২০২৩ সালের মার্চ মাসে, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – কোয়াড রাষ্ট্রগুলির উচ্চতম স্তরের সব চেয়ে সাম্প্রতিক অধিবেশনটি শুরু হয়েছিল একটি পরিচিত ধুয়া দিয়েঃ “একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিককে সমর্থন করার প্রতি কোয়াডের অবিচল অঙ্গীকারকে আমাদের আজকের অধিবেশন পুনর্নিশ্চিত করে।”
কিন্তু এই “মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক” বিষয়টি আদতে কি? কোয়াডের সদস্যপদের প্রেক্ষিতে “মুক্ত ও উন্মুক্ততা”-র প্রশ্নটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা-বিষয়ক অংশীদারিত্বের একটি আলঙ্কারিক বহিরাবরণ। ওই অংশে চিনের ভূমিকা ও আচরণের বৈধতাকে প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যে মূল আঞ্চলিক অংশীদাররা “মুক্তি ও উন্মুক্ততা – এই পরিভাষাদুটি ব্যবহার করে থাকেন। যে রাষ্ট্রগুলি আইন মেনে চলে এবং এই মানগুলিকে তুলে ধরে, সে দেশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত ও যে রাষ্ট্রগুলি সেই মানগুলিতে বিশ্বাস করে না, সেগুলিকে বর্জন করার জন্যই ইন্দো-প্যাসিফিককে “মুক্ত ও উন্মুক্ত” পরিসর হিসেবে পেশ করা হয়।
কোয়াডের উপর এবং তার মাধ্যমে ভারতের ধরা বাজিটি অত্যন্ত স্পষ্টঃ ইন্দো-প্যাসিফিকের গঠন ও এই বিশিষ্ট চতুর্দেশীয় সংগঠনে সদস্যপদের মাধ্যমে, নতুন দিল্লীর পদমর্যাদা ও প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে একটি সাম্প্রতিক দ্রুত উত্তরণ লক্ষ্য করা গেছে। তা স্বত্ত্বেও, ভারতের অন্তর্ভুক্তি ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য একটি উদারনৈতিক কল্পনার বাস্তব অবস্থাটি, প্রাথমিকভাবে যেমন মনে হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি জটিল। কোয়াডের প্রতিটি রাষ্ট্রই আপাত দৃষ্টিতে যে “মুক্তি ও উন্মুক্ততা”-র উদ্দেশ্যটিতে বিশ্বাস করে, আলোচনা ও দেশের নেতাদের নির্মিত নীতির মাধ্যমে, ভারত তার বেশ কিছু দিক স্বতন্ত্রভাবে বোঝে। এই অঞ্চলে আমরা যা দেখি আর ভারত যা সমর্থন করে, তা হল একটি লো-রেজোলিউশান বা স্বল্পমাত্রার উদারনৈতিক বিন্যাস। এই দৃশ্য-রূপকটি এমন একটি বিন্যাসকে তুলে ধরে, যার খুঁটিনাটি অংশগুলি খুবই দুর্বলভাবে বর্ণিত হয়েছে। এই বিন্যাসের মান-নির্ণায়ক বিষয়গুলির অর্থ অতএব, খুব কঠোর নয়, বরং নমনীয় এবং তা বাহ্যিকভাবে এমন একটি “সমমনস্কতা’-কে তুলে ধরে যা, অনেক সময়ই বিষয়ের গভীরে না গিয়ে, ভাসা ভাসা অবস্থাতেই থাকে।
এই ঘটনাটি আশ্চর্যজনক কিছু নয়। স্নায়ু যুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ার শেষ হওয়ার পর থেকে, এবং তারও আগে থেকে ভারত উদারপন্থী আন্তর্জাতিক বিন্যাসকে সতর্কভাবে যে গ্রহণ করেছে তা একটি শিথিলভাবে নির্মিত উদারপন্থী রাষ্ট্র-সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায়। ভারতের এই পদক্ষেপটি পরিচিতি, পদমর্যাদা এবং বস্তুগত লাভের খোঁজে একটি বিস্তৃততর যাত্রার অংশ। অর্থনীতির পরিভাষায়, ১৯৯১ সালের আর্থিক দুর্যোগ ও তার ঠিক পরপরই আইএমএফ পরিকাঠামোগত সমন্বয়সাধনের দাবি জানানোর পরে, ভারত বিশ্ব-অর্থনীতিতে সম্পূর্ণভাবে একীভূত হয়। ভারতীয় রাজনীতির স্তরে, বহু দশক ধরে সর্বসাধারণের সামনে দেওয়া বক্তৃতা এবং বহুপাক্ষিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে বহুল পরিমাণে সফল গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতার উপর ভারতের প্রতিনিধিরা জোর দিতে শুরু করেন এবং একটি উদারপন্থী নিরাপত্তার বিন্যাসকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে, ২০০০-এর দশকের শুরুতে, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিপূরক অসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তিতে সাক্ষর করে। পরে, ২০১৬ সালে, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতাকে উন্নততর করে তুলবে এবং ২০১৭ সাল থেকে, কোয়াডের মাধ্যমে, একটি বিস্তৃততর ও বাধ্যতাহীন প্রতিরক্ষাকেন্দ্রিক সহযোগিতা গঠন করবে।
