১৯৯২ সালে ভারতে স্থানীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম পরীক্ষাটি পরিচালিত হয়। সেই বছরই গৃহীত ভারতীয় সংবিধানের ৭৩তম সংশোধনটি গ্রামীণ ভারতের লক্ষ লক্ষ নির্বাচিত স্থানীয় রাজনীতিবিদদের হাতে নীতি প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণ করার যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষমতা তুলে দেয়। এর ফলে, গ্রামীণ রাজনীতিবিদরা মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি (এমজিএনআরইজিএ)-এর মত প্রকল্পের আওতায় কাজ বন্টনের মত সরকারি প্রকল্পের উপকারিতার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পান। এছাড়াও, এই সংশোধনের কারণে, সরকার গ্রামবাসীদের অনেক কাছাকাছি এসে গেছেন এবং যাঁদের হাতে এখন সমস্যার সমাধানের ক্ষমতা আছে, সেই রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁদের সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে।
এই বিকেন্দ্রীকরণের প্রচেষ্টার ফলাফলকে বোঝার জন্য একটি অতি জটিল প্রশ্ন তোলা অতীব প্রয়োজন। এই প্রশ্নটি হল, স্থানীয় নির্বাচিত নেতৃত্ব, বিশেষ করে সরপঞ্চরা, যাঁরা গ্রামীণ সরকার ব্যবস্থার নিম্নতম স্তরে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, তাঁরা তাঁদের গ্রামের জনগণের দৈনন্দিন ও সহায়তা ও বিচারের অনুরোধের প্রতি ঠিক কতটা অনুভূতিশীল। বিশেষত, প্রায়সয়ই বিচিত্র পরিচয়ের যে ভোটাদাতারা তাঁদের নির্বাচন করে ক্ষমতায় আনেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই কি প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁরা, নাকি স্বজাতীয় ভোটদাতাদের একটি সংকীর্ণ গোষ্ঠীকেই তাঁরা বেশি আনুকূল্য দেন? একইভাবে, সমীক্ষা অনুযায়ী, গ্রামীণ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাঁদের অধিকাংশ ভোটদাতারই ব্যক্তিগত পরিচয় থাকে, এবং এই জন্য, ধরে নেওয়া যায় যে, নেতারা গ্রামের সব চেয়ে অভাবগ্রস্ত বাসিন্দাদের চেনেন। তাঁরা ঠিক কাদের অগ্রাধিকার দেন? এই দরিদ্র ভোটদাতাদের, না তুলনামূলকভাবে ধনী ভোটদাতাদের?
জাতি ও শ্রেণি
লক্ষ্য ঠিক করার বিষয়ে সরপঞ্চদের নেওয়া সিদ্ধান্তকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য, গত দশ বছর ধরে আমি রাজস্থানে একটি ক্ষেত্র-সমীক্ষা চালিয়েছি, যার সঙ্গে যুক্ত ছিল সরপঞ্চদের সঙ্গে গুণগত সাক্ষাৎকার, ছিয়ানব্বইটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটদাতা ও সরপঞ্চদের নিয়ে ২০১৩ সালে পরিচালিত একটি সমীক্ষা এবং ২০২৪ সালে পঁয়ত্রিশ জন সরপঞ্চের আংশিকভাবে কাঠামোবদ্ধ গুণগত সাক্ষাৎকার। এই ক্ষেত্র-সমীক্ষাটির একটি অংশ ছিল একটি বিশিষ্ট আচরণগত পরিমাপ। এই পরিমাপ অনুযায়ী, সরপঞ্চদের অনুরোধ করা হয় দশজন যদৃচ্ছভাবে নির্বাচিত ভোটদাতার মধ্যে পাঁচটি টোকেন বন্টন করার জন্য। এই টোকেনগুলি উদ্দেশ্য একটি লটারির ফলাফলকে প্রভাবিত করা, যে লটারির পুরস্কার হল কোন সরকারি পরিকাঠামো-কেন্দ্রীয় প্রকল্পের একদিনের বেতনের সমতুল্য অর্থ। যাঁরা কোনও টোকেন পান নি, তাঁদের একটি লটারির টিকিট দেওয়া হয় এবং যাঁরা টোকেন পান তাঁদের একটি অতিরিক্ত টিকিট দেওয়া হয়। এই নিয়মের ফলে দশজন নাগরিকের অন্তত অর্ধেক অংশকে বাদ দিতে হয়ে এবং সেই কারণেই সরপঞ্চরা নিজেদের ভোটদাতাদের বিশেষ আনুকূল্য দিতে বাধ্য হন।
