লড়াই-এর সঙ্গে সহাবস্থানঃ বম্বে চলচ্চিত্রের জন্য প্রেম ও শ্রম

26/04/2021
IiT English Page

বম্বের চলচ্চিত্র দুনিয়ার যদি কোন মূল উপাদান থেকে থাকে, তা যে তীব্র অনিশ্চয়তা সে বিষয়ে সব ঐতিহাসিকই সম্ভবত এক মত হবেন। বাণিজ্যিকভাবে শক্তিশালী এবং সারা বিশ্বেই স্বীকৃত এই চলচ্চিত্রের ধারা যাকে আমরা এখন বলিউড বলে সম্বোধন করি তার যাত্রা শুরু করেছিল যে সময়ে তখন ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন চলছে। এই নতুন আর অনিশ্চিত উদ্যোগকে তখনকার কোন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ছুঁতে পর্যন্ত প্রস্তুত ছিল না এবং খুব কম সংখ্যক মানুষই এই নিষিদ্ধ কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হয়ে দুর্নামের ভাগী হতে চাইতেন। তা সত্ত্বেও, ১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়েই বম্বে চলচ্চিত্র শিল্পের একটি চলিষ্ণু নির্মাণ-ভূমি হয়ে ওঠে। গড়ে ওঠে চলচ্চিত্রের এমন একটি পরিবেশ যার শিকড় ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। ১৯৩১ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে দুই হাজারের বেশি “স্ববাক ছবি” বা “টকি” তৈরি হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে অন্তত চল্লিশ হাজার মানুষ আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছিলেন। এই সময়েই একটি সম্পূর্ণ নতুন ঐতিহাসিক চরিত্র মঞ্চে প্রবেশ করে। তা হল, “লড়াকু উচ্চাকাঙ্খী ব্যক্তিত্ব” বা “স্ট্রাগলার”।

মুম্বাইতে “স্ট্রাগলার” শব্দটির এমন একটি নির্দিষ্ট অর্থ আছে যা ভাষার নাগরিক ব্যবহারের বিশেষ অংশ হয়ে উঠেছে এবং “বোম্বাইয়া” নামে এই নগরের যে নিজস্ব দোআঁশলা শব্দভাণ্ডার আছে তাতে জায়গা করে নিয়েছে। মুম্বাইতে লড়াই করার অর্থ ছবিতে কাজ পাওয়ার সেই অধরা “বিগ ব্রেক” বা “বড় সুযোগের” জন্য ধাক্কাধাক্কি করে এগিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। একজন স্ট্রাগলার আসলে একটি বিশেষ সামাজিক চরিত্র যার একমাত্র উচ্চাকাঙ্খা হল ছবিতে নাম করা কিন্তু যার এই ব্যবসার ভিতরে যারা কাজ করেন তেমন মানুষজনের সঙ্গে কোন যোগাযোগ বা অন্য কোন রকম সামাজিক জনসংযোগ নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই স্ট্রাগল একাধারে সেই অনিশ্চয়তার প্রতিক্রিয়া ও লক্ষণ যা আজও মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিকে চিহ্নিত করে চলেছে।     

১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ফিল্ম ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত কাজের সুযোগ পাওয়ার জন্য দেওয়া বিজ্ঞপ্তি

