স্ব ও সেলফির সন্ধানেঃ একটি ভারতীয় আখ্যান

02/09/2024
IiT English Page

কোনও কিছু সামনে বা সঙ্গীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে স্মার্টফোন সামনে ধরে ছবি তোলা এখন শুধু ভারত নয়, সারা পৃথিবীতেই একটা অতি সাধারণ দৃশ্য; নিজেকে ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরে দাঁড় করিয়ে, নিজের অভ্যস্ত সামাজিক পৃথিবীর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক চিহ্নিত করে ডিজিটাল আর্কাইভে নিজের অস্তিত্বকে চিরস্থায়ী করার প্রচেষ্টা আজ একটি সাধারণ ঘটনা। সাধারণত, এই ছবিগুলি আমাদের ফোন ও হার্ড ড্রাইভে রক্ষিত থাকলেও নানা মঞ্চ ও সামাজিক মাধ্যমের জালের সাহায্যে ওই ছবিগুলির মেটাডেটা খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।

বিশ্বে নিজের স্থান তৈরি করার সময় নিজেকে নির্মাণ করার একটি পন্থা হল সেলফি। যে ডিজিটাল পদার্থগুলি, শব্দের সমাজতাত্ত্বিক অর্থে একদমই “প্রাত্যহিক” হয়ে গেছে, সেলফি শুধু তারই একটি নয়। বরং রাষ্ট্রের নজরদারি থেকে শুরু করে, নাগরিক সুবিধার প্রাপ্তি, স্বত্ব এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের নির্মাণ – এই সবেরই ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে সেলফি। একটি সেলফি নেওয়ার পিছনে যে তাড়না কাজ করে, তার মধ্যে আছে দৃষ্ট হওয়ার, নির্দিষ্ট সময়, পরিসর ও গোষ্ঠীর সঙ্গে একাত্মতাকে চিহ্নিত করার এবং আমাদের হাতে যে অস্ত্র আছে তার সাহায্যে সমকালীন জীবনের বুনটে নিজেদের ছাপ রেখে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কাজ করে।    

ব্যবহারকারীর দ্বারা বিরামহীন ভাবে সৃষ্টি হতে থাকা অনলাইন কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুতে বা নিজের ছায়াপ্রতিমাকে চিরস্থায়ীভাবে স্থাপন করার উদগ্র চাহিদা হিসেবে অনেকেই এই “সেলফি সংস্কৃতি”-কে অবজ্ঞাপূর্ণভাবে বর্ণনা করলেও, আন্তর্জালের বিষয়ে পণ্ডিতরা কিন্তু এই চর্চাকে স্ব-কে সকলের চোখের সামনে নিবেদন করার এক সুদীর্ঘ ইতিহাসের অংশ হিসেবেই দেখে থাকেন। এই চর্চাকে, কার্যত, আমাদের সময়ের মিডিয়ার আদর্শ সংঘটন বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মিডিয়াম নামের ওয়েব পত্রিকায় র‍্যাচেল সাইমের বহু পঠিত একটি প্রবন্ধে তিনি বলেন, সেলফি নিচ্ছেন যিনি “তিনি, আঙুলের কয়েকটি চাপের মাধ্যমে, ঘোষণা করেন যে, তিনি সেই নির্দিষ্ট মুহূর্তে একটি দৃশ্য হিসেবে নিজেকে উপস্থিত করার যোগ্য।” 

