মানুষের ক্ষমতা ও অসংখ্য শিল্পের উন্নতির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) ব্যবহারের সম্ভাবনা সুবিশাল। এআই-এর সাহায্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনের কাজকে অনেক উন্নত করা যায় বলে দাবী করা হয়। তবে, যদি কিছু ক্ষমতাশালী সংগঠন বা যে সব দেশে ওই সংগঠনগুলি অবস্থিত, সেগুলির হাতেই এআই পদ্ধতির বনিয়াদ নির্মাণের মূল সূত্রগুলি কুক্ষিগত থাকে তবে এই সম্ভাবনার সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার নাও হতে পারে।
ভারতে এআই প্রক্রিয়াকে গ্রহণের উপর গুরুত্ব দেওয়ার কারণ একেবারে আলাদা হতে পারে। বিজয় কেলকার ও অজয় শাহের মতে, শুল্ক ইত্যাদির মত যে সমস্ত প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সর্বাধিক কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে, সেগুলির সঙ্গে উচ্চহারের আর্থিক লেনদেন, বিচক্ষণতা, ব্যক্তির জন্য অনেক বেশি ঝুঁকি ও কিছুটা গোপনীয়তা বজায় রাখার মত বিষয়গুলি জড়িত। লেনদেনের পরিমাণ ও বিচক্ষণ পদক্ষেপের মত কয়েকটি ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সমস্যার জটিলতা কমানর জন্য এআই-এর সাহায্য কার্যকর হতে পারে। এর ফলে, রাষ্ট্রীয় সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা যায়, এবং উন্নততর প্রশাসন এবং জনকল্যাণমূলক পরিষেবার বিতরণ সম্ভব হয়। অন্যদিকে, ভারতের শ্রমশক্তির একটা বড় অংশ জীবিকানির্বাহের জন্য স্বল্প দক্ষতার প্রয়োজন এমন কাজের উপর নির্ভর করেন, এবং এআই ব্যাপক ব্যবহার এই ধরনের কাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, ভারতের ক্ষেত্রে এআই ব্যবহারের সুযোগ ও সমস্যা অন্যান্য উন্নত দেশগুলির থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন।
প্রযুক্তি এবং ভূ-রাজনীতি আরও বেশি করে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপুর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তিকে অনেক দেশই চিহ্নিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউনাইটেড কিংডম, ইওরোপীয়ান ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের মত দেশের এই মর্মে ঘোষিত বিবৃতিগুলিতে এআই-কে যুক্ত করা হয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলি শুধু মনোযোগের কেন্দ্রই নয়, তার পাশাপাশি কৌশলগত আগ্রহেরও বিষয়। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্মাণকারীরা জটিল প্রযুক্তির জন্য “উঁচু পাঁচিলে ঘেরা ছোট প্রাঙ্গণ”-এর ধারনাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছেন এবং তাঁদের লক্ষ্য হল বুনিয়াদি প্রযুক্তির বাধাসংকুল অংশগুলিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা। অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের থেকে অনেক বেশি আধুনিক প্রজন্মের জটিল প্রযুক্তি ব্যবহার করার থাকার দীর্ঘকালীন পন্থার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ এখন “প্রতিযোগিতায় যতটা সম্ভব এগিয়ে থাকা”।
এই বিষয়গুলিকে বিবেচনা করলে বোঝা যাবে যে, নিজের জাতীয় স্বার্থের কথা ভেবে, গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কৌশলগত স্বশাসন বজায় রাখার জন্য ভারতকে নানা পন্থা বের করতে হবে।
ইনপুট
এআই পদ্ধতির নির্মাণের জন্য ডেটা, কমপিউটেশান, মডেল এবং অ্যাপ্লিকেশানের মত বিভিন্ন ইনপুটের প্রয়োজন। এই ইনপুটগুলিকে স্তর হিসেবে কল্পনা করলে দেখা যাবে যে, মডেলের জন্য প্রয়োজন ডেটা ও কম্পিউটেশান এবং মডেল সাহায্য করে অ্যাপ্লিকেশানকে।

নকশা ১: এআই সরবরাহ শৃঙ্খলের বিভিন্ন উপাদান