স্নায়ু যুদ্ধ পরবর্তী উদারপন্থী আন্তর্জাতিক বিন্যাসের প্রভাবশালী আদর্শগুলির সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে ঐক্যমত্য হলেও, ভারতের দায়বদ্ধতা – ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে পণ্ডিত দীপা ওল্লাপালির ভাষায় – “প্রভাবশালী ও পক্ষপাতদুষ্ট।” ভারতীয় নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন উদারপন্থী আন্তর্জাতিক বিন্যাসের প্রধান উপাদানগুলিকে প্রশ্ন করেছেন, কারণ এই বিন্যাস নিয়ে ভারতের অভিজ্ঞতা সব সময় খুব ইতিবাচক নয়। ভারতের জন্য, এই উদারপন্থী আন্তর্জাতিক বিন্যাসটি, আস্থার বিষয় হিসেবে নয়, বরং অনেকটাই প্রথাগত ও বস্তুগত সম্পদের মত কাজ করেছে যার কিছু উপাদানকে প্রয়োজন মত নির্বাচন বা বাতিল করা যায়।
এই কৌশলী পন্থাকে এখনও অনুসরণ করা হচ্ছে, কিন্তু ভারতের কাছে সেই পন্থাটিকে কৌশলের সঙ্গে পরিচালনার সুযোগ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। ইন্দো-প্যাসিফিক ও কোয়াডের একজন প্রধান উদারপন্থী খেলোয়াড় হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশেষ সামাজিক ক্ষমতার অধিকারী, যার সাহায্যে তারা ইন্দো-প্যাসিফিককে একটি উদারপন্থী নিরাপত্তা বিন্যাস হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। নেতৃত্বের স্তরের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের বিভিন্ন মুহূর্তে, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াও এই ধারণাটির প্রচার করেছে যে, কোয়াড এমন একটি সম্প্রদায়, যা নির্দিষ্ট করা কিছু উদারপন্থী মানের উপর নির্ভর করে একটি অংশীদারিত্বভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যববস্থা সরবরাহ করে। এর বিপরীতে, ভারত চেষ্টা করে যে, যে শর্তগুলির সাহায্যে একটি বৈধ উদারপন্থী পরিচয় ও আচরণ নির্মিত হয়, তার একটি নমনীয় ও পূর্বপ্রতিষ্ঠিত ধারণাকে বজায় রাখার। এর ফলে, অনেক সময়ই নতুন দিল্লী তার নিজস্ব বিশেষ কৌতূহলের বিষয় সেগুলিকে অনুসরণ করতে পারে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশের ছত্রছায়ায় “উদারপন্থী সমাজতান্ত্রিক”-এর ভূমিকা স্বীকার করাকে এড়িয়ে যেতে পারে।
“মুক্ত ও উন্মুক্ত” ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি, কোয়াড সদস্যদের দায়বদ্ধতার একটি হাই রেজোলিউশানের বা উচ্চমাত্রার পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে, কোয়াডের সঙ্গে ভারতের আদানপ্রদানের নকশাটি কিছু বিশেষ কৌশলী ও রাজনৈতিক কল্পনাকে তুলে ধরে। প্রথমত ও প্রধানত, চিনকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি প্রকাশ্য যৌথ রণকৌশল অনুসরণ করতে ভারত রাজি নয়। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘটিত উত্তেজিত ও পরবর্তী কালের হিংসাত্মক সীমান্ত লড়াইয়ের পর থেকেই, কৌশলী অংশীদারিত্বের প্রতি নতুন দিল্লীর আগ্রহ বেড়ে গেছে এবং, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে, কৌশলী সহযোগিতার বিষয়ে সতর্কতা অনেক কমে গেছে। তা সত্ত্বেও, যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোয়াড বিশ্বাসী, তাকে অনুসরণ করে, কোয়াডকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরও দৃঢ়ভাবে স্থাপন করাকে ভারতের উচ্চপদস্থ কৌশল নির্মাতারা প্রতিরোধ করে এসেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দক্ষিণ চিন সাগরে পাহারা দেওয়ার মাধ্যমে নৌচালনার যে অধিকার বলবৎ করার সময় ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেয় নি এবং রাশিয়ার সঙ্গে উচ্চস্তরের নিরাপত্তার বিষয়ক সহযোগিতা বজায় রেখেছে। এই দ্বিতীয় নীতিটির জন্যই, ঐক্যবদ্ধ পারস্পরিক অংশীদারিত্বের কারণে, আরও উন্নত প্রযুক্তিগত আদানপ্রদানে সক্ষম কোয়াডের অন্য তিনটি সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের একত্রে কাজ করার সুযোগকে সীমিত করে।
অবশ্যই, ২০১৭ সাল থেকে উচ্চস্তরের অধিবেশন এবং কর্মীদলের মত কোয়াডের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের কিছু উপাদানকে ভারত গ্রহণ করেছে। তবে, ভারতের সঙ্গে কোয়াডের সম্পর্ক সতর্কই রয়ে গেছে।
কোয়াডকে যে পরিসরে কল্পনা করা হয়েছে তার আঞ্চলিক যুক্তিকে ভারতীয় নেতারা প্রশ্ন করেছেন। ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরের সংঘটিত সাংগ্রি-লা সংলাপের একটি প্রধান বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে একটি কৌশল বা সীমিত সদস্যদের জন্য একটি বিশেষ সংগঠন হিসেবে দেখে না” এবং তার বদলে, বিশেষত “ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কোনও নির্দেশ জারি করার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এএসইএএন-এর কেন্দ্রিকতা”-কে স্বীকৃতি দিয়ে, আঞ্চলিক “অন্তর্ভুক্তি”-কে অগ্রাধিকার দেয়। ২০১৯ সালে ভারতের চালু করা ইন্দো-প্যাসিফিক ওশান ইনিশিয়েটিভ এই রকমই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ, যা বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তে = বিশ্বাস করে না। একই বিশ্বাস নয়, বরং, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের কোন পরিকল্পনা ছাড়াই, মৌলিক সাধারণ স্বার্থের উপর নির্ভর করে এই পদক্ষেপটি নির্মিত হয়েছে।
আপাত দৃষ্টিতে অন্যান্য যে আঞ্চলিক উদারপন্থী মতবাদে সকলে বিশ্বাসী, গভীরে গেলে সেগুলিও অনেকটাই অসঙ্গতিপূর্ণ। কোয়াডের নেতারা অঙ্গীকার নিয়েছেন যে তাঁরা, “সামুদ্রিক এলাকায় আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাধিকার দেবেন, বিশেষ করে ইউনাইটেড নেশানস কনভেনশান অন দি ল অফ দা সি (ইউএনসিএলওএস)-তে যেমন দেখা গেছে”। তা সত্ত্বেও, নৌচালনার স্বাধীনতা নিয়ে ভারতের অবস্থান চিনের মতইঃ ভারত তার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে বিদেশী সামরিক যানের কার্যকলাপকে সীমাবদ্ধ রাখার অধিকার দাবি করে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত আইনের যে ব্যাখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করে থাকে, তার সঙ্গে মেলে না। এর ফলশ্রুতি হিসেবে, ভারত বহুকাল ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌচালনার স্বাধীনতা সংক্রান্ত কার্যকলাপের নিশানা হয়ে আছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, এই চারটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্দেশীয় অংশীদারিত্বে, যেখানে দেশের আভ্যন্তরীণ উদারপন্থী পরিচয়ের সূত্রগুলি উপস্থিত তার জন্যও, মোদীর নেতৃত্বে ভারতের ক্রমবর্ধমান অনুদারতার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সমাজ খোলাখুলি যে সমালোচনা করেছেন, ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসকদল ভারতীয় জনতা দল (ভাজপা)-র সরকারের সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রীরা তার প্রতিবাদ করেছেন। ভারত যে গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া, তিনটি