ভারতের রাজনীতি নিয়ে প্রচলিত জ্ঞান বলে যে, রাজনীতিবিদরা স্বজাতীয় ব্যক্তিদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। কিন্তু, আমাদের নিজেদের পরিচালিত ক্ষেত্র-সমীক্ষাটি থেকে পাওয়া প্রমাণ এই মতকে সমর্থন করে না। আমরা এমন কোনও অর্থবহ পরিসংখ্যান পাই নি, যা দেখায় যে সরপঞ্চরা অন্য জাতি পরিচয়ের ব্যক্তিদের থেকে নিজেদের জাতির সদস্যদের বেশি সুবিধা দিচ্ছেন। এই বিষয়টি বোঝা যায় গ্রামীণ রাজস্থানের স্থানীয় নির্বাচনের উদাহরণ থেকে, যেখানে নির্বাচনে জেতার জন্য সাধারণত বৈচিত্রপূর্ণ এলাকা থেকে উঠে আসা সমর্থনের একাধিকত্ব প্রয়োজন হয়।
বিশেষ করে, যখন অংশীদারিত্ব, অর্থাৎ একই রাজনৈতিক দলের প্রতি বিশ্বাস, এবং সরপঞ্চ নির্বাচনের সময় ব্যক্তিগত সমর্থনও বিবেচনা করা হয়, তখন সরপঞ্চরা যে আদৌ নিজের জাতি পরিচয়ের পটভূমি থেকে উঠে আসা সমর্থকদের বিশেষ সুবিধা দেন, এমন কোনও প্রমাণ আমরা পাই নি। একই ধরণের একটি গবেষণায় ভোটদাতাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তাঁরা দারিদ্র-বিরোধী সুবিধা পাওয়ার না এমজিএনআরইজিএ কর্মসংস্থান প্রকল্পের সাহায্যে একটি চাকরির প্রত্যাশা করেন। একই রকমভাবে, আমি দেখি যে স্বজাতীয় নেতার থেকে ভোটদাতাদের যা প্রত্যাশা, তা কোনভাবেওই অন্য জাতি পরিচয়ের নেতাদের চেয়ে বেশি নয়।
সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে, সরপঞ্চরা দরিদ্র না ধনীতর গ্রামবাসীদের আনুকূল্য দিয়ে থাকেন, সে বিষয়টিও আমরা বিবেচনা করেছি। সাম্প্রতিককালে, যে গবেষণাগুলি সরকারি আমলা ও নির্বাচিত নেতারা সুবিধার লক্ষ্য স্থির করার মধ্যে তুলনা করে, সেগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, সরপঞ্চরা উঁচুজাতের সদস্যসহ উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন গোষ্ঠীগুলিকে বেশি আনুকূল্য দিয়ে থাকেন, এবং তার পাশাপাশি, এলিট ক্যাপচার (দুর্নীতির এমন একটি রূপ, যেখানে উচ্চ সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির উপকারের জন্য সরকারি সম্পদের ব্যবহার করা হয়)-এর উপর যে কাজগুলি হয়েছে, সেগুলিও ইঙ্গিত করে যে, যে গ্রামটিতে আমরা ক্ষেত্র-সমীক্ষা করেছি, সেই রকম দরিদ্র গ্রামগুলির স্থানীয় সরকার নিঃস্ব ব্যক্তিদের চেয়ে ধনবান ব্যক্তিদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল হবেন। এই প্রশ্নটির মূল্যায়ন করার জন্য, আমরা ধনের পরিমাপের জন্য একটি ধন সূচক বা অ্যাসেট ইনডেক্স ব্যবহার করেছি। এই সূচকের মান হিসেবে পাকা বাড়ি থেকে শুরু করে সেলফোন পর্যন্ত সাতটি ভিন্ন ভিন্ন সম্পত্তিকে ধরা হয়। এর পর, এই সূচকের পরিমাপের উপর ভিত্তি করে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি, কোন স্তরের ভোটদাতা অন্যদের থেকে বেশি আনুকূল্য পাচ্ছেন। আমরা দেখেছি যে তুলনামূলকভাবে দরিদ্রতর সমর্থকরা সরপঞ্চদের থেকে অনেক বেশি সুবিধা পেলেও, সরপঞ্চদের যদি মনে হয় যে, তুলনামূলকভাবে দরিদ্রতর কোনও সমর্থক আগের নির্বাচনে তাঁদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন তবে তাঁদের ক্ষেত্রে বৈষম্য হতে দেখা যায়।
সমর্থক, সমদলীয় এবং স্বজাতীয়
যে ভোটদাতারা যে নেতাদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, সেই ভোটদাতাদের প্রতি তাঁদের দ্বারা নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া হল গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের মূল ভিত্তি। এর অর্থ, যে সমর্থকরা আগের স্থানীয় নির্বাচনে তাঁদের ভোট দিয়েছেন এবং যাঁরা নির্বাচিতদের রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন, নির্বাচিত হওয়ার পঅরে ওইনেতারা তাঁদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল হবেন। বাস্তবিকই, সম্পদের স্থানীয় বন্টনের বিষয়ে লেখা অসংখ্য নিবন্ধ সমদলীয় ব্যক্তিদের প্রতি আনুকূল্যের প্রমাণ তুলে ধরেছে।
স্থানীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে, রাজ্য বা রাষ্ট্রীয় নীতির বাস্তবায়ন ও দৈনিক শাসনকার্য পরিচালনার সময় ঠিক কোন ভোটদাতাদের সাহায্য করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সরপঞ্চদের প্রাথমিক দায়িত্ব। শাসনব্যবস্থার এই স্তরটিতে, সরপঞ্চ ও যে ভোটদাতারা তাঁদের নির্বাচন করেছেন তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সম্পর্ক থাকে, যে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা উচ্চতর স্তরগুলিতে সম্ভব নয়, কারণ সেখানকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাজার হাজার ভোটদাতাদের কথা ভাবতে হয়। বাস্তবিকই, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে যদৃচ্ছভাবে নির্বাচিত ভোটদাতাদের নিয়ে সরপঞ্চদের মধ্যে পরিচালিত একটি সমীক্ষায়, সরপঞ্চরা জানিয়েছেন যে তাঁরা ওই ভোটদাতাদের মধ্যে পঁচানব্বই শতাংশকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। তার উপরে, রাজনৈতিক বিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল ক্রুক্স-উইজনার ও সহলেখক অ্যাডাম আউরবাখ, তাঁদের যুগ্ম গবেষণার সাহায্যে আবিষ্কার করেছেন যে, গ্রামীণ ভোটদাতাদের মধ্যে সাতচল্লিশ শতাংশের মতে, যে কোনও সমস্যার সমাধানের জন্য স্থানীয় সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা দ্রুত প্রতিক্রিয়া পেয়ে থাকেন। এর থেকে গ্রামীণ ভারতের ভোটদাতা ও নেতাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং সুবিধা ও সম্পদ বন্টনের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আধিকারিকদের হাতে যে প্রচুর পরিমাণে প্রাসঙ্গিক তথ্য থাকে, তা বোঝা যায়।
যে ভোটদাতারা স্থানীয় নির্বাচনে তাঁদের ভোট দিয়েছেন বলে সরপঞ্চরা মনে করেন, তাঁদের প্রতি সরপঞ্চরা সাধারণত বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে থাকেন। যেহেতু রাজস্থানের স্থানীয় নির্বাচনে বা ব্যালটে কোনও দলীয় চিহ্ন ব্যবহৃত হয় না, তাই এই নির্বাচনগুলি অদলীয় হয়ে থাকে। যাঁদের সমর্থক বলে অনুমান করা হয় তাঁরা, আচরণগত পরিমাপের সমীক্ষায় যাঁরা সমর্থন করছেন না বলে মনে করা হয়, তাঁদের থেকে চুরানব্বই শতাংশ বেশি টোকেন পেয়েছেন। দলের প্রতি আনুগত্যের বিষয়ে সমীক্ষার একটি প্রশ্নের উপর ভিত্তি করে সমদলীয় অংশীদারিত্ব, অর্থাৎ যে ভোটদাতারা সরপঞ্চের দ্বারা সমর্থিত রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য ও আকর্ষণের ইঙ্গিত দেখান, তার প্রেক্ষিতে পক্ষপাতের বিষয়টিও পরীক্ষা করেছি আমরা।
উল্লেখযোগ্য, যখন সমদলীয় ব্যক্তিদের অ-সমর্থক বলে মনে করা হয়, তখন তাঁরা গড়ে .৩৩টি টোকেন পেয়েছেন। এই সংখ্যাটি সমদলীয় সমর্থকরা যত টোকেন পেয়েছেন, গড়ে .৮১টি, তার থেকে কম হলেও, অ-সমর্থক ও অ-দলীয় ব্যক্তিদের থেকে গড়ে .২২ বেশি। এর অর্থ, যে ভোটদাতারা নির্বাচনে তাঁদের সমর্থন করেছেন বলে মনে করা হয়, নির্বাচিত নেতারা তাঁদের প্রবল আনুকূল্য দিয়ে থাকেন, বিশেষ করে যদি তাঁরা একই দলকে সমর্থন করেন। এমনকি যাঁদের কাছ থেকে স্থানীয় নির্বাচনে ওই নেতারা কোনও ভোট নাও পান, তাহলেও তাঁরা যদি নেতাদের দলের প্রতি আনুগত্য দেখান, তবে সেই ভোটদাতাদের প্রতিও পক্ষপাত ঘটতে দেখা যায়। অর্থাৎ, সমদলীয় ব্যক্তিদের থেকে ব্যক্তিগত সমর্থন না পেলেও, তাঁদের প্রতি নির্বাচিত সরপঞ্চরা অনেক বেশি সহানুভূতিশীল। এই বিশেষ ধারণাটিকে যেহেতু ভোটদাতাদের নিয়ে পরিচালিত সমীক্ষাতেও উল্লিখিত হতে দেখা গেছে, তাই ধরে নেওয়া যায় যে, নেতারা এই পক্ষপাতের চর্চা করে থাকেন, এবং ভোটদাতারা সে বিষয়ে জ্ঞাতও আছেন।
