ভারতের কোভিড-19 সংকটের সময় গতিশীলতা, শ্রম এবং শুশ্রূষা

21/06/2021
IiT English Page

কোভিড-19 সংকটের কারণে সেবামূলক শ্রমের ক্ষমতার সীমা আমাদের চোখের সামনে এসে গেছে। অনেক সময়ই সেবামূলক কাজকে নিরপেক্ষ বা পরিবার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে বর্ণনা করা হলেও, চিকিৎসা পরিষেবার দিক থেকে দেখলে, শুশ্রূষা বা রোগের সেবার সঙ্গে তার আবেগমূলক দিক, আমলাতান্ত্রিক নিয়মকানুন এবং সামাজিক নৈতিক দায়িত্বও জড়িত। এগুলি একত্র হলে তবেই চিকিৎসা সম্ভব হয়। শুশ্রূষার কাজে প্রতিদানও অনেক কম। এই সময়, যখন ভারত কোভিড-19 অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউ-এর সাথে লড়ছে এবং কিছু দিন আগেই ছিল আন্তর্জাতিক ধাত্রী দিবস, সেই সময় অতিমারীর কেন্দ্রে আছে এই জাতীয় শ্রম। ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে অতিমারীর প্রভাবকে প্রতিহত করতে রোগীর আত্মীয়স্বজন বা হাসপাতালের অসংখ্য কর্মী বা তার বাইরের পরিসরের বিশালসংখ্যক মানুষজন যে সেবামূলক কাজগুলি করে চলেছেন সেগুলির দিকে গভীর মনোযোগ দেওয়া দরকার।

অসংখ্য জায়গা থেকে শুশ্রূষার আশ্বাস পাওয়া যায় এবং সে কারণেই সেবামূলক শ্রমের অবস্থা এই রকম অনিশ্চিত। এই ঘটনা স্পষ্ট হয় যখন দেখা যায় যে, আপনজনের প্রয়োজনে অক্সিজেনওষুধ ও হাসপাতালের শয্যার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক পরিবার আবেদন করেছেন। যাঁরা অতিমারীর সময় সবাইকে সাহায্য করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তাঁরা সেবার নীতিমূলক দিকটিও সবার সামনে তুলে ধরলেও, তাঁদের এই প্রচেষ্টার জন্যই আমাদের ভাবা উচিত সেই নৈতিকতা কোন পারিপার্শ্বিকতার দিকে আঙুল দেখাচ্ছে।

ভারতের সরকারী হাসপাতালে ট্রমাটিক ইনজুরির শুশ্রূষা নিয়ে আমার গবেষণায় আমি লক্ষ্য করেছি যে চিকিৎসার সময় রোগী, তাঁর পরিবার ও স্বাস্হ্যকর্মীরা যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন রোগীর আঘাত” বা “ইনজুরি” তার একটি অংশ মাত্র। এই পরিস্থিতিতে আঘাতের শুশ্রূষাকেই মূল ও একমাত্র সমস্যা হিসাবে দেখা। কিন্তু সমস্যাটিকে আরো বিস্তৃতভাবে দেখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালে একটি শয্যার ব্যবস্হা করা যায় কি ভাবে? দুর্ঘটনার জায়গা থেকে রোগীকে শুশ্রূষার জায়গায় কে স্হানান্তর করবে? আত্মীয়রা কখন ও কোন শর্তে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে পারেনডাক্তাররা দিনের নির্দিষ্ট সময়ে এসে রোগীদের দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে তা ঠিক করেন। কিন্তু ধাত্রী ও অন্যান্য সেবাকর্মীরা ঘন্টায় ঘন্টায় নিয়মমাফিক বা তার বাইরেও প্রতিটি রোগীর কাছে যান, যাতে শুশ্রূষা তাঁদের রোগশয্যার পাশে পৌঁছে যায়। কোন জিনিসটি কখন প্রয়োজন, ও কোনটি ঠিক কখন বদলাতে হবে, সেগুলি রোগচিকিৎসার বিভিন্ন ধাপ। এই সজ্জা ও অদলবদল করার বিষয়টি অনেক সময়ই সেবামূলক শ্রমের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। “অতিমারী” আসলে এই বিভিন্ন ধাপের একটি জটিল ও সুসংবদ্ধ চলাচল এবং বুঝতে হবে যে এর পরিণতি অনিশ্চিত। 