কিন্তু, ভারতের মত যে দেশের জনসংখ্যা একশ চল্লিশ কোটি, যেখানে ব্যক্তির অদৃশ্যতা যেমন একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক তেমনই একটি রাজনৈতিক অবস্থা, যেখানে দৃষ্ট, শ্রুত ও স্বীকৃত হওয়ার অধিকার একটি মুষ্টি-প্রমাণ জনগোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত, সেই দেশে এই সেলফি-র অর্থ ঠিক কি? কিভাবে লিঙ্গ, জাতি, শ্রেণি ও আঞ্চলিক পরিচয়ের দিক থেকে প্রান্তিক জনতা, অর্থাৎ অদৃশ্য “ভারত”-কে উপেক্ষা করে, মূলধারার মিডিয়া কেবলমাত্র ধনী, খ্যাতনামা ও শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ, অর্থাৎ দৃশ্যমান “ইন্ডিয়া-র উপরেই মনোযোগ দেয়, সে নিয়ে আমরা অনেক সময়ই আলোচনা করে থাকি। অদৃশ্য ভারত নির্মিত সেই সব মানুষকে দিয়ে, যাঁরা আধুনিক গণতন্ত্রে এখনও সম্পূর্ণভাবে অংশ নিয়ে উঠতে পারেন নি।   

কমদামী স্মার্টফোন ও ডেটার দ্রুত বিস্তার (একটি হিসেব অনুযায়ী, ভারতে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা একশ কোটির বেশি) এই ব্যবহারকারীদের এমন সুযোগ দিয়েছে, যাতে তাঁরা আন্তর্জালের একটি ছোট কোণ অন্তত দাবি করতে পারেন এবং নিজেদের এমন একটা অবস্থায় নিয়ে যেতে পারেন যেখানে তাঁদের দৃশ্যমান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু, অন্যান্য অনেক পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থার মতই, ভারতের প্রেক্ষিতে, দৃশ্যমানতার আকাঙ্ক্ষা ও সাধনা একটি শঙ্কাপূর্ণ অনুশীলন, বিশেষ করে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, যখন কিছু বিশেষ পরিচয়ের প্রকাশ যথেষ্ট বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।  

ব্যক্তিগত ভাব প্রকাশের আধার হিসেবে সেলফি সাধারণ জনতা থেকে নিজেকে পৃথক করার এবং যোগাযোগ চিহ্নিত করার মাধ্যম। সামাজিক মাধ্যমের পরিসর অনেকটাই অ্যালগোরিদম দ্বারা চালিত, যা জনপ্রিয় ও ক্রীত বিষয়বস্তুকে বেশি আনুকূল্য দেয় এবং এই অ্যালগোরিদমের কারণেই ব্যবহারকারী (ব্যক্তি ও কৌম উভয়ই)  নিজের বিশেষ স্থান তৈরি করার সুযোগ পান, যেখানে তাঁরা নিজেদের কাছে ও স্ব-নির্মিত একটি গোষ্ঠী কাছে, দৃশ্যমান হয়ে ওঠেন। এই বিশেষ পরিসরটিতে সেলফি একান্তই নিজের একটি আশ্রয় খুঁজে পায়। পিপল’স আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়া-র নেওয়া ফেসেস-এর মত উদ্যোগগুলি চেষ্টা করে ভারতের আসল চেহারা ঠিক কেমন, তার সম্পর্কে প্রচলিত কল্পনাকে আরও বিস্তৃত করে তুলতে। কিন্তু, ব্যক্তিগত সেলফি নেওয়ার কাজটি এই ধরণের নাগরিক প্রকল্পের সঙ্গে একভাবে সম্পর্কযুক্ত হলেও একেবারেই স্বতন্ত্র। ব্যক্তির সেলফি নেওয়ার পিছনে কাজ করে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের ধারণা এবং নিজের হয়ে সক্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, যা স্ব-প্রকাশের উপর ব্যক্তির নিজের নিয়ন্ত্রণকে প্রতিষ্ঠা করে।    

অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি, নিজের প্রতিকৃতি নির্মাণের মধ্যে দিয়ে ডিজিটাল স্ব-প্রকাশ কিভাবে বিষয়গততা, ঘনিষ্ঠতা, স্থানিকতা এবং ক্ষমতার ধারণাকে পুনর্বিন্যস্ত করছে, তা বোঝার জন্য আমি ও আমার সহকর্মী বেশ কিছু পরিপ্রেক্ষিত, যার অন্দরে ভারতীয় উপমহাদেশে সেলফির উত্থান ঘটেছে, তাকে নিরীক্ষা করেছি। এই সেলফিগুলি ব্যক্তির নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা দ্বারা চালিত এবং, সঙ্গে সঙ্গে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রণালী ও পরিকাঠামোর প্রতিক্রিয়া থেকে উপজাত। এমনকি, যদিও একটি সেলফিও স্ব-এর সৃজনশীল প্রকাশকে তুলে ধরার ও পরীক্ষা করার মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে, অ্যানালগ আলোকচিত্রের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, এই ডিজিটাল ও অনলাইন ছবিগুলি বায়োমেট্রিক নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য সংগ্রহের উন্মুক্ত উৎস। ছবিগুলি ক্রমশ্য আরও পরিবর্তনযোগ্যও হয়ে উঠছে, এবং তার ফলে আজকাল এগুলিকে টুকরো করে ফেলা যায় বা এর সঙ্গে নতুন কিছু যোগ করা যায় এবং, আদত স্বত্বাধিকারীর অনুমতি ছাড়াই এগুলিকে ডেটাবেসে সংরক্ষণ করা ও অন্য কোনও বৈদ্যুতিন তথ্যের সঙ্গে যুক্ত করাও সম্ভব। মানব-ভূগোলের পণ্ডিত অয়োনা দত্ত নজরদারির সম্ভাবনাকে চিহ্নিত করেছেন, যা উঠে আসে, আমরা যাকে নির্বিচারে সেলফি আপলোড বলে বর্ণনা করতে পারি, তার মধ্যে থেকে। আমরা যত অনলাইন পরিসর দখল করব, যত আমরা নিজেদের দৃশ্য হিসেবে তুলে ধরব, ততই দৃষ্ট হওয়ার প্রতি, নজরদারির সম্ভাবনার প্রতি দুর্বল হয়ে উঠব।     

সেলফি তোলাকে, আমরা এ তো করেই থাকি এবং অন্যের সঙ্গে ভাগ করাই উচিত, এমন স্বাভাবিক একটি ব্যাপার বলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে পরিবর্তনশীলতা, মালিকানা ও স্থায়িত্বের দিক থেকে, ঘটনাটি বিশেষভাবে সমস্যাজনক হয়ে উঠেছে। আমরা আমাদের সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টকে গোপন করতে পারি এবং আমাদের ছবিগুলিকে একটি সাবধানে বেছে নেওয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে ভাগও করে নিতে পারি। কিন্তু তার পরেও, নিজের প্রতিকৃতি ব্যবহার করে বিধিবদ্ধ এই সামাজিক আচারে নিজেদের উপস্থিতি চিহ্নিত করার এই গভীর চাহিদার চর্চায় আমরা অংশগ্রহণ করেই ফেলি। যেমন, অনেক উপাদানে স্বচ্ছতার অভাব থাকলেও, ভারত সরকারের দ্বারা নির্মিত ও পরিচালিত ডিজি-যাত্রা অ্যাপটি সদ্য চালু হয়েছে। এই অ্যাপটির সাহায্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার পরীক্ষা সংক্ষেপে সারার জন্য একটি সেলফি আপলোড করা হয় এবং আধার নামের বায়োমেট্রিক পরিচয় নথির সাহায্যে তার প্রামাণিকতা যাচাই করে নেওয়া হয়। এইভাবে, নিরাপত্তা পরীক্ষার সুদীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করতে গররাজি ব্যস্ত ভ্রমণকারী স্বেচ্ছায় নিজের ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের হাতে তুলে দেন। এই সুবিধাজনক ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়ে, বিশেষ করে এমন দেশে যেখানে পদ্ধতিগত দক্ষতা সত্যিই অভিনব একটা বিষয়, মানুষ যে সেলফি-র মত একটা সাধারণ জিনিসের বদলে যাতায়াত ও ঘোরাঘুরির ব্যাপারটিকে সহজতর করে তুলতে চাইবেন, তা এমন কিছু আশ্চর্য বিষয় নয়। সম্প্রতি ভারত সরকার যে পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট চালু করেছেন, তা যে নিরাপত্তা দেয়, তাতে কিছু সমস্যার কারণে, ছবি ব্যবহারের উপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা সাধারণ নাগরিকদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। 