জাতি পরিচয় সংক্রান্ত প্রশ্নের দিক থেকে, সমীক্ষাটি প্রস্থাব দেয় যে, যে স্বজাতীয় ব্যক্তি তাঁদের ভোট দেন নি, তাঁদের মধ্যে টোকেন বন্টন করার চেয়ে, সরপঞ্চরা বরং অন্য জাতি পরিচয়ের যে ভোটদাতা তাঁদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাঁদের হাতে টোকেন তুলে দেবেন, এমন সম্ভাবনা অনেক বেশি।

চিত্র ১: নির্বাচনে সমর্থন ও স্বজাতি-পরিচয়কে ঘিরে টোকেনের বন্টন
শ্রেণি পরিচয় ও দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে সুবিধা বন্টনের প্রশ্নটির ক্ষেত্রে, যে সমর্থকরা গড়পড়তা সম্পত্তির খানিকটা নিচে অবস্থান করেন, তাঁরা গড়পড়তা সম্পদের অধিকারী সমর্থকদের থেকে সতের শতাংশ বেশি টোকেন পেয়েছেন। অন্যদিকে, ধনীতম সমর্থকরা দরিদ্রতম অ-সমর্থকদের থেকে বেশি টোকেন পেয়েছেন। এর অর্থ, গ্রামীণ ভারতে, যে দরিদ্র ভোটদাতারা তাঁদের ভোট দিয়েছেন বলে মনে করেন সরপঞ্চরা, সেই ভোটদাতারা, যাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক সমর্থন দেন নি বলে মনে করা হয়, তাঁদের থেকে বেশি আনুকূল্য পেয়ে থাকেন।
তাৎপর্য
এই গবেষণা থেকে বোঝা যায়, সরপঞ্চরা কোনও রকম জাতি-পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে, কোনও উল্লেখযোগ্য বৈষম্য ছাড়াই, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বহু জাতিপরিচয় সমৃদ্ধ সমর্থকদের জোটের প্রতি সহানুভূতিশীল। তার উপরে, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, যাঁরা নানা দারিদ্র-বিরোধী প্রকল্প ও দৈনন্দিন সহায়তাদানের পরিকল্পনার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, তাঁরা দরিদ্রতম ভোটদাতাদের অনুকূলেই থাকেন, তবে তার জন্য ওই ভোটদাতাদের হতে হবে তাঁদের রাজনৈতিক সমর্থক। তাঁদের প্রয়োজন ও দাবিকে কোন প্রতিনিধি সব ভালভাবে সম্বোধন করতে পারবেনন, তাঁর উপর ভিত্তি করে ভোটদাতারা তাঁদের বাছাই করেন – এই পরিপ্রেক্ষিতের সঙ্গে এই ঘটনাটির সামঞ্জস্য আছে।
গবেষণার বিষয়সূচি থেকে এর ঠিক পরের যে প্রশ্নটি উঠে আসে তা হল, সরপঞ্চদের ক্ষেত্রে আমরা যে নকশাটি দেখতে পেয়েছি, তা কি স্থানীয় আমলাদের অনুসরণ করা নকশা থেকে বা বন্টনের উপর নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব সরানর জন্য স্থাপিত লক্ষ্য নির্ণয়ের অনুমোদিত বিধি নির্ভর পন্থাটি থেকে ভিন্ন? এই মুহূর্তে যে গবেষণার কাজটি চালু আছে তাতে আমি অনুসন্ধান করছি, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও আমলারা যাঁদের আনুকূল্য দেন, তাঁদের মধ্যে পার্থক্য ও যে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের নীতিকে রাজনীতিবিদ ও আমলারা সুনজরে দেখেন, সেগুলির মধ্যে পার্থক্যের বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করছি। যদি, রাজনৈতিক পক্ষপাত থাকা সত্ত্বেও, রাজনীতিবিদরা, সরকারি আমলাদের থেকে বেশি দরিদ্র ব্যক্তিদের অনুকূল হয়ে থাকেন, তবে স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার সাম্প্রতিক কেন্দ্রীকরণ, সরপঞ্চদের প্রকল্পের লক্ষ্যস্থিরের বিষয়ে বিবেচনা করার ক্ষমতাকে হ্রাস করবে।