১৯৩০-এর দশকে, চলচ্চিত্রের সমস্ত রাস্তাই বয়ে যেতে শুরু করেছিল বম্বের দিকে। ছবির দুনিয়ায় কাজ করে নামযশ পাওয়ার জন্য নানাবিধ চেহারার শত শত উমেদার নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করতে এই শহরে হাজির হয়। এ ছিল এক বিস্ময়কর ঐতিহাসিক ঘটনা – এর আগে কোন গণশিল্পমাধ্যম এই ভাবে শত শত কর্মীকে আকর্ষণ করে নি, তাও আবার এমন জিনিসের সন্ধানে যা ছিল টাকাপয়সার আকর্ষণের চেয়ে বিমূর্ত। নিদারুণ বেকারত্ব দিয়ে চিহ্নিত সেই আমলে চলচ্চিত্র জগতের প্রতিশ্রুতি ছিল প্রচুর রোজগারের সুযোগ আর তার সঙ্গে সঙ্গে খ্যাতি ও সৃজনশীল পরিপূর্ণতা। চলচ্চিত্রের মত প্রযুক্তিবিদ্যার নব্যতম প্রতীকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেকে আধুনিক বলে প্রমাণ করার এবং ব্যক্তির আকাঙ্খার রোমান্টিক অভিব্যক্তিকে প্রকাশ করার সুযোগও করে দিয়েছিল এই মাধ্যম। স্ট্রাগলার, খ্যাতিলাভের স্বপ্নই ছিল যার একমাত্র হাতিয়ার, তারা “এসেছিল সব জায়গা থেকে। শ্রীনগরের উচ্চতা থেকে। মাদ্রাজ, দিল্লী, পাঞ্জাবের উষ্ণতা থেকে আর ভারতের চতুর্দিক থেকে” (জাবাক, ফিল্ম ইন্ডিয়া, সেপ্টেম্বর, ১৯৪০)। এই অবিচ্ছিন্ন জনপ্রবাহ এতটাই চমকপ্রদ ছিল যে সাংবাদিকরা এই অস্বাভাবিকতার নামকরণ করেন “চলচ্চিত্র উন্মাদনা” বা “মুভি ম্যানিয়া”।  আর বাবা-মায়েরা চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রপত্রিকায় তাঁদের ছেলেমেয়েদের বাড়ি ফিরে আসতে অনুরোধ জানিয়ে মর্মস্পর্শী চিঠি লিখে চলেন।  

নিরুদ্দিষ্ট ছেলের খোঁজে উদবিগ্ন বাবা-মায়ের দেওয়া একটি বিজ্ঞপ্তি

যারা চলচ্চিত্রের ভক্ত থেকে নিজেদের এই জগতের কর্মী হিসেবে পুনঃনির্মান করেছেন, আমি আমার বম্বে হাস্‌লঃ মেকিং মুভিজ ইন আ কলোনিয়াল সিটি নামের নতুন বইতে তাদের আশাআকাঙ্ক্ষার উপরই বেশি মনোযোগ দিয়েছি। এই ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত শ্রমিকদলকে সমাজের ভিতর থেকেই বারংবার সংগঠিত করে নেওয়ার যে ক্ষমতা চলচ্চিত্র শিল্পের আছে, ভক্ত থেকে কর্মীতে পরিণত হওয়া এই গোষ্ঠীর মধ্যেই সে ক্ষমতা স্পষ্ট হয়। বিশ্ব জুড়ে মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির সংগঠন এবং কার্যকলাপের আঁচও এর থেকে পাওয়া যায়। প্রাথমিক অবস্থায়, বম্বের চলচ্চিত্র শিল্পে মূলধনের প্রবল অভাব ছিল এবং ছবি তৈরির জন্য টাকাপয়সার সংস্থান করা ছিল দৈনন্দিন সমস্যা। এই আর্থিক অপ্রতুলতার কারণেই, ঠিক এই সময়, স্ট্রাগলারের ঐতিহাসিক আবির্ভাব সম্ভব হয়। বম্বের বিখ্যাত প্রযোজকদের মধ্যে অনেকেই অসংখ্য দৈনিক মজুর, স্টান্টের কাজে নিযুক্ত শিল্পী, লাইটবয় এবং অস্থায়ী অভিনেতা বা এক্সট্রাদের কাজের অনিশ্চয়তার উপর নির্ভর করে নিজেদের অর্থনৈতিক ঝুঁকি সামলাতেন। আজ এই প্রান্তিক কর্মীরা সবাই বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছেন। এই স্ট্রাগলাররা একদিন খ্যাতিলাভে করবেন বলে স্বপ্ন দেখতেন। এই আকাঙ্খার কারণেই উদ্‌বৃত্ত শ্রমিকে শহর ঢেকে গিয়েছিল। কাজ শেষ হলেই খারিজ করে দেওয়া যায় এমন গোষ্ঠীর নিরবিচ্ছিন্ন স্রোতকে ভিত্তি করে এই ভাবেই তৈরি হয় এক জনপ্রিয় এবং প্রাণবন্ত চলচ্চিত্র শিল্প।    

