ভারতের কোভিড-19 সংক্রান্ত তথ্য এবং জনস্বার্থ

05/07/2021
IiT English Page

২০২১ সালের মে মাসে মাঝামাঝি সময়ে ভারতে কোভিড-19 অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউ তার সর্বোচ্চ সীমায় প্রায় পৌঁছে গেছিল। এই সময় প্রতিদিন যে ৪,১০,০০০ কোভিড জনিত অসুস্থতার ঘটনা নথিভুক্ত হচ্ছিল তা ছিল অতিমারীর যেকোন সময়ে পৃথিবীর যেকোন দেশে যতজন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন তার সর্বোচ্চ হার। অসুস্থতার ঘটনা যেরকম দ্রুতগতিতে বাড়ছিল তার ফলে, সরকারী ও বেসরকারী, দুই ধরনের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার উপরেই বেনজির চাপ পড়ছিল। এই সময় ভারতের শহুরে অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়েই মিডিয়া ব্যস্ত ছিল, যার ফলে গ্রামাঞ্চলে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে চলেছিল তা ঢাকা পড়ে যায়।      

অতিমারী কিভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা বোঝার জন্য অসুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা মাথায় রেখে এগোতে হবে। একটি নির্দিষ্ট দিনে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে কতজন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন সেই হিসাবই এই রোগের বিস্তারের সূচক। যেমন, দৈনিক অসুস্থতার সংখ্যা বেড়ে চললে সেই উর্ধ্বগতিই কি অতিমারীকে ইঙ্গিত করে? এই বৃদ্ধি কি সেই নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিশেষত্ব না তার আশেপাশের অঞ্চলেও একই ঘটনা ঘটছে? এই বেড়ে চলা থামাতে কি জনস্বাস্থ্য পরিষেবার দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা কি হস্তক্ষেপ করছেন বলে দেখা যাচ্ছে?  

এই ধরনের তথ্য সরকারী ওয়েবসাইটে সহজে পাওয়া যায় না। ভারতে কোভিড-19 সম্পর্কে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যভাণ্ডারটি কোন রকম সরকারী সাহায্য ছাড়াই জনগণের সাহায্যে তৈরি একটি ডেটাবেস এবং স্বেচ্ছাসেবীরা বিনা পারিশ্রমিকে তা পরিচালনা করেন। তবে এই তথ্য যে ভারত সরকারের আয়ত্তের পরিধিতেই আছে তা তর্কাতীত। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর কাছে কোভিডের প্রথম নথিভুক্ত ঘটনার থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রতিটি সংক্রমণের মূল্যবান তথ্য সংরক্ষিত আছে। সুসম্বদ্ধ বিশ্লেষণের জন্য এই তথ্য কখনোই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় নি।         

দ্বিতীয় ঢেউ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছনোর আগেই, এর ব্যাখ্যা এবং কার ঘাড়ে দোষ চাপানো যায় তার খোঁজ শুরু হয়ে যায়। সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। এই ব্যর্থতার উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কোন এক দুর্বোধ্য কারণে, সরকার নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় দরপত্রের আবেদন গ্রহণ করতে দেরী করে। আলোচনার একটি বিষয় ছিল, সংক্রমণের ঘটনা যখন দ্রুতহারে বেড়ে চলেছে সেই সময় বড় বড় ধর্মীয় জমায়েত এবং রাজনৈতিক সমাবেশের অনুমোদন করা সরকারের উচিত ছিল কিনা। আরেকটি প্রসঙ্গ ছিল ভারতীয় বৈজ্ঞানিকরা সরকারকে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ-এর বিষয়ে সাবধান করে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।    

এপ্রিলের ২৯ তারিখ, তিনশর বেশি ভারতীয় বৈজ্ঞানিক একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লেখেন। এই চিঠিতে বলা হয় যে, বৈজ্ঞানিকদের “অতিমারীর শুরু থেকে আইসিএমআর যে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করেছে তা ব্যবহারের অধিকার নেই”। এছাড়াও “আইসিএমআরের তথ্যভাণ্ডার সরকারের বাইরের, এমনকি সরকারের মধ্যেই অনেকের কাছে অধিগম্য নয়”। চিঠিতে আরো বলা হয় যে, “ডিএসটি এবং নীতি আয়োগ ভারতের অতিমারী পূর্বাভাসের নতুন মডেল তৈরি করতে যে বৈজ্ঞানিকদের নিযুক্ত করেছেন তাঁরা সহ অধিকাংশ বৈজ্ঞানিকের কাছেই এই তথ্যভাণ্ডার সুলভ নয়”।  