যে সংগঠনগুলি এআই মডেল বা অ্যাপ্লিকেশান তৈরি করে, তারা এই প্রতিটি স্তরেই এন্ট্রি ব্যারিয়ার (উৎপাদন বা বিক্রয়ের অবস্থা নির্বিশেষে, একটি নির্দিষ্ট বাজারে প্রথম প্রবেশের সময় কোনও নতুন সংস্থা বাধ্যতামূলকভাবে যে অন্তরায় বা বাধার সম্মুখীন হয়) উল্লম্ব সংযুক্তিকরণ বা ভার্টিক্যাল ইন্টিগ্রেশানের (একটি ব্যবসায়িক কৌশল, যার মাধ্যমে একটি সংস্থা একটি সরবরাহ শৃঙ্খলের দুই বা ততোধিক মুখ্য স্তরের দখল নেয়) মাধ্যমে একটি সংগঠন একাধিক স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করছে, এমন ঘটনা অসাধারণ কিছু নয়। গুগল যেমন সরবরাহ শৃঙ্খল জুড়ে বহুস্তরীয় সংযুক্তিকরণের একটি চমৎকার উদাহরণ। মালিকানাধীন ডেটা সহ সুপ্রচুর ডেটা ব্যবহার করে গুগল নিজস্ব এআই মডেল তৈরি ও উন্নয়ন করে। এবং তাছাড়াও, এই সংগঠন ক্লাউড পরিষেবা সরবরাহ করে এবং ওয়েব ও অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের কাজে আসে এমন বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশানে তারা নিজস্ব এআই পদ্ধতিকে যুক্ত করেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত যদি সম্পূর্ণ স্থানীয় সংগঠনের সঙ্গে একযোগে এমন একটি সমৃদ্ধিশালী দেশীয় শিল্প গড়ে তুলতে চায় যা বিশ্বের বিপুলাকায় সংগঠনদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে পারেবে, তবে যাতে সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতিটি অংশে তার প্রবেশের পথ বাধাহীন হয়, তা এআই পরিচালককে নিশ্চিত করতে হবে। সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতিটি স্তরের জন্য বেশ কিছু প্রাথমিক বিবেচনার প্রয়োজন।
ডেটা
বড় আকারের, নানা ধরনের এবং উচ্চমানের ডেটা সেটের সাহায্যে যে মডেলগুলি প্রশিক্ষিত, সেগুলি অনেক ভাল কাজ করে। নানা সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বই, অ্যাকাডেমিক রচনা আর উইকিপিডিয়ার মত সূত্র থেকে পাওয়া উচ্চমানের ডেটা ২০২৭ সাল নাগাদ নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য মালিকানাধীন ডেটার ব্যবহার সুবিশাল পার্থক্য তৈরি করে। গিটহাবে কোডের ব্যাপক সংগ্রহ, অন্তর্জাল থেকে সার্চ ইঞ্জিনগুলির দ্বারা সংগৃহীত ও শ্রেণীবদ্ধকৃত ওয়েব ইনডেক্স, বা জুমের মত ভিডিও কনফারেন্স অ্যাপ্লিকেশানে করা অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিং-এর থেকে পাওয়া ডেটাও এর সঙ্গে যুক্ত।
নেটওয়ার্ক এফেক্টসের (অর্থাৎ, যত বেশি সংখ্যক ভোক্তা একটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হন, ইতিমধ্যেই এই প্ল্যাটফর্মের অংশ যাঁরা, সেই ব্যবহারকারী সহ সমস্ত ভোক্তার জন্যই পণ্যের মূল্যের বেড়ে যায়) কারণে একটি বা দুটি বড় আয়তনের টেক প্ল্যাটফর্মই বাজার দখল করে রাখে। সার্চ ইঞ্জিন ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ী ভাড়া করা এবং খাবার ডেলিভারি পরিষেবা পর্যন্ত ,বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মেই এই রকম বাজারের দৃঢ়ীকরণের প্রমাণ পাওয়া যায়। মালিকানাধীন ডেটা ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীর চাহিদার পরিমাপ করা যায় ও সে বিষয়ে ধারণা করা যায় এবং এইভাবে পাওয়া তথ্য এই বড় টেক প্ল্যাটফর্মগুলিকে নতুন, নতুন উদ্ভাবনের কাজে সাহায্য করে। এআই অ্যাপ্লিকেশানের উন্নয়নের সময় যদি উন্নয়নকারী সংস্থা মালিকানাধীন ডেটা ব্যবহারের সুযোগ পায়, তবে ওই সংস্থাটি অন্যান্যদের থেকে বেশি প্রাধান্য পায়। এছাড়াও, এই সুযোগের সাহায্যে তারা তাদের ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতির সঙ্গে এআই অ্যাপ্লিকেশানকে সংযুক্ত করতে পারে এবং তার ফলে তাদের বাজারকেন্দ্রিক ক্ষমতা দৃঢ়তর হয়।
গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, এআই ব্যবহারে ন্যায়পরায়ণতা সংক্রান্ত সমস্যাও দেখা যায়। এআই প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ডেটায় রোগ নির্ণয়, লিঙ্গভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ, অপরাধ প্রবণতার পূর্বাভাষ সহ নানা ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। এর ফলে, সংখ্যালঘু, মহিলা, বয়স্ক মানুষ ও দুর্বল জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে যে কাজকর্মগুলি হয় সেখানে ভুলের হার অনেক বেশি এবং ফলাফল পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে।