রাষ্ট্রই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও রকম উদ্বেগ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছে। গণতন্ত্র হিসেবে এদের সকলেরই যে একই পরিচয়, সে নিয়ে কোয়াড শক্তির এই ক্রমাগত ও যৌথ উদযাপন এই দলবদ্ধতার কেন্দ্রস্থলে একটি আপাতবৈপরীত্যের নির্মাণ করে। এর ফলে এমন কটিনমনীয় পরিসরের নির্মাণ হয়েছে যেখানে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে আভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থার নকশায় বৈচিত্রের প্রতি সহনশীলতার পাশাপাশি, ভারতে দ্রুত বর্ধনশীল অনুদারতা ও গণতান্ত্রিক ভাবধারার ক্ষয়ীভবনের মত বিষয়গুলির সহাবস্থান সম্ভব হয়।
এই অঞ্চলের বাইরে, ইন্দো-প্যাসিফিকের অভ্যন্তরেই কোয়াডের কিছু আগ্রহের বিষয়ের অভিন্নতার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপানী বা অস্ট্রেলিয়ার প্রতিশ্রুতিগুলিকে ভারতের সাগ্রহ গ্রহণ করার মধ্যে কোনও মিল নেই। কৌশলগত স্বশাসনের প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতার নির্দেশক হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের গুরুত্ব, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকেই অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে জয়শঙ্কর বলেছেন, “সমস্ত সমস্যার ক্ষেত্রে সকলেই একই অবস্থান নেবে, কোয়াডকে কখনই তেমনভাবে কল্পনা করা হয় নি।”
অনুক্রমে বদল আসছে যখন ঠিক সেই সময়, পরিচয়ের বৈধ রূপ এবং কার্যকলাপকে চেহারা দেয় যে মান, সেগুলিকে কেন্দ্র করে বিবাদ শুরু হওয়াটা প্রত্যাশিত। ইন্দো-প্যাসিফিক অনুক্রমটি যেহেতু খুবই প্রাথমিক স্তরে আছে, তাই আমরা আশা করতে পারি যে কোয়াডের যুথবদ্ধ কাজকর্মের শর্তাবলী এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অনুক্রমের প্রকৃতিকে ভারত এমনভাবে রূপদান করতে পারবে, যাতে তার নিজের পরিচয় ও আগ্রহ প্রতিফলিত হয়। বর্তমানের ক্রমাগত পরিবর্তন ও এই অঞ্চলে ভারতের বস্তুগত ও আদর্শগত ভারসাম্যকেন্দ্রিক কার্যকলাপকে যে কেন্দ্রীয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা, একটি উদার পরিসরে যে ধরনের পরিচয় ও আচরণকে বৈধ বলে ধরা হয়, তার উপর ভারতকে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ দিচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত, ইন্দো-প্যাসিফিকে, উদারপন্থী পরিচয় ও নীতিবোধকে ভারত যে স্বল্পমাত্রায় গ্রহণ করছে, এই পরিবর্তনের মুহূর্তে তার মূল্য আছে, যে মুহূর্তে ভারত তার পদমর্যাদার উন্নতি এবং চিনের বিরুদ্ধে একটি স্বল্পস্থায়ী নিরাপত্তার বাঁধের সন্ধান করছে। তবে, কোয়াডের ভিতরে ও বাইরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বে চালিত উদারপন্থী আন্তর্জাতিক বিন্যাসের জিম্মাদার বা অনুগামীদের সামনেই, ভারত যেভাবে প্রথাগত মৈত্রীবন্ধন গঠনকে প্রত্যাখ্যান করছে, আনুষ্ঠানিক সংগঠনকে প্রতিরোধ করছে, আঞ্চলিক অন্তর্ভুক্তির উপর জোর দিচ্ছে এবং নিজের গণতান্ত্রিক পরিচয়ের সম্বন্ধে কোনও বহিরাগতের সমালোচনাকে স্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করছে, তা ইতিমধ্যেই ইন্দো-প্যাসিফিকের বিন্যাস নির্মাণের উপর ভারতীর প্রভাব মুদ্রিত করছে। তারা স্বল্পমাত্রার উদারনৈতিক বিন্যাসের উপস্থিতিকে নিশ্চিত করছে, যেখানে “মুক্ত ও উন্মুক্ত” এই শব্দগুচ্ছকে সাঁকো অর্থে খুবই নমনীয়ভাবে ব্যবহার করা হয় ও বোঝা হয়। এই সেতুটির অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া – এই তিনটি চুক্তিবদ্ধ মিত্রশক্তি এবং আঞ্চলিক বিন্যাসের পরিবর্তনচলাকালীন চিনাকে কি উপায়ে সামাজিকভাবে বাদ দেওয়া যায়, সেই পন্থার সন্ধানে রত ভারতের মধ্যে।