জিনোম-নজরদারি থেকে পাওয়া তথ্য ও কোভিডের পরীক্ষা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যগুলিকে সময়মত জনসমক্ষে আনা এবং সেগুলিকে সহজলভ্য করার কথাও ওই চিঠিটিতে বলা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের যে চিকিৎসা চলছে তার ফলাফল এবং টিকা নেওয়ার পরে ভারতীয়দের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে প্রতিক্রিয়া করছে সে বিষয়ে আরো তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলিকে সুলভ করার কথাও চিঠিতে লেখা হয়।   

এই ধরনের খোলা আবেদন একেবারেই বিরল, বিশেষত এই বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রায় প্রত্যকেই সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। নেচার পত্রিকা যেমন উল্লেখ করে যে, সাক্ষরকারীরা নিজেদের চিহ্নিত করে একটা বড় ঝুঁকি নিয়েছেনঃ অতীতে গবেষকরা সরকারের কোন নীতি বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করলে তা মোদী সরকার খুব ভালো চোখে দেখেন নি”।   

এই চিঠির কিছু পরেই সরকারের মুখ্য বিজ্ঞানবিষয়ক পরামর্শদাতা বা প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইসার (পিএসএ), প্রোফ. কে. বিজয় রাঘবণ চিঠির বক্তব্য স্বীকার করেন এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বন্টনের বিষয়ে সরকারের সদর্থক পদক্ষেপের ইঙ্গিত করেন। আগ্রহী বৈজ্ঞানিকরা যাতে সংগৃহীত তথ্য নিজেদের গবেষণার প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন, তার জন্য তাঁর কার্যালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় যাতে নির্দিষ্ট সরকারি সংস্থার নামের পাশাপাশি যোগাযোগের উপায়ের তালিকা দেওয়া হয়।    

তবে, এই তথ্য কতদিন পর্যন্ত পাওয়া যাবে তার কোন সময়সীমা প্রোফ. রাঘবণ উল্লেখ করেন নি এবং যদি কোন নির্দিষ্ট সংস্থা একটি যুক্তিসম্মত আবেদন অগ্রাহ্য করে তাহলে কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে সে বিষয়েও ওই সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয় নি। এছাড়াও, আরেকটি মূল সমস্যা নিয়ে কোন আলোচনাই হয় নিঃ তা হল, জনস্বার্থে এই তথ্যগুলিকে সহজলভ্য করার পদক্ষেপ না নিয়ে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে, বৈজ্ঞানিকদের কোন তথ্য পেতে “আবেদন” জানাতে হবে এবং এই অনুরোধগুলি “মঞ্জুর” করা হবে।

ভারতীয় সাংবাদিক এস. রুক্মিণী যিনি তথ্য নিয়েই কাজ করেন তাঁর মতে, “[ভারতে] যদি কেউ কোন তথ্য চান তবে তাঁকে তথ্যের অধিকার আইন বা আরটিআই-এর সহায়তা নিতেই হবে এমন একটি মনোভাব আছে।। এর ঠিক উল্টোটাই হওয়া উচিত। আবেদননিবেদন ছাড়াই আমাদের তথ্য সরবরাহ করা হক। তথ্যের সহজলভ্যতা যে নাগরিক অধিকার এবং না পাওয়াই যে সেই অধিকার লঙ্ঘন সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার কোন সংস্কৃতি আমরা তৈরি করে উঠতে পারি নি”।  একই ভাবে, স্বাস্থ্যবিষয়ক সাংবাদিক মৈত্রী পোরেচা সম্প্রতি বলেছেন, “আইসিএমআর ও আইএনএসএসিওজি-র মত সংস্থাগুলির প্রত্যাশা যে বৈজ্ঞানিকরা তাঁদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার জন্য লেখালিখি করে যাবেন। কিন্তু কি তথ্য সংরক্ষিত আছে তা না জানলে বৈজ্ঞানিকরা ঠিক কোন তথ্য চাইবেন তা জানতে পারবেন না”। 

আইসিএমআর-এ রক্ষিত সংক্রমণ পরীক্ষার তথ্যগুলিকে ধরা যাক। যদি কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে, কোভিড পরীক্ষা যদি অনেক দিন বাদে বাদে হয় এবং তার ফলাফল ধারাবাহিকভাবে পজিটিভ আসে, তবে তার কারণ হতে পারে পুনঃসংক্রমণ। এই জাতীয় তথ্য সাবধানে বিশ্লেষণ করলে কোভিডের পুনঃসংক্রমণের সম্ভাবনা বোঝা যাবে। কোভিড-19 এমন একটি রোগের পরিণত হয়েছে যা একটি বিশেষ অঞ্চলে বা জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায় তা বোঝার জন্য পুনঃসংক্রমণের সংখ্যাটি জানা প্রয়োজন। টিকা নেওয়া আছে এমন একজনের করোনা পরীক্ষার পজিটিভ ফলাফলের মধ্যে তুলনা করলে তা থেকে ওই ব্যক্তির টিকাকরণের পর আবার সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বোঝা যাবে (যাকে “টিকার ব্রেকথ্রু ঘটনা” বলা হচ্ছে)। সংক্রমণ প্রথম ও দ্বিতীয় টিকার মাঝে ঘটেছে না দ্বিতীয় টিকার পরে (সঠিকভাবে পরিসংখ্যানের সমন্বয় করে) তা বিবেচনা করে রোগ প্রতিরোধে টিকার একটি ডোজের তুলনামূলক কার্যকারিতা বোঝা যেত। 