ভারতের অবিশ্বাস্য বৈচিত্রের কথা মাথায় রেখে, সরকারের পক্ষ থেকে এমন একটি ডেটাসেট তৈরি করা যেতে পারে যে দেশের সমস্ত নাগরিকের পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করবে। গবেষণা ও বাণিজ্যিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই ধরনের ডেটাসেটের গুরুত্বপূর্ণ পজিটিভ এক্সটার্নালিটি বা ইতিবাচক বাহ্যিকতা থাকতে পারে। ভাষিণী যেমন ভারত সরকারের এমন একটি উদ্যোগ, যা ভারতীয় ভাষার বৈচিত্রতাকে তুলে ধরে এবং এখানে বাস্তব সময়ে অনুবাদের জন্য নানা ওপেন-সোর্স ডেটাবেস এবং উপায় সহজলভ্য।
কম্পিউটেশান
এআই প্রশিক্ষণ এবং তার ব্যবহার সাধারণত কম্পিউটেশানাল পরিকাঠামোর জন্য ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবার উপর নির্ভর করে। ডেভেলপার এবং ব্যবহারকারী, দুই পক্ষই নিজস্ব হার্ডওয়্যারের বদলে এই পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এই শিল্পের আরও ব্যাপক বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে নিজের স্থান দৃঢ়তর করার উদ্দেশ্যে এআই সংক্রান্ত গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার্স (সিএসপিএস) অনেক সময়ই যথেষ্ট ছাড় দিয়ে থাকে।
এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, এই মডেলটি উদ্বেগের কারণও বটে। ইকোনমিজ অফ স্কেল (কোনও সংস্থার উৎপাদন যখন দক্ষতার সঙ্গে ঘটতে শুরু করে, তখন যে কস্ট অ্যাডভ্যান্টেজ বা ব্যয় সুবিধা অর্থাৎ প্রতিযোগী সংস্থা থেকে কম মূল্যে পণ্য উৎপাদনের ক্ষমতা তৈরি হয়)-এর কারণের অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস, মাইক্রোসফট অ্যাজিওর এবং গুগল ক্লাউড বাজারে আধিপত্য করে এবং একত্রে সারা বিশ্বের শেয়ারের ৬৫ শতাংশ বর্তমানে এই তিনটির সংস্থার হাতেই রয়েছে। যদিও বাজারের এই কেন্দ্রীভূতকরণ উদ্বেগের কারণ নয়, মুখ্য সিএসপিগুলি উন্নয়ন হচ্ছে এমন মডেল এবং অ্যাপ্লিকেশান সহ এআই সরবরাহ শৃঙ্খলের অন্যান্য স্তরেও প্রতিযোগিতা শুরু করে। ক্লাউড কমপিউটিং পরিষেবার সঙ্গে উল্লম্ব সংযুক্তিকরণ যাতে সরবরাহ শৃঙ্খলের অন্য অংশের প্রতিযোগিতায় বাধা না দেয়, তা নিশ্চিত করা জরুরী। নিষেধাত্মক চুক্তি, একটি পরিষেবা ছেড়ে আরেকটিতে যুক্ত হওয়ার উচ্চমূল্য বা অনৈতিক মূল্য নির্ধারণের কৌশলের মত প্রতিযোগিতা-বিরোধী পদক্ষেপের বিষয়ে ভারত সহ অন্যান্য দেশের প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রকদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
এর আগে থেকেই, এনভিআইডিআইএ, একটি চিপ নির্মাণকারী কোম্পানি, জিপিইউ, অর্থাৎ এআই সম্পর্কিত কাজের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় সেমি-কন্ডাক্টার চিপের বাজারের নব্বই শতাংশের বেশি শেয়ার অধিকার করে রেখেছে। বাজারে এনভিআইডিআইএ-র এই আধিপত্যের কারণ, এই সংস্থা বাজারে অনেক আগেই ঢুকে পড়েছে এবং এর আয়ত্তাধীন কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম সিইউডিএকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এই সুতীব্র প্রতিযোগিতা থেকে দীর্ঘমেয়াদী বিকল্প তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, এটি একটি ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে থেকে গেছে, এবং এই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।
মডেল