 

বম্বে হাস্‌ল বই-এর প্রচ্ছদে ব্যবহৃত অচ্ছ্যুৎ কন্যা (১৯৩৬) ছবির শুটিং-এর প্রযোজনা চিত্র। 

বলিউড এক বহু কোটি টাকার ইন্ডাস্ট্রির একত্রিত সমাবেশ যাকে সম্ভবত সব সময়ই ঝকঝকে আর চটকদার বলে মনে হয়। সংবাদমাধ্যমগুলি তারকা এবং ছবির জগতের অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের উপরই মনোযোগ দেয়। বলিউড নিয়ে যে নেতিবাচক খবরগুলি বেরোয় এমনকি সেগুলিও খ্যাতনামাদের ব্যক্তিগত জীবনেই সীমাবদ্ধ থাকে। স্ট্রাগলার বা ছবির জগতে নামযশের আকাঙ্ক্ষা যাদের আছে তাদের উপর এই মনোযোগ সরিয়ে আনলে, প্রেম ও শ্রমের যে অলিখিত রূপ আমরা দেখতে পাব তাই আদতে এই ইন্ডাস্ট্রিকে ভাসমান রাখে। এবং স্ট্রাগলারদের শুধুমাত্র অবস্থার সরল শিকার বা বীর হিসেবে না দেখে, আমাদের উচিত তাদের দেখা দুরূহ আকাঙ্ক্ষায় ভরা একটি জটিল গোষ্ঠী হিসাবে। এবং তাদের এইভাবে দেখার উপরেই আমি জোর দিতে চাই।    

একজন অল্পবয়সী ব্যক্তি ক্ল্যাপার বোর্ড হাতে রোদে দাঁড়িয়ে পরের শটের জন্য অপেক্ষা করছে। ইজ্জৎ (১৯৩৭) ছবির শুটিঙের সময় নেওয়া আলোকচিত্র। স্থিরচিত্র সৌজন্যে, যোসেফ উইয়ারশিং আর্কাইভ/আলকাজি কালেকশন অফ ফোটোগ্রাফি।

ছবির জগতে নাম করা আর টিঁকে থাকার এই লড়াই নিয়ে প্রথমেই আমাদের যা বুঝতে হবে তা হল যে, লড়াইটি নিরিবিচ্ছিন্ন। যদিও খ্যাতির স্বপ্ন যে ভবিষ্যতে সফল হতেই পারে তার প্রমাণ দেওয়ার জন্য সাফল্যের সত্য ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরা হত উপর (যেমন, সুলোচনার কাহিনী। ১৯৩০-এর দশকের সুবিখ্যাত তারকা সুলোচনা একদা ছিলেন টেলিফোন অপারেটর), খুব কম সংখ্যক নামযশের উমেদারই খ্যাতি আর প্রতিষ্ঠার এই উচ্চতায় পৌঁছতে পারত। অন্য অনেকের জন্যই এই লড়াইটা ছিল বিরামহীন। হতাশা এবং প্রত্যাখ্যান ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কিন্তু তবুও, কাস্টিং ডিরেক্টর নন্দিনী শ্রীকেন্ত যেমন বলেন, এরপরও স্ট্রাগলারের কাজ “সকালে ঘুম থেকে ওঠা, দিনের পর দিন লড়াই চালিয়ে যাওয়া”। এই লড়াই তাই এমন একটা আশ্চর্য অস্থায়ীত্বের দ্বারা চিহ্নিত ছিল যা ছিল সন্দেহাতীতভাবে ভবিষ্যৎমুখী কিন্তু, একই সঙ্গে, দৃঢ়ভাবে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত।   

সুলোচনা, আগের নাম রুবি ম্যেরস, ছিলেন নির্বাক যুগের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তিনি সবাক ছবির যুগেও সমানভাবে সফল হয়েছিলেন। চলচ্চিত্রে নামডাক পাওয়ার আশা নিয়ে যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা বারবারই বলেছেন যে সুলোচনার প্রতি ভালোবাসাই তাঁদের চলচ্চিত্র জগতে আসার কারণ। 