টিকার ব্রেকথ্রু ঘটার পরে সংক্রমণ হলে সেই সময়ের রোগলক্ষণ পরীক্ষা করলে, কোভিডের তীব্রতা কমাতে টিকা ঠিক কতটা সাহায্য করবে তা বোঝা যাবে। নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের জিনোমিক সিকুয়েন্সিঙের সঙ্গে পরীক্ষা ও টিকার তথ্য একত্র করে এই রোগের পরিবর্তিত রূপ বা ভ্যারিয়েন্টের সম্ভাব্য আবির্ভাব, স্থানীয়ভাবে পরীক্ষার পজিটিভ ফলাফলের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং টিকার ব্রেকথ্রু ঘটনা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে অনুসন্ধান করা যাবে। 

এইরকম সুবিশাল তথ্যভাণ্ডার হাতে থাকলে তবেই দুটি ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান বদলানর প্রভাব কি হতে পারে জাতীয় আরো স্পর্শকাতর প্রশ্ন করা যেতে পারে। এবং তা, টিকার দুই ডোজের মধ্যের সময়সীমা নিয়ে সরকারি নীতি বদলে হওয়ার ঘটনাটি ব্যবহার করার সুবিধা পেত। এগুলি ডেটা বিশ্লেষণের সহজ প্রশ্ন। খুব ছোট আকারে হলেও, এই প্রশ্নের মধ্যে কয়েকটির উত্তর পাওয়া যায়। একটি হাসপাতাল বা বড় সংস্থার কর্মীদের নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় ও সেগুলি মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে, এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীগোষ্ঠীর গঠন আর আকারের কারণে এই ধরনের সমীক্ষা অনেক সময়ই সীমিত হয়ে পড়ে।  

উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সিএসআইআরের কর্মীগোষ্ঠী নিয়ে ভালোভাবে সমীক্ষা হয়েছে। সাধারণ জনতার মধ্যে থেকে এলোমেলোভাবে যে নমুনার সংগ্রহ তৈরি করা হয়েছে তার থেকে এই কর্মীগোষ্ঠী অনেক বেশি নাগরিক ও শিক্ষিত। এর বিপরীতে, আইএমসিআর ও তার সহযোগী সংস্থাগুলি যে তথ্য সংগ্রহ করেছে তার ব্যাপকতা তুলনাহীন। ভারতের সমস্ত প্রান্তের, সমাজের প্রতিটি অংশের, সমস্ত রকম আয়ের স্তর থেকে, সমস্ত সম্ভাব্য পূর্ব-বিদ্যমান অবস্থার কথা মাথায় রেখে তবেই এই সংস্থাগুলি তথ্য সংগ্রহ করেছে।      

তবে এমন অনেক রন্ধ্র আছে যা সরকারে যাঁরা বসে আছেন এবং জনগপণের তথ্যের অধিকারকে সীমিত করতে চাইছেন তাঁদের সাহায্য করে। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা সুনিশ্চিত করার বিষয়টি সেরকমই একটি ছিদ্র। যদি বহিরাগতদের হাতে যেকোন তথ্য জানার ক্ষমতা থাকে তাহলে গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে দাবি করা হয়। এছাড়াও বলা হয় যে সরকারি ব্যবস্থার মধ্যেই এমন দক্ষ ব্যক্তি আছেন যাঁরা বাইরের কোন রকম সহায়তা ছাড়াই তথ্য বিশ্লেষণের কাজে যথেষ্ট পটু। কিছু তথ্যের ক্ষেত্রে আবার জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। 

এই দাবিগুলি অত্যন্ত দুর্বল। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার সঙ্গে কোন রকম আপস না করেই অন্যান্য তথ্য বের করে আনার ব্যবস্থা করাই আধুনিক কম্প্যুটার সায়েন্স ও ডেটা সায়েন্সের যে অংশটি তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে কাজ করে তার কেন্দ্রে রয়েছে। সরকারি ক্ষেত্রে তথ্য বিশ্লেষণের দক্ষ ব্যক্তি থাকা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু, আইসিএমআর-এর কোন বিশ্লেষক এখনো পর্যন্ত সামনে আসেন নি এবং তার ফলে, তাঁর ক্ষমতা ও দক্ষতার মূল্যায়নও সম্ভব হয় নি। 

