২০২০ সালের ১৫ জুন মাসে লাদাখের গালোয়ান অঞ্চলে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে চৈনিক সেনাবাহিনী অতর্কিতে আক্রমণ করে। দুই দেশের মধ্যে এই রকম প্রাণঘাতী লড়াই ঘটনা গত তিন দশকের মধ্যে প্রথম ঘটল, এবং গালোয়ানের এই খণ্ডযুদ্ধে অন্তত কুড়িজন ভারতীয় সেনা এবং অজানা সংখ্যক চৈনিক সেনা প্রাণ হারান। এই ঘটনাটি কি গোপনে তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থতার একটি উদাহরণ? এই জাতীয় ঘটনা ও সংকটের পরবর্তী সময়ে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক পদাধিকারিক ও রাজনৈতিক বিরোধীদলের দিক থেকেই সাধারণত হঠাৎ সামরিক আক্রমণের কারণ হিসেবে তথ্য সংগ্রহে অক্ষমতার অভিযোগ আসতে দেখা যায়। এই রকম অতর্কিত আক্রমণের মুখোমুখি হলে সাধারণত সরকারের প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় নিঃশব্দ থেকে তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থাগুলিকে ত্রুটির দায়িত্ব নিতে দেওয়া। গালোয়ান আক্রমণের ক্ষেত্রে, এই নিয়মের ব্যত্যয় হয় ও গুপ্ত তথ্য সংগ্রহের অক্ষমতার অভিযোগকে সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়। অতএব, আদৌ কোনও গুপ্ত তথ্য সংগ্রহের অক্ষমতা ছিল কিনা, একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নটি করা আশু প্রয়োজন। অন্যান্য পণ্ডিতদের বক্তব্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আমি বলব যে, গালোয়ানের অতর্কিত আক্রমণের কারণ তথ্য সংগ্রহের অক্ষমতা নয়, বরং সঠিক সময়ে সঠিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ায় ব্যর্থতা।
গালোয়ানের অতর্কিত আক্রমণের সঙ্গে কার্গিলের অতর্কিত আক্রমণের ঘটনার তুলনা করা যায়। ১৯৯৯ সালে পাকিস্থানের সেনাবাহিনী জঙ্গীর ছদ্মবেশে জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল অঞ্চলের একটি সুবিশাল অংশ দখল করে নেয়। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল ভারত যাতে ওই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ব্যবহার না করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। এই আক্রমণটি যে সম্ভব হয় তার কারণ হল, প্রতি বছর নিয়ম করে শীতের সময় আবহাওয়ার কারণে মৃত্যু এড়াতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ওই অঞ্চল থেকে সরে যায়। এই কারণে সেই বছর কোনও রকম প্রতিরোধ ছাড়াই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কার্গিল অঞ্চলকে দখল করে নেয়। এর ফলশ্রুতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি স্বল্পকালীন লড়াই, যাতে ভারতীয় সামরিক বাহিনী জয়লাভ করে। একই ভাবে, ২০২০ সালে, কোভিড-১৯ মহামারী সংক্রান্ত সতর্কতার কারণ দেখিয়ে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পোলিসের সঙ্গে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর বাৎসরিক কুচকাওয়াজটি পিছিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে লাদাখে চিনের সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যমূলক কার্যকলাপের উপর দৃষ্টি রাখা সম্ভব হয় নি। এর কিছু দিন পরেই গালোয়ান আক্রমণের ঘটনাটি ঘটে। শত্রুর “উদ্দেশ্য” সংক্রান্ত “নির্দিষ্ট তথ্য” দিতে না পারার জন্য গুপ্ত তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থাকে দোষ দেওয়া হয় এবং সেই জন্য তাদের ব্যর্থ বলে ধরে নেওয়া হয়। এই ধরণের সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যায় যে, তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থতা বা ভারতের কৌশলগত তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থার সীমাবদ্ধতার বিষয়ে কারোরই কোনও ধারণা নেই।
ভুল বোঝাবুঝি ও অপপাঠ