চলচ্চিত্রের দুনিয়ায় লড়াই জারী রাখার জন্য বিশেষভাবে জরুরি ছিল অপেক্ষা করতে শেখা। স্ট্রাগলার প্রমাণ করে যে অপেক্ষা মানেই নিষ্ক্রিয়তা নয়। বরং তা একটা বিশেষ ধরণের শ্রম। স্ট্রাগলার অপেক্ষা করে থাকে কখন তার ফোনের উত্তরে ফোন আসবে, কখন তার প্রতিনিধি কোনো সুখবর আনবে। ইতিমধ্যে, সে তার ভবিষ্যতের মাটি তৈরির জন্য অন্যান্য কর্তব্য করে চলে – পোর্টফোলিওর জন্য আরো ভালো প্রতিকৃতি তোলা, সিভি জমা দেওয়া নানা জায়গায়, ব্যায়াম ও শারীরিক কসরতের তালিম চালিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন স্টুডিওতে ঘোরাঘুরি করা আর পরিচিতি বাড়ানো। তা্‌ অপেক্ষা আসলে এই দুনিয়ায় টিঁকে থাকার জন্য নিরন্তর নানা কাজে ব্যস্ত থাকা, অন্য একটা জীবনের জন্য সদাসতর্ক আর তৈরি থাকা।  

ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম কোরিওগ্রাফার মাদাম আজুরির এই জগতে আকৃষ্ট হওয়ার কারণ ছিল তারকা সুলোচনার প্রতি তাঁর প্রগাঢ় অনুরাগ। স্থিরচিত্র সৌজন্যে, যোসেফ উইয়ারশিং আর্কাইভ/আলকাজি কালেকশন অফ ফোটোগ্রাফি। 

যেহেতু, অপেক্ষা আর প্রস্তুতি আসলে একটি নিরবিচ্ছিন্ন পদ্ধতি, তাই পুঁজিবাদের শেষ পর্যায়ের সঙ্গে স্ট্রাগলারদের যে সম্পর্ক তার ধরন কারখানা বা অফিসকর্মীদের থেকে অনেকটাই আলাদা। তাঁদের ক্ষেত্রে কাজ, অবসর এবং নিজের যত্ন নেওয়ার মধ্যে ফারাক খুবই ক্ষীণ। এই বিশ্বজোড়া পুঁজিবাদের গিগ ইকনমি (যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ফ্রিল্যান্স কর্মীদের স্বল্পমেয়াদী কাজের জন্য অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়) এই ঘটনা আমাদের খুবই বেদনাদায়কভাবে চেনা। আজকের দিনে, মুম্বাই শহরের অলিতে গলিতে, এই লড়াই বা স্ট্রাগল মর্যাদার চিহ্ন, এমন একটি সংকেত যার মর্ম বোঝার ক্ষমতা একমাত্র আছে এই সুবিশাল নতুন অনিশ্চিত জনগোষ্ঠীর। একটা ভিড়ে আর প্রতিযোগিতায় ভরা পরিবেশে টিঁকে থাকার দৈনিক যুদ্ধকে সম্মান জানানোর মাধ্যম হিসাবেই তারা এই সংকেতকে পাঠ করেন। এখনকার সাংস্কৃতিক কর্মীদের উচ্চাশায় বাধা দেওয়া হয়, যাকে অ্যাঞ্জেলা ম্যাকরোবি তাঁর বই বি ক্রিয়েটিভঃ মেকিং এ লিভিং ইন দ্য নিউ কালচার ইন্ডাস্ট্রিজ (পলিটি, ২০১৬) বলেন, “ক্রিয়েটিভিটি ডিসপোটিভ” তা প্রয়োগ করে।     