উদাহরণ হিসাবে আমরা দেখতে পাই যে, সরকারী স্বাস্ব্যব্যবস্থার সঙ্গে এই ব্যবস্থার সুবিধা পাওয়ার অধিকারের সম্পর্ক পরিবর্তনশীল। লিঙ্গ, জাতি, শ্রেণীসম্প্রদায়ভিত্তিক পরিচয়ের সীমানা ধরে এই অধিকারের কমবেশি হয়। গ্রামীণ সমাজে অতিমারীর প্রভাব যত প্রলম্বিত হবে এই বিভাজন তত প্রবলতর হবে এবং বদলাতে থাকবে। সেবা পাওয়ার অধিকার চলনশীল শ্রমের সঙ্গে যুক্ত। আইন অনুযায়ী, অধিকাংশ সরকারী হাসপাতালই কোন রোগীকে ভর্তি করতে অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু, যদি ভেন্টিলেটর বা শয্যার মত বিশেষ প্রযুক্তি কোন হাসপাতালে না থাকে তাহলে উপায়ান্তর হিসাবে হাসপাতাল কর্মী রোগীকে কাছাকাছি কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে রোগীর পরিবারকে নির্দেশ দিয়ে থাকেন। কোভিড-19 অতিমারীর কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর অত্যাধিক চাপের ফলে রোগীর “শুশ্রূষা” আসলে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে সমস্ত শহর ও গ্রাম জুড়ে ওষুধ আর হাসপাতালে ফাঁকা শয্যার সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে “সুপারিশ” করারই সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময়ই, টিকা পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করাও এই ঘোরাঘুরির অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়।     

ইত্যবসরে, যে রোগীর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্থিতিশীল করার বা অন্যান্য জটিল লক্ষণের চিকিৎসার সময় চলে যায়। শুশ্রূষার কাজের ক্ষেত্রে রোগীর পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহায্যকারী  কাঠামো, যাকে খুব বেশি স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। কোভিড-19 আক্রান্তের লক্ষণ পরীক্ষা করার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগীকে হাসপাতালে দিতে হবে কিনা তা বোঝার চেষ্টা, কোন হাসপাতালে একটি শয্যা পাওয়া যাবে তা খুঁজে বের করা, চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর ভালোমন্দের খবর নিয়ে তা আত্মস্থ করা, কোন ধরনের চিকিৎসা কাজে দেবে তা বোঝার জন্য গুজব ও সত্যের মধ্যে তফাত করতে শেখা এবং অনেক সময় এই সংক্রমণের কারণে স্বজনমৃত্যুর তীব্র আঘাতকে সহ্য করার মত অনিশ্চিত সময়ে তাঁদের এই সেবামূলক কাজের ভূমিকা স্পষ্ট হয়। কোভিড-19 আক্রান্ত পরিজনের সেবা ও শুশ্রূষার শুরুতেই অধিকাংশ সময়  চলে যায় স্বাস্থ্য পরিষেবার ন্যূনতম সুবিধাটুকু আদায় করতে। অনেক সময়ই তা পরিবারের জন্য এক কঠিন লড়াইতে ও গোলকধাঁধায় হাতড়ে বেড়ানোতে পরিণত হয়।

