ভারত-চিন সীমান্তঃ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি প্রধান বিবাদকেন্দ্র

09/10/2023
IiT English Page

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের বিপদ নিয়ে যে আলোচনা চলে, তাতে একটি অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে তাইওয়ান নিয়ে সম্ভাব্য বিবাদের বিষয়টি আধিপত্য করে। রস ববেজের লেখা দ্য নেক্স মেজর ওয়ার বইটি চিহ্নিত করে যে, চিনের দিক থেকে আক্রমণের একটি ছোট স্ফুলিঙ্গই গোটা অঞ্চলকে গ্রাস করার জন্য যথেষ্ট। অন্যান্য বিশ্লেষকরা ইন্দো-প্যাসিফিকের শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কেন্দ্র হিসেবে মূলত তাইওয়ান, দক্ষিণ চিন সাগর, পূর্ব চিন সাগর এবং কোরিয়ান উপদ্বীপ, যাদের ব্রেন্ডান টেলার এশিয়ার “চারটি ফ্ল্যাশপয়েন্ট বা বিবাদকেন্দ্র” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, সেগুলির স্থিতিশীলতা বিষয়ক প্রশ্নটিকে শনাক্ত করেছেন। তাঁদের মতে এই জায়গাগুলিতে হঠাৎই প্রবল সংঘাতের বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভবনা আছে। তবে, এই বিন্যাসটির ক্ষেত্রে কৌশলবিদ ও বিশ্লেষকরা যা অনেক সময়ই উপেক্ষা করে যান, তা হল বিবাদের আরেকটি উৎস হিসেবে ভারত-চিন সীমান্তের গুরুত্ব। অন্য চারটি ক্ষেত্রে যা হয় নি, তা এই সীমান্তকে কেন্দ্র করে হয়েছে, অর্থাৎ গত কয়েক বছরের মধ্যেই এখানে প্রচণ্ড সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।         

“ফ্ল্যাশপয়েন্ট” বা “বিবাদকেন্দ্র” শব্দটি অনেক সময়ই এমন একটি ভৌগলিক অঞ্চলকে বোঝায়, যেখানে অনেক কারণেই সংঘর্ষের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। কিন্তু নিরাপত্তা বিষয়ক চর্চায়, এই শব্দটির আরও বিশেষভাবে নির্দিষ্ট অর্থ আছে। ইউএস নেভাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক টিমোথি হয়ট ইঙ্গিত করেন যে, এমন কয়েকটি উপাদান আছে, যা সমস্ত ফ্ল্যাশপয়েন্টেই উপস্থিত এবং সেগুলি হল, “রাজনীতি, নিকটত্ব ও অকারণ ভয়।” প্রথমত, বিবাদকেন্দ্রগুলিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক বিবাদের পুরোভাগে থাকতে হবে; দ্বিতীয়ত, এই জায়গাগুলি যদি দুই বিপক্ষ দলেরই কাছাকাছি অবস্থিত হয়, তবে সেগুলি অনেক বেশি উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠতে পারে; তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে যেগুলি অনেক বেশি শক্তিশালী সেগুলিকে আহ্বান করবে, এবং তার ফলে বৃহত্তর যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে হুমকি দিতে পারে।     

এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, ফ্ল্যাশপয়েন্ট হয়ে ওঠার প্রতিটি নির্ণায়কই ভারত-চিন সীমান্ত অঞ্চল পূরণ করে। দুই দেশের মধ্যে স্বার্বভৌমত্বের বিষয় নিয়ে আঞ্চলিক মালিকানাকেন্দ্রিক একটি দীর্ঘকালীন বিবাদ এই সীমান্তটি নিয়ে বিতর্কের সঙ্গে জড়িত; এই দুটি দেশ শুধুমাত্র পরস্পরের নিকটবর্তী নয়, এদের দুজনের ভাণ্ডারেই পারমাণবিক বোমা আছে; এবং সব শেষে, প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত অন্য আন্তর্জাতিক শক্তিকে এই বিবাদে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা দুই দেশেরই আছে। 

উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্ত
ভারত আর চিনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনা গত কয়েক বছর ধরে স্পষ্টতই আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর সব চেয়ে লক্ষণীয় বিষয়টি হল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের (এলএসি) দক্ষিণ অংশে অবস্থিত পূর্ব লাদাখ নিয়ে চলতে থাকা অচলাবস্থা, যার এখনও কোনও সমাধান হয় নি। এই অচলাবস্থা শুধুমাত্র দীর্ঘতমই নয়, ১৯৮৬-৮৭ সালের সুমদোরং চু সমস্যার পর ভারত ও চিনের মধ্যে সংঘটিত সব চেয়ে হিংসাত্মক লড়াই। ২০২০ সালের জুন মাসে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি হয়, যার ফলশ্রুতি উভয় পক্ষের অসংখ্য সেনার মৃত্যু – ভারতের পক্ষে কুড়িজন আর চিনের পক্ষে মৃতের সংখ্যা অপ্রকাশিত। তারপর, যদিও কর্পস কম্যান্ডার স্তরে উনিশবার কথোপকথন হয়, যার শেষটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাসেই সংঘটিত হয়েছে, তাহলেও এই অচলাবস্থা কাটানর ক্ষেত্রে সাফল্যের খুবই স্বল্প।   

এই কথোপকথনের ফলশ্রুতি হিসেবে কয়েকটি অঞ্চল থেকে পিছু হটে আসার ক্ষেত্রে কিছুটা সাফল্য এসেছে, যার ফলে বিতর্কিত অঞ্চলে পাঁচটি “নিরাপত্তা বলয়” বা বাফার জোন” তৈরি হয়েছে। কিন্তু, পর্যবেক্ষকরা উদ্বিগ্নভাবে লক্ষ্য করেছেন যে, ২০২০ সালে যে অঞ্চলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল সীমান্তের একমাত্র সেই বিতর্কিত অঞ্চলটিতেই একটি আপাত স্থিতাবস্থা এসেছে। ২০২০ সালের আগে যে সব অঞ্চলে খণ্ডযুদ্ধ ঘটেছিল সেগুলি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থাতেই আছে। 

পশ্চিম অংশের অচলাবস্থার পাশাপাশি, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার পূর্বদিকে অবস্থিত ভারতের অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যেও উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং বিভাগের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার বরাবর প্রবাহিত ইয়াংসের কাছে ভারত ও চিনের সামরিক বাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই অঞ্চলে নিজের দাবি শক্তিশালী করতে চিন যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তার ফলশ্রুতি হিসেবে বেইজিং বিভিন্ন পন্থা ও উপায় অবলম্বন করছেঃ কৌশলগত অঞ্চলে শিয়াও খাং “আদর্শ” গ্রাম নির্মাণ, বিভিন্ন জায়গার নাম বদলে দেওয়া এবং সীমান্তকেন্দ্রিক এমন নানা নতুন আইন চালু করা যার উদ্দেশ্য, ভারতের মতে, চিনের সামরিক বাহিনীকে আইনি আচ্ছাদন দেওয়া। যেমন, চিনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রক ২০২৩ সালে চিনের যে প্রামাণিক মানচিত্র প্রকাশ করে, তাতে সম্পূর্ণ অরুণাচল প্রদেশ এবং আক্সাই চিন অঞ্চলকে চিনের সীমান্তের অন্তর্ভুক্ত বলে দেখান হয়েছে। এই দুই অঞ্চলকেই ভারত নিজের সার্বভৌম এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে।     

ব্যাপকতর বিবাদ?
এই আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, রাজনীতি ও পারস্পরিক নৈকট্য ভারত-চিন সীমান্তকে স্পষ্টতই একটি সম্ভাব্য বিবাদকেন্দ্র হিসেবে নির্দেশ করে। এরপরেও তৃতীয় উপাদানটি বাকি থাকেঃ এই দেশের মধ্যে কোনও একটি কি ভবিষ্যতের কোনও বিবাদ কি অন্য কোনও শক্তিকে, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে, অন্তর্ভুক্ত আহ্বান করবে? 

