয়াগুলিকে তিরস্কার করে থাকেন।         এখানকার বাসিন্দাদের ফলের বদলে সবজি চাষের সরে আসা ঘটনাটি ক্রমশ বেড়ে চলা বসন্তকালীন শিলাবৃষ্টির প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি বাজারের চাহিদা, আঞ্চলিক এবং জাতীয় কর্মপন্থা, সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় পরিচিতিকেন্দ্রিক বিবাদ এবং নাগরিক সমাজের নানা অভিনেতার আকাঙ্ক্ষার মত বিষয়েরও প্রতিক্রিয়া। টেকনো-ম্যানেজারিয়াল নির্মাণের পরিধিতে, এই ধরনের গ্রামীণ অভিযোজন “বিশৃঙ্খল” ও কঠোর অভিযোজনের হস্তক্ষেপ মেনে নিতে নারাজ বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু, যখন আমরা রাষ্ট্রকে আখ্যানবস্তু হিসেবে ধরি, তখন এই বাস্তবতা একেবারেই অন্যরকম হয়ে দাঁড়ায়। সারা রাজ্য জুড়ে জলবিদ্যুৎ ও অরণ্যায়ণের সঙ্গে জড়িত পরিচ্ছন্ন উন্নয়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কর্মপন্থা সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলি আন্তর্জাতিক কার্বন ম্যানেজমেন্টের নির্দিষ্ট অংশ পূরণ করার পাশাপাশি অস্থির সীমান্ত অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি সুরক্ষিত করতে রাষ্ট্রকে সহায়তা করে। উপরন্তু, উত্তরাখণ্ড স্টেট অ্যাডাপ্টেশান প্ল্যানের মাধ্যমে পর্যবেক্ষিত জলবায়ুর পরিবর্তনের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করার জন্য বিজ্ঞান ও বাজার সম্বন্ধীয় নানা পন্থাকে ব্যবহার করা হয়। বিশ্বব্যাপী কার্বন ম্যানেজমেন্ট এবং নব্য উদারপন্থী রাষ্ট্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনে এগুলি অনেক সময়ই (ইচ্ছাকৃতভাবে) অসাবধানতাবসত গ্রামবাসীদের এই অভিযোজনের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দেয়।      

উত্তরাখণ্ডের জলবায়ু ও সমাজের মধ্যে পরিবর্তনশীল সম্পর্কের সঙ্গে ঐতিহাসিক ক্ষমতার সমাবেশ যা জমির ব্যবহার ও মালিকানার বস্তুগত ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে নির্ধারণ করে তা অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। উত্তরাখণ্ডের ভূমি ভিন্ন ভিন্ন কল্পনা থেকে উঠে এসেছে এবং এই কল্পনা জলবায়ু-সমাজের মধ্যে সম্পর্ক এবং ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং পুঁজিবাদী প্রক্রিয়ার উত্থানের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কিছু নির্দিষ্ট আঞ্চলিক বাস্তবতার জন্ম দেয়। অ্যানথ্রোপোসেন (যে সময়কালে মানুষের নানা কাজকর্ম ও হস্তক্ষেপের কারণে প্রকৃতি, জীবজগৎ ও আবহাওয়ায় নানা পরিবর্তন এসেছে) এই রাজ্যে কিভাবে প্রকাশ পেয়েছে এবং ভীমের পরিবারের মত আর্থসামাজিক পরিসরে সব থেকে পিছিয়ে থাকা বাসিন্দাদের জীবনের অনিশ্চয়তাকে আমরা কিভাবে সম্বোধন করতে পারি তা বোঝার জন্য এই ধরনের বাস্তবতা যা আসলে এই পরিবর্তনশীল পরিবেশগত সূচকগুলির উপর মনোযোগের পরিধি অতিক্রম করে যায় তা নিয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। 

ঋতধী চক্রবর্তী

Author

ঋতধী চক্রবর্তী আওতেয়ারোয়া নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান জিওগ্রাফির লেকচারার। 

(Bangla Translation by Sritama Halder)
অনুবাদঃ শ্রীতমা হালদার