যেহেতু কোভিড-19 আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখাশোনা করার জন্য সেবাকারীর কাজের জায়গা আর সময় দুটোই বদলে যেতে পারে তাই, এই কাজে যে সময় দেওয়া হয় তা অন্যান্য দৈনিক কাজের জন্য বরাদ্দ সময় থেকে বের করে নিতে হয়। রোগী বাড়িতে আছেন না হাসপাতালে আছেন সেই প্রেক্ষিতে যিনি রোগীর সেবা করছেন তাঁর দৈনিক কাজের ছন্দ ও দায়িত্ব দুই-ই বারবার বদলে যায়। এই রোগের লক্ষণের প্রায়ই অবস্থান্তর ঘটে যেখানে রোগীর সুস্থতার গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নগুলি কখনো খারাপের দিকে বা কখনো ভালোর দিকে যায় এবং তারপরে আবার খারাপের দিকে মোড় নেয়। এই অবস্থায় তাঁর প্রয়োজন নিয়ত সতর্ক প্রহরা। সেবাকারীর পক্ষে দৈনিক কাজের জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়া বা বাড়ির অন্যান্য কাজ করার জন্য সময় দেওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। প্রায়সয়ই, সংক্রমণের প্রভাব কমাতে, পরিবারের অসুস্থ সদস্যকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব বাকিদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। এই ঘটনা যে পরিবারের সদস্যরা ভারতেই থাকেন তাঁদের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনই যে পরিবারের সদস্যরা বিদেশে থাকেন তাঁদের ক্ষেত্রেও সত্য। দেশে তাঁদের পরিবারগুলির সহায়তা দিতে গিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসী জনগোষ্ঠী তুমুল চাপের মধ্যে পড়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপ করে আর ফোনে কথা বলে সমস্ত দিন আর রাতের প্রায় প্রতিটি ঘন্টা তাঁরা টিকার ওয়েবসাইট ঘাঁটছেন, অক্সিজেন জোগাড়ের চেষ্টা করছেন বা অসুস্থ প্রিয়জনকে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা দেখাশোনা করছেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। হাসপাতালের দরজার বাইরে থেকে হোক বা সমুদ্রের ওপার থেকে, পরিবারের সদস্যদের এই তত্ত্বাবধানের কাজ অতিমারীকেন্দ্রিক চলমান শ্রমের একটি অতিপ্রয়োজনীয় অথচ আশঙ্কাপূর্ণ দিক। এই শ্রমকে বুঝতে হবে কাজ হিসেবে এবং সেই কাজের মূল্যের প্রেক্ষিতে।

কোভিড-19 অতিমারীর সময় এই বিষয়গুলি আরো সামনে এসেছে।  এবং এর মধ্যে অনেকগুলি কাজ যে রোগীর পরিবার এবং হাসপাতালের উভয় তরফের দায়িত্ব তা স্পষ্ট হয়েছে। কোভিডের উপসর্গ নিয়ে কোন রোগী হাসপাতালে এলেই তিনি একদল হাসপাতাল কর্মীর মুখোমুখি হন। যে সমস্ত সমাজবিজ্ঞানী “ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক” নথিবদ্ধ করেন তাঁরা অনেক সময়ই ধাত্রী, আর্দালি, কেমিস্ট, ল্যাবের সহকারী, টেকনিশিয়ান থেকে শুরু করে সাফাইকর্মী ও করণিকের মত অসংখ্য কর্মচারী যাঁদের জন্য চিকিৎসা ও শুশ্রূষা সম্ভব হয় তাঁদের ভূমিকাকে অবহেলা করেন। এই কর্মচারীদের অবস্থা লিঙ্গ, শ্রেণী এবং জাতিগত পার্থক্যের বিষয়। এই স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীতে অবস্থান করলেও তাঁরা প্রত্যেকেই, সংগঠিত বা অসংগঠিতভাবে “শুশ্রুষা” ব্যাপারটি সম্ভব হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তাঁরা ভেন্টিলেশনের শক্তি প্রয়োজন মতো বাড়ানো বা কমানোর কাজ করেন, আইভি ড্রিপের দিকে খেয়াল রাখেন, সুপারিশের চিঠি আনানেওয়া করেন, রোগীদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দিয়ে ও নিয়ে আসেন এবং পথ্য ও খাবার তৈরি করে তা রোগীর সামনে দিয়ে আসেন। তাঁরাই অক্সিজেন ট্যাঙ্কের অক্সিজেনের স্তর নিয়ন্ত্রণ করেন, ওষুধের বিতরণ এবং বরাদ্দের কাজ করেন এবং ব্লাডব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকেন। তাঁরা মেঝে ধোয়াধুয়ি করেন, যন্ত্রপাতি পরিষ্কার রাখেন এবং এই অতিমারী যে বিশেষ ধরনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ দাবী করে সেই অনুযায়ী সমস্ত ভূমিতল জীবাণুমুক্ত করেন। তাঁরাই সম্পূর্ণ চিকিৎসাপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যান যাতে রোগী জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পারেন।  