এনএটিও-র অংশীদাররা যেমন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেমনভাবে চুক্তিনির্ভর মিত্র নয়। এর অর্থ এই দুই দেশের সীমান্তে যদি কোনও সংঘর্ষ ঘটে, তাতে ওয়াশিংটন স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে না। অথচ, চিনের দিক থেকে আসা বিপদ নিয়ে তাদের অভিন্ন মতামতের কারণে, এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই গত কয়েক বছর ধরে পরস্পরের কাছাকাছি আসছে।   

২০২০ সালে ঘটা গালওয়ান সংঘর্ষ দ্বিপাক্ষিক স্তরে সীমিত থাকলেও, পরবর্তীকালের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, সীমান্ত বরাবর চিনের সম্ভাব্য ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংঘর্ষ চলাকালীনই ভারতকে সরাসরি তথ্য সরবরাহ করছিল। ভারতও তার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে পাওয়া অস্ত্রশস্ত্র স্থাপন করেছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট একটি দ্বিদলীয় সংকল্প নেয়, যেখানে অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অঙ্গ হিসেবে পুনর্নিশ্চিত করার পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশের উপর চিনের দাবিকে তার “ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক ও সম্প্রসারণবাদী কূটনীতির” অংশ বলে স্বীকার করা হয়। ছাড়া, ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে অচলাবস্থা শুর হওয়ার সময় থেকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর যা যা ঘটে চলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পর নজর রাখছে।   উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগ বা ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স (ডিওডি)-র ২০২১ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, “টিবেট অটোনোমাস রিজিয়ন এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার পূর্ব অংশের অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের মধ্যবর্তী বিতর্কিত অঞ্চলের অভ্যন্তরে” একশটি বাড়িসহ একটি গ্রাম নির্মিত হয়েছে। ২০২২ সালের ডিওডি প্রতিবেদনটি ইঙ্গিত করেঃ “যাতে ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে না পারে, তার জন্য গণপ্রজাতান্ত্রিক চিন বা দি পিপল’স রিপাবলিক অফ চায়না সীমান্তের উত্তেজনা প্রতিরোধ করতে চায়। পিআরসি-র সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে হস্তক্ষেপ না করার জন্য পিআরসি-র কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছেন।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০২২ সালের জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল বা ন্যাশনাল ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজি খোলাখুলি ঘোষণা করে যে, “পূর্ব চিন সাগর, তাইওয়ান স্ট্রেট, দক্ষিণ চিন সাগর অ্যান্ড ভারতের মত বিতর্কিত সীমান্তের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার অন্য পিআরসি-র প্রচারের কারণে তৈরি অনির্দিষ্ট জুলুমের তীব্র রূপকে সম্বোধন করার যে প্রচেষ্টা সমস্ত মিত্র ও অংশীদারের দিক থেকে উঠে আসে” ওয়াশিংটন তাকে সমর্থন করবে। 

চিনের দিক থেকে যে ক্রমাগত হুমকি আসছে, তার মোকাবিলা করতে নতুন দিল্লি ও ওয়াশিংটন একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করেছে। এই দুই দেশ নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অংশিদারিত্বকে ক্রমশ আরও জোরাল করে তুলছে। এই জন্য এই দুই দেশই, বিশেষ করে আসন্ন বিপদের জন্য আগাম সতর্কতা জারির উপায়ের জন্য, উন্নততর প্রতিরক্ষামূলক আন্তঃকার্যক্ষমতা এবং তথ্যের আদানপ্রদানসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান নৈকট্যের প্রেক্ষিত, এবং বিশেষ করে প্রতিরক্ষাকেন্দ্রিক সম্পর্কের দিক থেকে দেখলে, চিনের দিক থেকে অস্বাচ্ছন্দ্যের বোধ আরও তীব্র হচ্ছে। ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে যেমন বলেছেন, চিন সন্দেহ করে যে, “বিভিন্ন সুবিধার পাওয়ার উদ্দেশ্যে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে বলে, এবং তার ফলে চিন বিভিন্ন শাসন ও সংযমনমূলক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য হয়ে উঠবে।” 