আব্রাম এন. শালস্কি এবং গ্যারি জে. শ্মিতের মত পণ্ডিতরা গুপ্ত তথ্যের ক্ষেত্রে ব্যর্থতাকে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করেন, “অবস্থাকে ভুল বোঝার ফলে একটি দেশের সরকার (বা সামরিক বাহিনী) এমন পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেন যেগুলি অসঙ্গত ও দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। যা ঘটেছে তা ওই সরকার বা সামরিক বাহিনীকে ব্যক্তিগতভাবে অবাক করে কিনা তা ঠিক ততটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ সরকার বা সামরিক বাহিনী ভুল পদক্ষেপ নিয়েছেন বা নিয়ে চলেছেন কিনা।” এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, গুপ্ত তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থতা তখনই ঘটে যখন সরকার কৌশলগত আবহাওয়াকে বুঝতে অক্ষম হন এবং এমন সব নীতি গ্রহণ করেন যা পরে সরকারের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। এই রকম অপপাঠের একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, ১৯৮০-র দশকে ভারত সরকার তামিল টাইগার্স-এর উদ্দেশ্যকে ভুল বুঝে কে মিত্র আর কেই-বা শত্রু তার মধ্যে ফারাক করতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে, শ্রীলঙ্কার বিষয়ে ভারতের গৃহীত নীতি যে শুধু তার স্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে প্রমাণিত হয় এমন নয়, পাশাপাশি তা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির হত্যারও কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন গোপন তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা অস্তিত্বই নেই, অর্থাৎ যদি কৌশলগত পরিবেশ সংক্রান্ত তথ্যের পাঠ সম্পূর্ণ সঠিক হয়, তখন অতর্কিত আক্রমণের মত ঘটনা আদতে উপলব্ধ তথ্য নিয়ে রাজনৈতিক ও সামরিক আধিকারিকদের পর্যাপ্ত ও উপযুক্তভাবে প্রতিক্রিয়ার অভাবের ফলাফল হিসেবে উঠে আসে।
“প্রতিক্রিয়াদানে ব্যর্থতা” – এই ভাবনায় বিশ্বাসীরা বলেন যে, অসতর্ক থাকার কারণ সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সাবধানবাণীর অনুপস্থিতি নয়,। পরিবর্তে, “সঠিক মূল্যায়ন ও যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত” নেওয়ার পর যে সতর্কবার্তা উচ্চারিত হয়, তার থেকেই ইঙ্গিত নিয়ে “প্রতিক্রিয়া” অর্থাৎ “একটি আক্রমণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানর জন্য নেওয়া পদক্ষেপের বিশেষ নকশা”-কে তৈরি করে নিতে হবে। আমার ইন্ডিয়া’জ ইনটেলিজেন্স কালচার অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক সারপ্রাইজেস নামের বইতে যেমন দেখিয়েছি, ভারতে যে বিশেষ রাজনৈতিক ও কৌশলগত সংস্কৃতির চর্চা হয়, তা নিবারণমূলক পদক্ষেপের কূটনৈতিক মূল্যের পরিবর্তে সংযম ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিচিতি নির্মাণ অনেক বেশি পছন্দ করে। এর ফলে ভারতের কৌশলগত গুপ্ত তথ্যের মূল্যায়নের গুরুত্ব অনেক কমে যায়, কারণ সামরিক নীতি শত্রুর অভিপ্রায় সম্পর্কে সঠিক এবং নির্দিষ্ট তথ্যের দাবি করে। বিশেষত, যখন অতর্কিত আক্রমণের ঠিক আগেই কোনও রকম ইতিবাচক কূটনৈতিক বিকাশ ঘটে, তখন নির্দিষ্ট তথ্য হাতে পাওয়া আরও বেশি প্রয়োজন। কার্গিল যুদ্ধের ঠিক আগেই পাকিস্তানে বাসযাত্রার মত একটি অভূতপূর্ব ঘটনার মধ্যে দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যে একটি সৌহার্দ্যমূলক প্রকল্পের সূচনা করেন। একই ভাবে, সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও, ২০১৮ এবং ২০১৯ সাল জুড়ে দুই দেশের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে পরিচালিত সম্মেলনগুলি থেকে মনে হয় যে, গালোয়ান লড়াইয়ের ঠিক আগে “ইউহান স্পিরিট”-কে ঘিরে এই দুই দেশের মধ্যের রাজনৈতিক আবহাওয়া যথেষ্ট আশাবাদীই ছিল। অনেক সময়ই, যখন রাজনৈতিক সম্পর্ক ইতিবাচক বলে মনে হয়, তখন ভারতের গুপ্ত তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থাগুলি শত্রুপক্ষের উদ্দেশ্য নিয়ে দ্ব্যর্থহীন প্রমাণের সরবরাহ করবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা করা হয়। বহু কারণে এই প্রত্যাশার পূরণ প্রায় অসাধ্য একটি কাজ।