বেন অ্যান্ড কোম্পানির একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, এআই সংক্রান্ত জ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে ভারত নেতৃস্থানীয়। সারা বিশ্বের এআই-কেন্দ্রিক কাজে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের মধ্যে ১৬ শতাংশই ভারতে বাস করেন এবং তাই এই বিষয়ে বিশ্বের প্রথম তিনটি দেশের মধ্যে একটি। কিন্তু, ভারতে যার অভাব দেখা যায় তা হল মেধা সম্পদ নির্মাণে বা এআই অ্যালগোরিদমের নকশা তৈরি ও তার প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িত, এমন উচ্চতম স্তরের এআই গবেষক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত চিন্তাকেন্দ্র বা থিঙ্কট্যাঙ্ক মার্কোপোলো ইঙ্গিত দেয় যে, ভারতের এআই গবেষকদের মধ্যে ৮০ শতাংশই বিদেশে চলে যান।
এই ধরনের প্রবণতা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বিশেষায়িত দক্ষতার অভাব ও ডেটা ও কম্পিউটেশান স্তরে বিভিন্ন বাধার কারণে, ভারতীয় মেধার উপরেই গভীরভাবে নির্ভরশীল ভারতীয় সংস্থাগুলি বিশ্বমানের মডেল তৈরির পথে নানা সমস্যার মুখোমুখি হবে। তবে, এই এআই মডেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি অ্যাপ্লিকেশানের উন্নয়নের মত অন্যান্য কাজ, যেখানে ইঞ্জিনীয়ারিং-এর দক্ষতা লাগে, সেই রকম কাজ সংক্রান্ত প্রতিযোগিতায় ভারত সফলভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
এর সঙ্গে সঙ্গে, অতি-উন্নত এআই মডেলের বিকাশের জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণের ডেটা, কম্পিউটিং-এর ক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা। অ্যাকাডেমিকস নয়, বরং একটি শিল্পই পারে এই সম্পদগুলিকে ভালভাবে কাজে লাগাতে। স্ট্যান্ডফোর্ড এআই ইনডেক্স রিপোর্টে এই প্রবণতাটির উপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং এই রিপোর্টটিতে দেখান হয় যে ২০২২ সালে শিল্পকেন্দ্রিক সংগঠনের দ্বারা বত্রিশটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মেশিন লার্নিং মডেল নির্মিত হয়েছে এবং তার বিপরীতে, অ্যাকাডেমিয়া থেকে মাত্র তিনটি অনুরূপ মডেলের উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। সুতরাং, এআই-কেন্দ্রিক সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করার সময়, শিল্প ও অ্যাকাডেমিয়া, দুই দিককেই উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে মুখ্য অবদানকারী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
প্রয়োগ
অবশেষে, এআই ইকোসিস্টেমের অন্যান্য স্তরের প্রশ্নগুলিকে সম্বোধন করলে, তা প্রয়োগের স্তরে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারের সম্ভাবনা তৈরি করবে। তবে, এআই প্রক্রিয়াগুলি যে দায়িত্বের সঙ্গে নির্মিত তা সুনিশ্চিত করার জন্য, এর সঙ্গে জড়িত বিপদগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি কাঠামো তৈরি করা খুবই প্রয়োজন। ইউএস’স ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি যেমন একটি কাঠামো তৈরি করেছে, তেমন কোনও কিছুর সঙ্গে সংযুক্ত হলে, তা ওই প্রক্রিয়া বিকাশের সম্পূর্ণ সময়টি ধরে সম্ভাব্য বিপদের পদ্ধতিগতভাবে মূল্যায়ন ও সমাধান করতে সাহায্য করবে।
এই সময়, যখন এআই-কে বোঝার ও পরিচালনা করার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে সারা বিশ্ব জুড়ে, ভারতকে তখন প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও যে সুবিধাগুলি তার থাকে পাওয়া যাবে তার পরিমাপ করার জন্য, নিজের অসাধারণ পরিস্থিতি ও বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক আবহাওয়াকে বিবেচনা করতে হবে। এই প্রবন্ধ ও যে সুদীর্ঘ আলোচনামূলক নথিটির উপর ভিত্তি করে তা লেখা হয়েছে, দুটিই এই পরিচালনার উপর জাতীয় স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিত থেকে মনোযোগ দেয় এবং এআই সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রত্যেকটি স্তরের প্রাথমিক উদ্বেগগুলিকে সামনে তুলে ধরে। এই উদ্বেগগুলিকে চিহ্নিত করা জরুরী, কারণ সেই পদক্ষেপ প্রতিটি স্তরের জন্য নির্দিষ্টভাবে তৈরি উদ্দিষ্ট নীতির নির্দিষ্ট রূপদানের বনিয়াদ তৈরি করে।