চিকিৎসা পরিষেবার শ্রেণীনির্ভর বিন্যাসের জন্য অধিকাংশ সময়ই নিম্নপদস্থ বা জুনিয়র ডাক্তার ও নার্সদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগীর দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তাঁদের সর্বদা এক রোগশয্যা থেকে অন্য রোগশয্যায় ছুটে বেড়াতে হয়। সেই জন্য, তাঁদের সঙ্গেই রোগী এবং তাঁদের পরিবারের বারংবার গভীর যোগাযোগ তৈরি হতে পারে। তার ফলে এই জুনিয়ররা হয়ে ওঠেন তাঁদের বিশ্বাসের পাত্র যাঁরা রোগীর বিশেষ কোন প্রয়োজন নিয়েও কথা বলেন। যখন আর কেউ শুনতে চায় না বা পারে না তখন তাঁরাই রোগী এবং তাঁর পরিবারের সমস্ত বক্তব্য শোনেন। সরকারী হাসপাতালে যেভাবে কোভিড সংক্রান্ত শুশ্রূষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে তারপরে এঁরাই হয়ত, মানুষের দুই হাতের মত,‌ রাষ্ট্রের প্রকৃত সাহায্যকারী হয়ে উঠেছেন। তাঁদের শ্রমের আচ্ছাদনেই রোগীর হাসপাতালে থাকার সময়টুকু কাটে। সেই আচ্ছাদনের খানিকটা অংশ মৃত্যুর পরেও ছেয়ে থাকে। মৃতের পরিবার প্রিয়জন শেষ বিদায় জানাতে হাসপাতালে পৌঁছোতে না পারলে তাঁদের জন্য মর্গের কয়েকজন কর্মী অসংগঠিতভাবে “হোয়াটসঅ্যাপ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া” শুরু করেছেন। তবে শুশ্রূষার মূল্য আছে। ঘন ঘন রোগীর সংস্পর্শে আসার ফলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যেতে পারে। যখন পিপিই কিটের সরবরাহ কম ছিল তখন প্রায়সয়ই সবচেয়ে নিচুতলার স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সুরক্ষার সঙ্গে আপস করতে হয়েছিল এবং তার ফলে এই কর্মী এবং তাঁদের পরিবারেরই কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল। গতিশীল চিকিৎসার অর্থ ঠিক সেই সমস্যাটিরই সম্মুখীন হওয়া যার সমাধান করার চেষ্টা করছে ওই চিকিৎসাব্যবস্থা। 

ভারতে এবং অন্যত্র অতিমারীর একটি প্রধান দিক হল হাসপাতালের প্রচেষ্টার সঙ্গে তার বাইরের পরিসরে সমান্তরালভাবে চলতে থাকা শুশ্রূষার কাজ। টিকাদানকারী, আশাকর্মী, কোভিড পরীক্ষাকেন্দ্রের কর্মী এবং ছোঁয়াচ সন্ধানকারীরা এই অতিমারীর সময়ে একটি মূল্যবান পরিমাঠামো তৈরি করেছেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন সেই সমস্ত সাধারণ মানুষ যাঁরা কোভিড আক্রান্ত মানুষের কাছে জলখাবারের বন্দোবস্ত করছেন, লঙ্গর তৈরি করে খাবার রান্না করে পৌঁছে দিচ্ছেন এবং বাড়িতেই যাতে রোগীর সেবা করা যায় তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। অ্যাম্বুলেন্সচালকদের পাশাপাশি যে অটোওয়ালারা রোগী ও তাঁর পরিবারকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের জন্যও এই শুশ্রূষার কাজ সম্ভব হচ্ছে। তাঁদেরও কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তাঁদেরও অতিরিক্ত কাজের চাপ সহ্য করতে হয়। তাই তাঁদের অবদানকেও স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দেওয়া উচিত। 