প্রথমত, শত্রুপক্ষের দিক থেকে গোপনে তথ্য সংগ্রহ এবং যে কৌশলগত উদ্দেশ্য যে কোনও মুহূর্তে বদলে যেতে পারে সেগুলির উদ্ঘাটন করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। দ্বিতীয়ত, ভারতে গোপন সামরিক তথ্যের দায়িত্ব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (আরঅ্যান্ডএডাবলিউ), ভারতের পররাষ্ট্র সংক্রান্ত গুপ্ত তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিভক্ত। আরঅ্যান্ডএডাবলিউ তাদের সদস্যদের ইন্ডিয়ান পোলিস সার্ভিস (আইপিএস) এবং অন্যান্য আমলাতান্ত্রিক প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে সংগ্রহ করে এবং এর ফলে সামরিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত থেকে লক্ষ্যবস্তুর কৌশলগত বিশ্লেষণের কিছুটা ক্ষমতা আরঅ্যান্ডএডাবলিউ-র হাতে থাকে। ভারতের পররাষ্ট্র গুপ্ত তথ্যকেন্দ্রিক আমলাতন্ত্র তার পূর্বসূরী সংগঠন ইনটেলিজেন্স বিউরো (আইবি), যা এখন শুধুমাত্র দেশের আভ্যন্তরীণ গোপন তথ্যের জন্য দায়ী, তার থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকেই চেষ্টা করেছে পাকিস্তান ও চিনের বিষয়ে দীর্ঘস্থায়ী বিশেষ জ্ঞান সংগ্রহ করার। তবে, এই সংগঠন যে উচ্চতার বিশেষজ্ঞসুলভ জ্ঞান অর্জন করতে চেয়েছিল, ১৯৯০-এর দশক থেকে ত্রুটিপূর্ণ লোকবল পরিচালনা এবং সংকুচিত বাজেটের কারণে, তা সম্ভব হয় নি। তা সত্ত্বেও, এই সংগঠনের লক্ষ্য যেহেতু নীতি নির্মাণের একটি বৃহত্তর কৌশলগত পরিপ্রেক্ষিত, তাই সামরিক গুপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ, যা মূলত সামরিক বাহিনীর নিজস্ব দক্ষতা, সেই ক্ষেত্রে ব্যর্থতা কোনও ভাবেই তাদের দায়িত্ব নয়। ভারতীয় সামরিক বাহিনী, যাঁদের হাতে গুপ্ত তথ্য সবার শেষে এসে পৌঁছচ্ছে, তাঁরাই সামরিক বিশ্লেষণের জন্য সর্বাধিক দায়ী। এই বিশ্লেষণের অর্থ কৌশলগত গুপ্ত তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি, ওই সংগৃহীত তথ্যের সামরিক তাৎপর্যের ব্যাখ্যা। সুতরাং, গোপন তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে ব্যর্থতার জন্য আরঅ্যান্ডএডাবলিউ-কে দোষারোপ না করার বদলে দায়িত্বের বিভাজনের বিষয়টি মনে রাখা প্রয়োজন পর্যবেক্ষকদের।
মিরর ইমেজিং
এর বিশদ ব্যাখ্যা করতে হলে, কার্গিলের ক্ষেত্রে ভারতের সামরিক সামরিক বাহিনী ধরেই নিয়েছিল যে, উপমহাদেশের পারমাণবিকীকরণের কারণে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে খোলা যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই। তাই, সামরিক বাহিনীর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কাশ্মীরে সামরিক “অনধিকার” প্রবেশের চেষ্টা না করে, জঙ্গীদের “অনুপ্রবেশ”-এর বিষয়টিই পাকিস্তান চালিয়ে যাবে। ১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে, যখন আরঅ্যান্ডএডাবলিউ পাকিস্তানের দিক থেকে “একটি সীমিত ও ক্ষিপ্রগতির আক্রমণ”-এর অনুমান করেন, তখন তা ভারতীয় সামরিক বাহিনীর বিশ্লেষণের সঙ্গে না মেলায় তাঁরা আরঅ্যান্ডএডাবলিউ -র ওই সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করেন। পাকিস্তানের আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্যের বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য (এমন একটি সুদৃঢ়ভাবে সুরক্ষিত তথ্য যা জেনারেল পারভেজ মুশারফ সহ মাত্র চারজন সদস্যের জানা ছিল) হাতে না থাকায়, আরঅ্যান্ডএডাবলিউ-র পক্ষে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে তাদের সিদ্ধান্তের পুনঃমূল্যায়নে রাজি করতে অক্ষম হয়। তাই, কার্গিলে ভারতীয় সেনাবাহিনী অসতর্ক অবস্থায় আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের দিক থেকে কোনও ব্যররথতা বা ঘাটতি আদতে ছিল না। বরং আরঅ্যান্ডএডাবলিউ-র মূল্যায়নে মনোযোগ দিতে সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতাই কৌশলগত আবহাওয়াটিকে সম্পূর্ণ ভুল বোঝার কারণ।