হতে পারে, তথ্যগুলিকে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে নথিবদ্ধ করার কারণে সেগুলি নিজেরাই ত্রুটিপূর্ণ এবং ফলতঃ, অকেজো। এই সম্ভাবনাটি যুক্তিযুক্ত কারণ, দ্বিতীয় ঢেউ-এর চূড়ান্ত মুহুর্তে গবেষণাগারগুলিকে বিশাল সংখ্যায় পরীক্ষা করার চাপ দেওয়া হয়। তবে, তথ্যের গুণমান বিচার করা তখনই সম্ভব যখন তা পরীক্ষা করার জন্য হাতের নাগালে পাওয়া যাবে। এবং ভুলে ভরা তথ্য থেকেও অন্তত কিছু দরকারি জিনিস বের করার জন্য সুচিন্তিত উপায় আছে। 

সর্বশেষ সমস্যাটি হল, ভারতের কোভিড-19 সংক্রান্ত তথ্যের মালিকানা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছড়িয়ে আছে। রোগপরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে আইসিএমআরে। জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)-র দায়িত্ব রোগের প্রাদুর্ভাবের নিরীক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া দেওয়া, স্বাস্থ্যমন্ত্রক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য একত্র করে এবং কোউইন ওয়েবসাইটে আছে টিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য। জিনমিক সিকুয়েন্সিঙের কাজ করে ইন্ডিয়ান সারস-কোভ-2 জিনোমিক কনসর্টিয়া (আইএনএসএসিওজি) ।

এর ফলে, যে গবেষণার জন্য বিভিন্ন তথ্যভাণ্ডার প্রয়োজন তার জন্য তথ্য সরবরাহ করার আগে এতগুলি সংস্থাকে আগে সহযোগিতা করার জন্য ঐক্যমত হতে হবে।  যেহেতু তাদের নিজস্ব সংগ্রহের তথ্য সরবরাহ করার জন্য প্রতিটি সংস্থাকে আলাদাভাবে রাজি হতে হবে, সেহেতু পিএসএ যে পন্থাটি নির্দেশ করেছে তা এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই আছে।

সংক্রমণের সংখ্যার দিকে এতগুলি চোখ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে এবং এই সংখ্যাকে বিশ্লেষণের জন্য অসংখ্য বৈজ্ঞানিক, রাশিবিজ্ঞানী, মহামারীবিশেষজ্ঞ, তথ্য বিজ্ঞানী এবং মডেলারদের দক্ষতাকে একত্র করা প্রয়োজন। তাহলে হয়ত সংক্রমণের ঘটনা মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ার আগেই, নতুন ঢেউ-এর পূর্বাভাস দেয় এমন অস্বাভাবিক নকশাকে চিহ্নিত করা যাবে। রোগের প্রকোপ বাড়ার আগেই তার ইঙ্গিত বোঝার জন্য এই ধরনের তথ্যকে সঙ্গে সঙ্গে কিভাবে পরীক্ষা করা যায়, সেই প্রশ্নটিই ভবিষ্যতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। 

অতিমারী কোন সীমানা মানে না এবং এমনকি, দ্বীপের মত দেশগুলিও চিরকালের জন্য নিজেদের বাকি পৃথিবী থেকে আলাদা করে রাখার ঝুঁকি নিতে পারে না। অর্থনীতিকেন্দ্রিক কাজকর্ম আবার আরম্ভ করার অনুমতি দেওয়ার পরেও পৃথিবী জুড়ে যাতে সংক্রমণের সংখ্যা কমে সেই ব্যবস্থা করাই এখন আশু প্রয়োজন। এর ফলে নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাবের সুযোগ যতটা সম্ভব কমবে। 

যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রথম ভারতে দেখা গিয়েছিল তা এখন সারা পৃথিবীতে নব্বইটির বেশি দেশে ছড়িয়ে গেছে। এ বিষয়ে ভারত যে পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করেছে তার উপর ভিত্তি করেই ডেল্টা সহ অন্যান্য উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে লড়াই করার জন্য টিকার ক্ষমতা নিয়ে বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করতে পারে। যাঁরা এই তথ্যগুলিকে নতুন নতুন রাস্তায় পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখতে পারবেন তাঁদের কাছে এই সুবিশাল তথ্যভাণ্ডারকে আরো সহজলভ্য করে দিলে তবেই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য দেশকে প্রস্তুত করার দিকে ভারত প্রথম পদক্ষেপ নিতে পারবে।

গৌতম আই. মেনন

Author

গৌতম আই. মেনন সোনিপতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেন্নাই-এর ইনস্টিট্যুট অফ ম্যাথেমেটিক্যাল সায়েন্সেজের অধ্যাপক।

gautam.menon@ashoka.edu.in-এর মাধ্যমে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা যাবে।   

(Bangla Translation by Sritama Halder)
অনুবাদঃ শ্রীতমা হালদার