আমাদের ডিজিটাল উপস্থিতির মতই, সেলফিও দাঁড়িয়ে আছে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক, সর্বজনীন ও নিজস্বের ঠিক মধ্যবর্তী সূক্ষ্ম রেখাটির উপর। যে প্রেক্ষিতে সেলফি নেওয়া হয়েছে, তার উপর ভিত্তি করে এটি নানা ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। গ্যাব্রিয়েল দত্তাত্রেয়ন বর্ণনা করেছেন, কিভাবে প্রান্তিক পরিসরের বসবাসকারী যুবকরা দিল্লির সর্বজনীন উদ্যানে ও স্মৃতিস্তম্ভগুলির আশেপাশে নিজেদের ছবি তুলছেন। তাঁদের কাছে এইভাবে সেলফি তোলার উদ্দেশ্য পরিসর দখল করা, পরিচয়ের নির্মাণ এবং পুরুষ হিসেবে বিকশিত হওয়ার পথে পা ফেলা। কিন্তু, একই সঙ্গে, সেলফি হয়ে ওঠে নিয়ন্ত্রণ ও কর্ম/সময়ের শৃঙ্খলা চাপিয়ে দেওয়ার উপায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে মার্টিন ওয়েব ও তাঁর সহলেখকদের মন্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। এই চাপিয়ে দেওয়ার একটি উদাহরণ হল, গৃহস্থালির কাজের সঙ্গে যুক্ত এমন একজন অস্থায়ী কর্মীকে মুখে মুখোশ ও হাতে দস্তানা সহ তাঁর ছবি আপলোড করত হয়, কাজের মঞ্চে পরিচিতি পাওয়ার জন্য।   

তবুও, প্রক্রিয়া ও উৎপাদিত দ্রব্য হিসেবে সেলফি অতি-সক্রিয় ও মুক্তিদায়ী। সেলফি আমাদের সুযোগ দেয় বহু ও বিবিধ হওয়ার, নিজের শহর বা রাষ্ট্রের মানচিত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার এবং এছাড়াও, সেলফি অসংখ্য সামগ্রী ও স্থানের সঙ্গে আর অন্দরে আমাদের ছবি এঁকে দেয়, যা আমাদের শরীরের মতই, আমাদের হয়ে কথা বলে ওঠে। পুজোর সময় তোলা সেলফি পারিবারিক হোয়াট’সঅ্যাপে পাঠানোকে যদিও “প্রজাতন্ত্র দিবসে সংবিধান পাঠ” করার মত নৈতিক উৎকর্ষের সরব ঘোষণা বলে সমালোচনা করা হয়, কিন্তু তার মধ্যে দিয়ে আদতে ব্যক্তি নিজের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উপর দাবি জানান। ইনস্টাগ্রামের রিল নির্দিষ্ট উদারপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাস রাখার দাবি জানায়। এই মুহূর্তে, যখন নাগরিকত্ব এবং ঐতিহ্য নিয়ে সুতীব্র বিবাদ চলছে, তখন ভারতের বর্তমান নাগরিক জীবনে, এই বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অভিষেক রায় ও নেহা গুপ্তার মতে, কিছু সেলফি নিজেদের দৃঢ়ভাবে “ইনস্টাগ্রামে ছাপানোর যোগ্য” জায়গায় দাঁড় করিয়ে একটি নান্দনিক সংবেদনশীলতার নির্মাণ ও প্রদর্শন করে। এখানে, বিশেষ করে যখন ছবিগুলিকে এমনভাবে ট্যাগ করা হয়, যাতে সেগুলি বাণিজ্যিক সুবিধা, সুচিন্তিতভাবে নির্মিত প্রভাব এবং রাজনৈতিক আখ্যানকে সমৃদ্ধ করে, তখন সেলফি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে যায় পুঁজিবাদী যন্ত্রের সঙ্গে, যা ওয়েবের একটা বড় অংশের পরিচালক। 