ক্রিয়েটিভ ডিসপোটিভ এক ধরনের মতাদর্শগত হাতিয়ার যার সাহায্যে চাকরীর নিরাপত্তা, কাজের নির্দিষ্ট সময় বা স্বাস্থ্য বীমার জন্য উচ্চাকাঙ্খী ব্যক্তির সৃজনশীলতাকে প্রতিরোধ করে অনিশ্চয়তা নির্মাণকে অনুমোদন, এমনকি, বৈধতা দেয়। তাই, যদিও আজকের দুনিয়ার গিগ ইকোনমিতে ফ্রিল্যান্স কাজ করাটা অনেক অফিসকর্মীর জন্যই আবশ্যক, কিন্তু যা আবশ্যক তাকে সজ্ঞানে নির্বাচন বলে ঘোষণা করাটা আসলে বিভ্রান্তিকর। ১৯৩০-এর দশকের ছবির জগতের স্ট্রাগলারের প্রেক্ষিতে এই ভাবনাগুলি নেড়েচেড়ে দেখলে, নিরাপত্তাহীনতাকে উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা বলে দাবী করে অনিশ্চয়তাকে স্বাভাবিক, এমনকি, রোমান্টিক করে তোলার জন্য একই রকম একটি প্রয়াস দেখা যায়। এই ভাবেই, বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিককার ছবির জগতের স্ট্রাগলার, আজকের দিনের তথাকথিত সৃজনশীল শিল্পের ক্ষেত্রে বিশেষ করে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা যে জনগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে তাদেরই ঐতিহাসিক পূর্বসূরী।

“নৃত্যশিল্পী, গায়ক, স্পট বয়, সাহায্যকারী, ক্যামেরাম্যান, এডি, প্রোডাকশান কন্ট্রোলার, লাইটম্যান” ইত্যাদি পদের জন্য আবেদনপত্র পাঠিয়ে নিজেদের আবেগকে অনুসরণ করতে আহ্বান করা হয়েছে। ২০২০ সালে, মুম্বাইতে চলচ্চিত্র শিল্পে যোগদানে ইচ্ছুক নবাগতদের জন্য দেওয়া বিজ্ঞপ্তি। ছবি তুলেছেন, অভিজিৎ মুকুল কিশোর।

যদিও আজকের বলিউড আন্তর্জাতিকস্তরে খ্যাতিলাভ করেছে, তা সত্ত্বেও, মুম্বাই-এর ছবির জগতের পরিবেশ অতিমারী থেকে রাজনৈতিক কুৎসা নিয়ে আজও একটি উদ্বেগের জায়গা। তা সত্ত্বেও, এই শহরের বাসিন্দা আর তাদেরকে স্বপ্নকে জায়গা দিতে মুম্বাই নগর যেমনভাবে বাড়তে থাকা সমুদ্রের জলস্তরকে তুচ্ছ করে কেবলি ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তেমনভাবেই, বম্বের চলচ্চিত্র জগতের কর্মীরাও তাদের টিঁকে থাকার লড়াইটাকে ছেড়ে চলে যায় না। সমস্ত স্তরের ছবির ভক্ত, অস্থায়ী অভিনেতা এবং কর্মচারীদের দৈনিক লড়াই আসলে এক ভঙ্গুর সময়ে বাঁচা ভঙ্গুর জীবনের উদ্দেশ্য বের করে আনার একটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রচেষ্টা। যেরকম অনড়ভাবে স্ট্রাগলাররা তাদের সমস্ত আশাআকাঙ্ক্ষা চলচ্চিত্র শিল্পের উপর ঢেলে দিয়েছে তা এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব সম্পর্ককে নিয়ে আবার ভাবতে বাধ্য করে এবং বম্বের ছবির জগৎ নিয়ে আমাদের অতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণতা বা খোলাখুলিভাবে এর কাঠামোগত পাঠে আমাদের যে উৎসাহ তাকে বিচলিত করে।  

দেবশ্রী মুখার্জি

Author

দেবশ্রী মুখার্জি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ মিডল ইস্টার্ন, সাউথ এশিয়ান অ্যান্ড অ্যাফ্রিকান স্টাডিজের (এমইএসএএএস) সহকারী অধ্যাপক। তিনি বম্বে হাস্‌লঃ মেকিং মুভিজ ইন এ কলোনিয়াল সিটি (কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০২০) বইটির লেখক।

(Bangla Translation by Sritama Halder)
অনুবাদঃ শ্রীতমা হালদার