এছাড়াও, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “মিনিল্যাটারাল” স্তরেও পরস্পরের সহযোগিতা করে। ইন্দো-প্যাসিফিক কোয়াড, যার সদস্য হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ছাড়াও আছে জাপান ও অস্ট্রেলিয়া,  এবং অন্যান্য সম্মেলনস্থলের মাধ্যমে এই দুই দেশ চিনের বিষয়ে ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা করে চলে, যদিও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই আখ্যা দেওয়া হয় না। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সর্বদা পরিবর্তনশীল নিরাপত্তার বাতাবরণের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করে দেখলে বোঝা যায় যে, আন্তর্জাতিক স্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে কৌশলগত শত্রুতা ভারত-চিন সীমান্তবর্তী বিবাদকেন্দ্রটিকে আরও বিশিষ্ট করে তুলেছে। 

ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা
এতদিন ধরে কেন ভারত-চিন সীমারেখাকে, বিশেষ করে একটি বিবাদকেন্দ্র হিসেবে, উপেক্ষা করা হয়েছে? এ বিষয়ে একটি অনুমান হল যে, ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকাকে ব্যাপকভাবে একটি সামুদ্রিক অঞ্চল হিসেবে দেখা হয়। অন্য চারটি বিবাদকেন্দ্রও সামুদ্রিক অঞ্চল এবং তাতে অনেকগুলি দেশই অংশগ্রহণ করে থাকে। কিন্তু ভারত-চিন সীমান্ত স্থলভিত্তিক, এবং সাধারণভাবে, এই অঞ্চলকে একটি দ্বিপাক্ষিক সমস্যা বলে ধরা হয়। অন্য সম্ভাব্য কারণ হল, বহুকাল ধরেই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ভারতকে এমন একটি শক্তি হিসেবে দেখে আসছে যার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়াতে এবং যার উপস্থিতি শুধুমাত্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখাতেই সীমাবদ্ধ। ফলশ্রুতি হিসেবে, ভারতের সঙ্গে চিনের সীমান্ত বিষয়ক বিবাদ, যার কারণে ১৯৬২ সালে এই দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধও হয়, তা তুলনামূলকভাবে যৎসামান্যই আন্তর্জাতিক মনোযোগ পেয়েছে। তবে, গত কয়েক দশক ধরে এই মনোভাবে বদল আসতে দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের কারণ ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক এবং বস্তুগত গুরুত্ব, হিমালয় (২০১৭ সালে ঢোকলাম এবং ২০২২ সাল থেকে পূর্ব লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশ) ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চিনের সামরিক ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে নতুন দিল্লির সুদৃঢ় অবস্থান। এছাড়াও পাশ্চাত্যের দেশগুলি বিশ্বাস করে যে, পূর্ব এশিয়ার সামুদ্রিক বিবাদকেন্দ্রের বিষয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার উপর নির্ভর করে, তেমনই চিনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য ভারত একটি বিরাট ভূমিকা পালন করবে।   

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থেকে সশস্ত্র সহাবস্থনে বদল হওয়ার পর থেকেই, ভারত-চিন সীমান্ত অঞ্চলের অস্থিরতা আরও বেড়ে গেছে। এই কারণে আশু ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের দখলদারী সংক্রান্ত সমস্যার কোনও স্থায়ী সমাধান দেখা যাচ্ছে না। ভারত-চিন সীমান্তের অনিশ্চয়তা এবং বর্তমান অবস্থার কথা বিবেচনা করলে বোঝা যায় যে, আরেকটি আকস্মিক ঝড়ের সম্ভাবনা অত্যন্ত তীব্র। এমন ঘটনা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার পক্ষে খুবই হানিকর হবে এবং তা ভারত ও চিনকে অতিক্রম করে প্রতিটি অংশীদারী দেশকেই তুমুলভাবে প্রভাবিত করবে।

অমৃতা জস

Author

অমৃতা জস মণিপাল ইউনিভার্সিটি অফ হায়ার এডুকেশন (ইনস্টিট্যুট অফ এমিনেন্স)-এর জিওপলিটিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশানস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তাঁকে ট্যুইটারে @amritajash নামে পাওয়া যাবে। 

(Bangla Translation by Sritama Halder)
অনুবাদঃ শ্রীতমা হালদার