গতিশীল শ্রমের প্রেক্ষিতে শুশ্রূষাকে দেখা শুরু করলে অসুস্থতাকেই ব্যাধির একমাত্র উৎস এবং চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হিসাবে দেখা কঠিন হয়ে যায়। কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনাকালে, অনেক সময়ই “প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু” সংক্রান্ত ধারণাটির সঙ্গে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি জড়িয়ে ফেলা হয়। এর পাশাপাশি, শুশ্রূষা যে সহায়তার আরো অন্যান্য দিক যা অসমক্ষ হলেও আসলে একটি পারস্পপরিক নির্ভরশীলতার চলমান শৃঙ্খল তার প্রেক্ষিতেও দেখা দরকার। অনেক সময়ই, অতিরিক্ত করের ভারে জর্জরিত চিকিৎসা পরিষেবার বিষয়ে আলোচনা করার সময় আমরা সেবামূলক শ্রম এবং তার প্রাপ্য প্রতিদানের কথা ভুলে যাই। এই কথাটি বিশেষ করে সত্যি সেই সময় যখন সাহায্যের অন্যান্য উপায় বা রিসোর্সে ঘাটতি দেখা দেয় ও সেবামূলক শ্রম তাতে ভারসাম্য আনে। হাসপাতালের ধাত্রী, টেকনিশিয়ান, আর্দালি, সাফাইকর্মী এবং মর্গের কর্মীদের কাজ এবং তার পাশাপাশি, শুশ্রূষা নিশ্চিত করতে এবং তার জন্য অর্থ জোগাতে রোগীর আত্মীয় পরিজনের যে উদ্যম তাকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এই কর্মী ও পরিবারের সদস্যদের ছাড়া হাসপাতালের নিরবিচ্ছিন্ন কাজের চাকা আটকে যাবে এবং রোগীদের জীবনদায়ী শ্বাস ও সহনের ক্ষমতা আরো বেশি করে বিপন্ন হবে।

নীতিনির্ধারকরা যখন অতিমারীর পরবর্তী সময়ে স্বাস্ত্যপরিষেবার সামর্থ্যকে আবার ঢেলে সাজানোর কথা বলেন, সেই আলোচনা অনেক সময়ই কেবলমাত্র টিকা এবং বস্তুগত পরিকাঠামোকে কেন্দ্র করে ঘটে। এগুলি অবশ্যই গুরুতর বিষয়। কিন্তু সদা চলমান থেকে যে সেবাকর্মীরা চিকিৎসার ব্যাপারটি সম্ভব করেন তাঁদের জন্য উত্তমতর ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করাও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্দেশ্যে নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে কিন্তু আসলে এই কর্মীরা যে সহায়তা প্রদান করেন তা আয়ত্তে এনে সেগুলিকে সুরক্ষিত করা কঠিন কাজ। শুধুমাত্র সাধারণ বা জেনেরিক সেবামূলক কাজই যে বিপদগ্রস্ত তা নয়, তার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের জীবনও বিপন্ন। জীবন এবং শ্রম দুই-ই অতিমারীর ক্ষয়ক্ষতির অংশ এবং উভয়ের মূল্য একই সঙ্গে খতিয়ে করা প্রয়োজন। হাসপাতালে একটি নতুন রোগশয্যা সহজেই যোগ করা যায়, কিন্তু সেই শয্যায় যে রোগী থাকবেন তাঁর সেবা করা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। মানুষই যে এই সংকটকালের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াকারী তা মনে রাখা আমাদের সমষ্টিগত কর্তব্য এবং টিকার অসামান্য টেকনোলজিকাল জাদুকরী ক্ষমতা এই কর্তব্য থেকে আমাদের মুক্তি দেয় না।   

হ্যারিস সলোমন

Author

হ্যারিস সলোমন ডিউক ইউনিভার্সিটির কালচারাল অ্যানথ্রোপলোজি অ্যান্ড গ্লোবাল হেলথের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। 

(Bangla Translation by Sritama Halder)
অনুবাদঃ শ্রীতমা হালদার