তার উপরে, ভারতীয় সেনাবাহিনী নিজেরই গুপ্ত তথ্য সংগ্রহকারী শাখা থেকে পাওয়া ২৩টি বিবৃতি ও মধ্য-পর্যায়ের আধিকারিকদের দেওয়া সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করেন। তাই, ওই অতর্কিত আক্রমণের কারণ গুপ্ত তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থতা নয়, বরং সামরিক বাহিনীর দিক থেকে সঠিক প্রতিক্রিয়ার অভাব। গুপ্ত তথ্য সংক্রান্ত চিত্রের ফাঁকগুলি ভরতে, সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে সামরিক বাহিনী “মিরর ইমেজিং” প্রক্রিয়া ব্যবহারের ফাঁদে পড়ে গেছেন। মিরর ইমেজিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে বিশ্লেষণকারীরা ধরে নেন যে, তাঁদের বিচারবুদ্ধি যা নির্দেশ দিচ্ছে, শত্রুপক্ষের বিচারবুদ্ধিও তাঁদের তাই-ই বলবে। পাকিস্তান যে আদৌ কার্গিলের প্রবল শীতে পাহাড়ের চূড়া দখল করার চেষ্টা করবে ও তার জন্য প্রাণহানিও মেনে নেবে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছিল। তাই, ভারতীয় সামরিক বাহিনী ধরে নেন যে পাকিস্তানের সামরিক নেতৃবৃন্দ উঁচু শৈলশিরার বদলে নদীর খাত ধরে জঙ্গী অনুপ্রবেশের চেষ্টা করবেন। যদি ভারতীয় সামরিক বাহিনী আরঅ্যান্ডএডাবলিউ-র থেকে পাওয়া গোপন তথ্যের দিকে মনোযোগ দিতেন এবং বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের সতর্কবার্তাগুলিকে মূল্য দিতেন, তাহলে পাকিস্তানের অগ্রসরণকে রুখতে বায়ুপথে নজরদারির মত অসংখ্য বিকল্প সেনাবাহিনীর হাতে ছিল। তাঁরা এইগুলিকে কাজে লাগাতে অক্ষম হওয়ার পর, প্রতিক্রিয়াদানে ব্যর্থতার সমস্ত দায় গুপ্ত তথ্য সংগ্রহকারী সংগঠনের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
যদিও, যে প্রমাণগুলি পাওয়া গেছে, সেগুলি অসম্পূর্ণ হলেও, গালোয়ানের অতর্কিত আক্রমণ একই নকশা অনুসরণ করেছে বলে মনে হয়। এই ঘটনার অন্তত তিন মাস আগে গুপ্ত তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা লাদাখে পিএলএ-র কার্যকলাপ সম্পর্কে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে সতর্ক করেছিল। তবুও, সীমান্ত প্রতিরক্ষার উপর এই কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়ার বিশ্লেষণ করতে এবং নির্ভরযোগ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার দিকে ব্যর্থতা দেখা যায়। উপরে যেমন দেখান হয়েছে, চিনের অভিপ্রায় নিয়ে সবিস্তার বর্ণনার অভাব নিয়ে আবার অভিযোগ শুরু হয়েছে, যার ফলাফল তথ্য সংগ্রহে অক্ষমতা নিয়ে দোষারোপ করা।
এই ঘটনা আবারও সঠিক প্রতিক্রিয়াদানে ব্যর্থতার একটি উদাহরণ, যা সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে সঠিক প্রতিক্রিয়াদানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অক্ষমতাকেই চিহ্নিত করে। গুপ্ত তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে এই পার্থক্য করার বিষয়টি কেবলমাত্র পাণ্ডিত্যের খাতিরেই তৈরি নয়। বরং পৃথকীকরণের প্রয়োজন এই বিষয়টি বোঝার জন্য যে, এই গুপ্ত তথ্য সংক্রান্ত সংস্কার কখনই সামরিক বাহিনী বা কৌশলগত অসতর্কতার সুযোগের বিরুদ্ধে একটি মহাশক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে না। যে জিনিসের আশু প্রয়োজন তা হল, ব্যবহারকারীর দিক থেকে এই বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানের অর্জন,। এর অর্থ সিদ্ধান্তকারীর দিক থেকে কৌশলগত তথ্যের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে সচেতনতা, এবং শত্রুপক্ষের কার্য সম্পাদনের অভ্যাসকে আরও ভালভাবে বোঝা। এইভাবে মিরর ইমেজিং সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধান করা যাবে এবং ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় শত্রুপক্ষের সম্ভাব্য কার্যকলাপকে মাথায় রেখে সঠিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার অভ্যাসকেও সুনিশ্চিত করা সম্ভব।