২০২৩ সালের শেষের দিকে, সারা দেশ জুড়ে রেলস্টেশন, (কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ) রাষ্ট্রাধীন ভবনগুলির বাইরে অনেকগুলি “ত্রিমাত্রিক সেলফি পয়েন্ট” তৈরি করা হয়। এই পয়েন্টগুলিতে বিভিন্ন জাতীয় কীর্তি দিয়ে চিত্রিত পটভূমির সামনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পূর্ণায়তন কাটআউট পথচারীকে আমন্ত্রণ জানায়, একবার থেমে একটি সেলফি তোলার। এই আহ্বান সেলফি তোলার ব্যাপক আগ্রহকেই কাজে লাগাতে চেয়েছিল। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে, হায়দ্রাবাদের একটি তারের সেতুর উপর দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার সময়, দুই ব্যক্তি একটি চলন্ত গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান। এই ঘটনার পর থেকেই, যাকে সেলফি আচ্ছন্ন মন বলে বর্ণনা করা যায়, তার কুফলের বিষয়ে একটি আলোচনা শুরু হয়। 

সেলফি, সুতরাং, শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের ব্যক্তিসত্ত্বার অন্দরে উঁকি দেওয়ার একটি জানালা মাত্রই নয়। সঙ্গে সঙ্গে, তার স্বেচ্ছাকৃত বা আকস্মিক অবস্থিতির মাধ্যমে, সে আমাদের সুযোগ করে দেয় সাংস্কৃতিক, নাগরিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের কিছু মুহূর্তের মোড়ক খুলে জনসমক্ষে দাঁড় করানোর। মোবাইল ফোনের শক্তিতে চালিত সেলফি যেমন একটি বিবৃতি, তেমনই একটি প্ররোচনাও বটে। ঝলমলে আলোয় ভরা মল বা শীততাপনিয়ন্ত্রিত বহুতল বাজার, যা এক তথাকথিত অভিজাত পরিসরের প্রতীক এবং যা এক প্রান্তিক যুবককে কোনদিনই হয়ত প্রবেশাধিকার দেবে না, তার সামনে বিশেষ ভঙ্গিতে ছবি তুলে, সেই পরিসরে নিজের উপস্থিতি খোদাই করে রাখার সুযোগ ওই যুবকের হাতে সেলফিই তুলে দেয়। রক্ষণশীল পরিবারের কিশোরী মেয়েটিকে সেলফিই উপহার দেবে এমন একটি ফ্রেম, যার মধ্যে সে প্রথমবার নিজেকে আবিষ্কার করবে মুগ্ধতার জাদু আর নিষিদ্ধের ধারণা ভরা চোখ দিয়ে। পরিযায়ী শ্রমিক যখন তাঁর ফোনটি উঁচুতে তুলে ধরে, তাঁর দেশের সর্বোচ্চ নেতার ছবির পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলবেন, তখন হয়ত তিনি অনুভব করবেন তাঁর নাগরিকত্বের আরামদায়ক গুরুভার এবং সেই নাগরিকত্বেরই আনুষঙ্গিক সুবিধা। অন্তত আমরা সেই আশা রেখেই এগিয়ে যাব। 

চয়নিকা সাক্সেনা

Author

চয়নিকা সাক্সেনা বিগ টেক-এর সংযুক্ত তথ্য-বিষয়ক পরামর্শদাতা। এই প্রবন্ধের সমস্ত মতামত লেখকের নিজস্ব। 

(Bangla Translation by Sritama Halder) 
অনুবাদঃ শ্রীতমা হালদার